ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিজেদের অর্থায়নে আমন ফসল রক্ষার বাঁধ ভেসে গেল

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২১ অক্টোবর ২০১৭

নিজেদের অর্থায়নে আমন ফসল রক্ষার বাঁধ ভেসে গেল

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ দুই বিঘা জমি আবাদ করে আমন ফসল ঘরে তোলার জন্য কৃষক বেল্লাল হাওলাদার রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণে এক হাজার টাকা দিয়েছিলেন। শাহজাহান প্যাদা দিয়েছিলেন ২৫ শ’ টাকা। এভাবে আনিছুর রহমান পাঁচ শ’, হেলাল হাওলাদার এক হাজার, আলমগীর হাওলাদার দুই হাজার টাকা দিয়েছিলেন। চারিপাড়া গ্রামে বাড়ি এসব কৃষকের। এভাবে চারিপাড়া, পশুরবুনিয়া, বানাতি, ১১ নং হাওলা ও ধঞ্জুপাড়া গ্রামের অন্তত দুই হাজার কৃষক পরিবার প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ করে নিজেদের অর্থায়নে দেড় কিলোমিটার রিং বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছিলেন। সবাই আমন ফসল রক্ষায় এ বাঁধটি করেছিলেন। নিশ্চিন্তে চাষাবাদ করে আমন চারা রোপন করেন। ভাল ফলনের উজ্জল সম্ভাবনাও দেখা দেয়। কৃষকরা রঙিন স্বপ্নে বিভোর ছিল আর এক মাস পরে গোলায় ধান তুলবেন। কিন্তু সেইসব ধুলিস্যাৎ হয়ে গেল। দুই হাজার কৃষক পরিবারের স্বপ্নের বাঁধ অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে। সেই সঙ্গে আমন ফসল ঘরে তোলার স্বপ্ন ফিঁকে হয়ে গেল। ফের বাঁধ মেরামত করার কোন সঙ্গতি এদের নেই। ফলে এসব পরিবারে এখন রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। রামনাবাদ পাড়ের এসব দরিদ্র কৃষক শ্রেণির মানুষ দিশেহারা হয়ে গেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার এবং শনিবারের পাঁচ দফা অস্বাভাবিক জোয়ার বাঁধটির চারটি স্পট লন্ডভন্ড করে দেয়। শনিবারের দিনের জোয়ারের তান্ডবে এখন বাড়িঘরও ভাসছে। ৪৭/৫ পোল্ডারের এই ভাঙ্গা বাঁধটি পানি উন্নয়ন বোর্ড মেরামত করেনি। তাই কৃষকরা এ বছর নিজেদের উদ্যোগে আমন ফলনের আশায় একটি রিং বেড়িবাঁধ করেছিলেন। তাও অস্বাভাবিক জোয়ারের তীব্র ঝাপটায় ভেসে গেল। এখন আমনক্ষেত পানির নিচে ডুবে আছে। এলাকার মেম্বার মজিবর রহমান জানান, তিন দিন আগেও (বুধবার) আমন ক্ষেতের সবুজ সমারোহে তাদের বুকে শিহরণ জাগত। মনে আশার জাল বুনেছিলেন গোলায় তুলবেন পাকা ধান। রঙিন সেই স্বপ্ন এখন বিবর্ণ, ধুসর হয়ে গেছে। যেন আগামি বছরের খোরাকি ধান সংগ্রহে রাজ্যের অনিশ্চয়তার কবলে পড়লেন দুই হাজার কৃষক পরিবার। প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে সিডরের পর থেকে বাস করা এই মানুষগুলো এখন চরম অসহায় হয়ে গেল। গণমাধ্যমকর্মীদের দেখলে শুধু বলেন, কী করবেন ছবি তুইল্যা। কী করবেন পেপারে লেইখ্যা। কোন সমাধান তো অয়না। আরও কত কী। আগ্রহভরে তথ্যও দিতে চাননা এই অসহায় মানুষগুলো। এখন আমন ফসল তো দুরের কথা রান্না করে খাওয়ার মতো অবস্থা নেই। জোয়ারের পানিতে মানুষগুলো ভাসছে আর অসহায়ের মতো চোখের সামনে ফসল নষ্ট হওয়া, পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার সর্বনাশা দৃশ্যগুলো দেখছেন। এসব মানুষ তাদের স্বপ্নের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন চরম দুর্বিষহ দশায় পড়েছেন। আগামি বছরের খোরাকি কীভাবে সংগ্রহ করবেন সেই দুশ্চিন্তায় দুচোখে সর্ষেফুল দেখছেন। তাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ফসল রক্ষায় এবাঁধটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামতের কোন তথ্যও জানাতে পারেননি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস।
×