ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

লঞ্চ ও ফেরি চলাচল বন্ধ বরগুনায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ১২ গ্রাম প্লাবিত বাগেরহাটে অস্বাভাবিক জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রাজধানীতে ;###;জলাবদ্ধতায় জনজীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ

বৃষ্টিতে স্থবির দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২১ অক্টোবর ২০১৭

বৃষ্টিতে স্থবির দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সারাদেশে শুরু হয়েছে অবিরাম বর্ষণ। বৃহস্পতিবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে এই অঝোর ধারা। যা শুক্রবার সারাদিনই অব্যাহত ছিল। এদিকে টানা বর্ষণের কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বৃষ্টিতে নাকাল হতে হয়েছে বিশেষ প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হওয়া লোকজনকে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। সারাদেশের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে আজ শনিবারও সারাদিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকায় ৭৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি-শিমুলিয়া এবং কাওড়াকন্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে দুপারে পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়েছে কয়েক শ’ যানবাহন। এদিকে শুক্রবার সকাল থেকেই সারাদেশে ছোট আকারের নৌযান সমূহের চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। মানুষের সাধারণ জীবনযাত্র ব্যাহত হয়েছে। বরগুনা বেরিবাঁধ ভেঙ্গে ১২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বাগেরহাটে টানা বৃষ্টির কারণে এবং অস্বাভাবিক জোয়ারে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের খামার। আবহাওয়া অফিসের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়েছে, উপকূলীয় উড়িষ্যা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার দুপুর গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চল ও উড়িষ্যা এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে এবং গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়াও নিম্নচাপের প্রভাবে আজ শনিবার দেশের বিভিন্ন বিভাগের ওপর ভারি বর্ষণের সতর্কতা দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে দক্ষিণাঞ্চল ছাড়াও পাবনা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, কুমিল্লার ওপর দক্ষিণপূর্ব অথবা পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে বজ্রবৃষ্টির অশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জানান, নিম্নচাপ দেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানের কারণে শুক্রবার সকাল থেকেই সারাদেশে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তিনি বলেন, এর প্রভাবে আজ শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। এর পড়েই বৃষ্টিপাতের প্রকোপ কমে আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। নিম্নচাপের প্রভাবে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সারাদেশে ছোট আকারের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে বলেছে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল কর্তৃপক্ষ- বিআইডব্লিউটিএ। এ সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা মোবারক হোসেন মজুমদার জানান, খারাপ আবহাওয়ার কারণে সারাদেশে ৬৫ ফুটের কম দৈর্ঘের সব ধরনের নৌযানের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, উপকূলীয় এলাকা হাতিয়া, বেতুয়া ও রাঙ্গাবালিতে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। ঢাকা সদরঘাটে বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক সৈয়দ মাহফুজুর রহমান জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফারহার-৪ নামের একটি লঞ্চ হাতিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সমুদ্রবন্দরগুলোতে তিন নম্বর সতর্কতা সংকেত থাকায় কর্তৃপক্ষ ওই রুটের সব লঞ্চের যাত্রা বাতিল করেছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলীয় এলাকায় কোন ধরনের লঞ্চ চলবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। রাজধানীরবাসীর ভোগান্তির যেন শেষ নেই ॥ নিম্নচাপের প্রভাবে রাজধানীতে বৃহস্পতিবার রাত থেকেই অঝোর ধারায় ঝরছে বৃষ্টি। সারাদিনের পরিবেশ ছিল আঁধারে ঢাকা। বৃষ্টিপাতের ধরন দেখে মনে হচ্ছিল যেন বর্ষার অঝোর ধারা ঝরছে। অথচ প্রকৃতিতে চলছে কার্তিক মাস। এ মাসের প্রকৃতি সাধারণ নীল আকাশ আর সোনালি রোদের এক অপূর্ব মিশেল থাকার কথা। কিন্তু গত দু’দিনের পরিবেশ দেখে মনে হয়নি এটা বর্ষা না অন্য ঋতু। সকাল থেকে অঝোর ধারায় বর্ষণের কারণে রাজধানীবাসী ঘর থেকে বের হতে পারেনি। বিশেষ প্রয়োজনে যারা বের হয়েছেন তাদের দুর্ভোগের সীমা ছিল না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে কর্মব্যস্ত নাগরিকদের দুর্ভোগের যেন অন্ত নেই। পাশাপাশি যানবাহন সঙ্কটেও গন্তব্য পৌঁছাতে গুনতে হচ্ছে বেশি ভাড়া। সরজমিনে দেখা গেছে, ভারি বর্ষণের কারণে রাজধানীর সার্কিট হাউস রোড, সিদ্ধেশ্বরী এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় পানি জমে যায়। বনানী থেকে মহাখালী সড়কের দুইপাশে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার। আগারগাঁও, তালতলা, বিজয় সরণির বিভিন্ন স্থানে পানি উঠে যায়। এছাড়াও পল্টন, ফকিরাপুল ও মালিবাগগামী সড়কের বিভিন্ন অংশ পানিতে ডুবে যায়। তবে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় ভোগান্তি ছিল অন্যদিনের চেয়ে তুলনামূলকভাবে অনেক কম। ফলে প্রচন্ড জ্যামের কবলে পড়তে হয়নি কাউকে। যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। ধানম-ির ২৭ নম্বর, মানিক মিয়া এভিনিউ, ফার্মগেট থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত রাস্তার দুধারে বিভিন্ন স্থানে পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে সিএনজি চালিত যানবাহনগুলোর ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। এ কারণে ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে যানচল কিছুটা ব্যাহত হয়। অনেক যাত্রীকে পানি মারিয়ে চলতে দেখা গেছে। এছাড়া অনেকেই ছাতার ব্যবহার করে বৃষ্টির কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেন। সকাল থেকেই রাজধানীজুড়ে অঝোর ধারায় বৃষ্টির কারণে মূল রাস্তার পাশাপাশি বিভিন্ন অলিগলিতে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। চলন্ত পথচারীরা বৃষ্টি থেকে গা বাঁচাতে বিভিন্ন দোকানপাট, ছাউনি এবং আশপাশে থাকা শেডের নিচে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। শুক্রবার বৃষ্টিতে ভিজেই নগরবাসীকে জুমার নামাজে শরিক হতে দেখা গেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাতের খবর-মানিকগঞ্জ ॥ বৈরী আবহাওয়ার কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে শুক্রবার দুপুর থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) আরিচা কার্যালয়ের ট্রাফিক পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে নদীতে বড় বড় ঢেউয়ের সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল থেকে স্বল্পসংখ্যক বড় লঞ্চে যাত্রী পারাপার করে। তবে দুপুর থেকে নদীতে উত্তাল ঢেউ সৃষ্টি হলে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। আবহাওয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে না আসা পর্যন্ত এই নৌপথে কোন লঞ্চ চলাচল করবে না। বৈরী আবহাওয়া কারণে নদীতে ঝড়ো বাতাস থাকায় ফেরিগুলো বাতাসের বিপরীতে সহজে চলতে পারছে না। নৌপথের তিনটি ফেরি বিকল থাকায় যানবাহন পারাপার ব্যাহত হচ্ছে। মুন্সীগঞ্জ ॥ বৈরী আবহাওয়ায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুটে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ রুটে সব ধরনের নৌ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর আগে দুপুরে পদ্মায় তীব্র স্রোত আর ঝড়ো হাওয়ায় লঞ্চ ও স্পিডবোটসহ অন্যান্য নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৬টি ফেরি দিয়ে কোন রকম সচল ছিল এই রুট। কিন্তু বিকেলে বাতাসের তীব্রতা আরও বাড়লে ফেরি চলতে না পারায় বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে শিমুলিয়া প্রান্তে আটকা পড়েছে ৫ শতাধিক গাড়ি। বিপাকে পড়েছে এই রুটে চলাচলকারীরা। বিআই-ডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শাহ নেওয়াজ খালেদ জানান, বাতাস আর স্রোত ক্রমেই বাড়ছে। ফেরি চালালেও এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে উভয় পারে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট। চরম দুর্ভোগে পড়েছেন দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীরা। শরীয়তপুর ॥ সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে শরীয়তপুরের কাওড়াকান্দি-শিমুলিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার পর ভারি বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো বাতাসের কারণে নদীতে প্রচন্ড ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে এই রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে শরীয়তপুরের কাওড়াকান্দি ফেরিঘাটে ৩ শতাধিক যানবাহন আটকা পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছেন এ এলাকার হাজার হাজার যাত্রী। মংলা ॥ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মংলা সমুদ্র বন্দরের অবস্থানরত জাহাজের পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকেই এই অবস্থা বিরাজ করছে। ফলে শ্রমিকরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বাগেরহাট ॥ উপকূলীয় এই জেলায় নিম্নাঞ্চল গত দু’দিনের টানা বৃষ্টি এবং অস্বাভাবিক জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঠান্ডা ঝড়ো হাওয়ার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। জেলার তিন পৌরশহরসহ নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নিম্ন চাপের পাশাপাশি ভর অমাবস্যার কারণে জেলার সব নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ৮টি স্থানের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। মুষলধারে বৃষ্টির কারণে জেলা সর্বত্র সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেওয়ালির উৎসব ব্যাহত হয়েছে। ৮ উপজেলার তিন শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। কলাপাড়া ॥ বৃহস্পতিবার রাতের অস্বাভাবিক জোয়ারের তোড়ে বাঁধটির তিনটি স্পটে ভেঙ্গে গেছে। জোয়ারের প্লাবণে এখন শুধু আমন ক্ষেত নয় গোটা এলাকা ভাসছে। আমন আবাদের স্বপ্নে বিভোর থাকা এই কৃষকরা এখন দিশেহারা হয়ে গেছে। জোয়ার-ভাটার পানি ওঠানামায় অন্তত তিন শ’ একর জমির আমন ফসল নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমন ক্ষেতে জোয়ারের পানিতে থৈ থৈ করছে। হতাশায় ডুবে আছে এখানকার অন্তত চার শ’ কৃষক পরিবার। তিনদিনের টানা বৃষ্টি ও দমকা ঝড়ো হওয়ায় জনজীবনে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে। সাগর নদী উত্তাল রয়েছে। ঝড়ো হাওয়া ও প্রবল বৃষ্টিতে আগাম জাতের আমন ধান নেতিয়ে পড়েছে। শীষ বের হওয়া এসব ফসল নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। খুলনা ॥ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত টানা হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিতে খুলনায় নাগরিক জীবনে সীমাহীন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিইউআরপি ও বিআর্ক কোর্সে ভর্তি পরীক্ষার শিক্ষার্থী ও তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবকরা। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের কষ্টের কোন সীমা ছিল না। নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট বৃষ্টিতে নগরীর প্রায় সব রাস্তায় পানি জমে যায়। বিভিন্ন এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েন। বরিশাল ॥ নগরীসহ জেলার প্রতি উপজেলায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার দিনভরের বৃষ্টিপাতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপ সৃষ্টি হওয়ায় বিভাগের সর্বত্র কখনও টানা আবার কখনও থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পেয়েছে নদীগুলোতে। ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল আবহাওয়া অফিস ৬৭ মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। নওগাঁ ॥ সমুদ্রে লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার ভোর থেকে অবিরাম বৃষ্টি চলছে নওগাঁ অঞ্চলে। ঘরের বাইরে যাওয়ার ফুসরত নেই। বৃষ্টির ফলে মানুষজন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। খেটে খাওয়া মানুষগুলো পড়েছে চরম বিপাকে। বিকেল সোয়া ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অঝোরে বৃষ্টি ঝরছিল। আকাশ ছিল কালো মেঘে ঢাকা। লক্ষ্মীপুর ॥ নিম্নচাপের প্রভাবে বরিশাল, ভোলাসহ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীহাট থেকে সব ধরনের ফেরি ও লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। নিম্নচাপের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরে ভারি বর্ষণ, ধমকা হাওয়া অব্যাহত রয়েছে। টানা বর্ষণের সারাদিন নিম্ন আয়ের মানুষগুলো কাজে যেতে পারেনি। ঘরে এক রকম জিম্মি হয়ে পড়েছে। বহুস্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে উপকূলীয় মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অব্যাহত বর্ষণের ফলে শীতকালীন সবজির বীজতলা সমূহের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উড়তি আমন ধানের গাছগুলো ক্ষেতে শুয়ে পড়েছে। এতে আমনের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছে কৃষক। ঈশ্বরদী ॥ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় ঈশ্বরদী অঞ্চলে শুক্রবার দিনভর বৃষ্টিপাত হয়েছে। বিরামহীনভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ায় মানুষের জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। একদিকে শুক্রবার ছুটির দিনে বৃষ্টিপাত যোগ হওয়ায় বাজারঘাট পুরোপুরি বন্ধ থাকে। মিলকলকারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।
×