ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দিনাজপুরে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমন ॥ কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে নেই

প্রকাশিত: ০০:১৪, ২১ অক্টোবর ২০১৭

দিনাজপুরে আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমন ॥ কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে নেই

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ দিনাজপুরে আমনের ক্ষেতে ব্যাপকহারে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দিনাজপুরের কৃষকরা বাড়তি খরচ করে আমন ধানের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু সেই ধানে পোকার আক্রমন দেয়া দেয়ায়, লোকসানের আশংকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এই বিপদের দিনে কৃষি কর্মকর্তারাও মাঠে নেই বলে অভিযোগ করেছেন কৃষকরা। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ সেই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর দিনাজপুর অঞ্চলের তথ্যমতে, চলতি বছরে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে ৪ লাখ ৯১ হাজার ১শ’ ৮৫ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ করা হয়েছে। তিন জেলায় আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ লাখ ৬২ হাজার ৫শ’ ৮ মেট্রিক টন চাল। কৃষকরা বলছেন, আগস্টের বন্যায় তাদের বেশিরভাগ চারা নষ্ট হয়ে যায়। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তি খরচ করে ফের চারা রোপণ করতে হয়েছে। এতে করে প্রতি হেক্টরে খরচ বেড়ে যায় প্রায় ১০ হাজার টাকা। তাদের মতে, এবারে বন্যায় মাটিতে পলি জমায় জমি উর্বর হয়েছে। তাই বাড়তি খরচ করেও তাদের মনে একটা আশা ছিল, ভালো ফলন হওয়ার। কিন্তু হঠাৎ করে আমন ক্ষেতে পোকা আক্রমণ করেছে। কীটনাশক স্প্রে করার পরও কোনও লাভ হচ্ছে না। তাই আমনের ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার ব্যাঙেরকাদো গ্রামের কৃষক আবুল কাসেম জানান,তার প্রায় সোয়া এক বিঘা জমিতে পোকা আক্রমণ করেছে। কীটনাশক স্প্রে করেও এই পোকা দমন করা যাচ্ছে না। কৃষি কর্মকর্তাদেরও মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তিনি শঙ্কায় আছেন যদি ফলন ভালো না হয়, তাহলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে তাকে। একই গ্রামের কৃষক আবু ইসলাম জানান, বন্যার পর আবারও ধান চাষ করেছিলেন। ধান বের হওয়ার আগেই দেখা দিয়েছে পোকা। এই পোকা গাছের পাতা খেয়ে বিবর্ণ করে ফেলছে। মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না কৃষি অফিসের কোনও পরামর্শদাতাকে। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই সার বিক্রেতার পরামর্শ অনুযায়ী কীটনাশক স্প্রে করছেন। কিন্তু কোনও কাজ হচ্ছে না। ধান না হলে কিভাবে সংসার চালাবেন আর বাচ্চাদের পড়ালেখার খরচ জোগাবেন সেই চিন্তায় আছেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, কিছু কিছু আমন ক্ষেতে পাতা মোড়ানো পোকা এবং ব্লাইট ও ব্লাস্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিয়েছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। দিনাজপুর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, বিভিন্ন জেলায় পোকার আক্রমণ দেখা দিলেও দিনাজপুরে পোকার আক্রমণ অনেক কম। পোকা কিংবা রোগ-বালাই আক্রমণ করতে না পারে, সে জন্য বিভিন্ন স্থানে আলোক ফাঁদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া পোকা বা রোগবালাই আক্রমণ হলে কী ধরনের কীটনাশক বা বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে, তাও বলে দেওয়া হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কৃষি ও কৃষকদের নিয়ে ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দিনাজপুর অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক ড. মাহবুবুর রহমান জানান, কিছু এলাকায় আমন ক্ষেতে ব্যাকটেরিয়া লিড ব্লাইড, বাদামি গাছ ফড়িং, পাতা মোড়ানো রোগ-বালাই দেখা দিয়েছে। আগাম জাতের ও হাইব্রিড ফসলে এসব রোগ-বালাই দেখা দিচ্ছে। তবে এসব রোগ-বালাইয়ে আক্রমণের পরিমাণ খুবই কম। তারপরও এসব রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা কাজ করছেন ও পরামর্শ প্রদান করছেন। এছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে ন্যূনতম দুইটি স্থানে কৃষকদের পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে সভা ও সমাবেশ করা হচ্ছে।
×