ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে ভারী বর্ষন, বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

প্রকাশিত: ০১:৪০, ২১ অক্টোবর ২০১৭

লক্ষ্মীপুরে ভারী বর্ষন, বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত

নিজস্ব সংবাদদাতা, লক্ষ্মীপুর ॥ নিম্নচাপের প্রভাবে বরিশাল, ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টি জেলার সাথে লক্ষ্মীপুরের মজু চৌধুরীহাট থেকে সকল প্রকার ফেরি ও লঞ্চ চলাচল দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ভারী বর্ষন, ধমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। ভারী বর্ষনের শহরের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। রামগতি-কমলনগরের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল, সদর ও রায়পুরের আংশিক এলাকা ৩ থেকে ৫ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এ সব এলাকার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। রায়পুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার পর্যন্ত ভারী বর্ষন ও থেমে ধমকা বাতাস অব্যাহত রয়েছে। কমলনগর এবং রামগতি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মেঘনার ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে। নিম্ন আয়ের মানুষরা দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মহীন হয়ে পড়েছে। একান্ত প্রয়োজন ব্যতীত মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। সাধারণ মানুষ ঘরে এক রকম বন্ধি হয়ে পড়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অপরদিকে রামগতি, কমলনগর, রায়পুর, রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এদিকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপাঞ্চল চরগজারিয়ার চরআব্দুল্যাহর ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন জানান, চরগজারিয়ার প্রায় সম্পূর্ণ চরাঞ্চল ৪ থেকে ৫ফুট জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্ষেতের সম্পূর্ণ ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রচন্ড জোয়ারের পানিতে অন্তত ১০টি ছাগল, ৫টি গরু ভেসে গেছে। চরগাজীর ইউপি চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন জানান, তার এলাকা বেঁড়ির বাইরের প্রায় চার শতাধিক পরিবারের সবগুলো কাচাঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এলাকার পূরো ফসলী মাঠ পানির নীচে তলিয়ে গেছে। চরআলগীর চেয়ারম্যান লিটন চৌধুরী জানান, রামগতির চরআলগীতে প্রায় সব ফসল জোয়ারের পানিতে ৩ থেকে ৪ ফুট ডুবে গেছে। এলাকায় প্রায় ১৫হাজার লোক পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। সেখানে বেঁড়ির বাইরে নদী ভাঙ্গা কবলিত প্রায় আট’শ পরিবারের সকলের বাড়ী ঘর ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে এবং জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। বেশ ক’টি ঘর পড়েছে। গাছ পড়ে একটি ঘরে চাপা পড়ে সুরাইয়া বেগম (৬০) নামে এক বৃদ্ধা গুরুতর আহত হয়েছে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিচ্ছে। তিনি আরো জানান, মেঘনার প্রচন্ড ভাঙ্গনে বেঁড়িবাধ ভেঙ্গে যাওয়া ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত রয়েছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, জোয়ারের পানিতে রামগতি কমলনগরের অন্তত বিশ হাজার হেক্টরের আমন ফসলী মাঠ সম্পূর্ণরূপে তলিয়ে গেছে জোয়ারের পানিতে। এ ধরণের জোয়ার গত ১০ বছরেও হয়নি বলে জানান কৃষকরা। রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ জানান, তার উপজেলায় সক ক’টি ইউনিয়ন চরগাজী, চরআলগী, চররমিজ, চরআব্দুল্যা, আলেকজান্তডার, চরগজারিয়া, বড়খেরীসহ প্রায় সব ক’টি ইউনিয়নের অধিকাংশ ফসলী মাঠ পানির নীচে নিমজ্জিত হয়েছে। ভারী বর্ষন ও ধমকা বাতাসে অন্তত পাঁচ’শ বাড়ীঘর ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। অসংখ্য গাছ উপড়ে গেছে। আহত হয়েছে অনেকে। এদের মধ্যে সুরাইয়া বেগমের অবস্থা আশংকাজনক। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রাথমি হিসেব মতে বর্ষাকালী রায়পুর এবং কমলনগরে তিন’শ হেক্টরের সয়াবিন পানির নীচে নিমজ্জিত হয়েছে। শীতকালীন সবজির বীজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে এক’শ ৬০ হেক্টর এবং আমন এক’শ ৩০ হেক্টর। তবে মাঠ পর্যায়ে জরিপ চলছে। শীঘ্রই এর সঠিক হিসেব পাওয়া যাবে।
×