ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শাকিলের শিক্ষাজীবন এখন জালের ফাঁদে

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ২১ অক্টোবর ২০১৭

শাকিলের শিক্ষাজীবন এখন জালের ফাঁদে

সবকিছু ঠিক থাকলে শাকিল এ বছর সপ্তম শ্রেণীতে পড়ত। কিন্তু তার শিক্ষা জীবনের পথ আচমকা বাঁক নিয়েছে। এখন চলছে ভিন্ন পথে। জাল সেলাইয়ের কাজ করছে। যে বয়সে বাবা-মায়ের কাছে বায়না ধরার কথা। স্কুলে যাওয়ার কথা। বই-খাতার চাহিদা থাকার কথা। এটা চাই, ওটা চাই। রিক্সা ভাড়া চাই। কিন্তু সব যেন থমকে সেই বয়সেই উল্টো তাদের প্রয়োজন মেটানোর জন্য সংসার জীবনের চাকা ঠেলছে। বাবা রহিম প্যাদা কর্মহীন। মা গৃহিণী। তিনজনের সংসারের বোঝা এখন শাকিলের ঘাড়ে। হাসিখুশি মুখ। সুন্দর মুখাবয়ব। গভীর সমুদ্রে ইলিশ শিকারের জালে রশি লাগাচ্ছে। উৎফুল্ল চিত্তেই শাকিল তার কাজ করে যাচ্ছে। না বোঝে আগামী দিনে তার চলার পথ কী হতে পারে। না জানে তার ভবিষ্যত গন্তব্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে। যেন না জানা আগামীর পথে হাঁটছে এই কিশোর। জানায়, এক মাত্র বোনের বিয়ে হয়েছে। সেরাজপুর গ্রামে বাড়ি। বাবা রহিম প্যাদা কাজকর্ম করেন না। কেন? এর কোন উত্তর তার জানা নেই। পাশের একজন জানালেন, উনি কাজ করে না। পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে দুই বছর আগেই শাকিলের লেখাপড়ার পাঠ চিরদিনের জন্য থমকে গেছে। এখন পেশায় জেলে শ্রমিকের আঁচ লাগতে শুরু করেছে। দৈনিক দুই শ’ থেকে কোনদিন তিন শ’ টাকা জোটাতে পারে এ কিশোর। মা ইলিশ রক্ষায় চলা অবরোধকালে মহিপুর মৎস্যবন্দরে অন্যান্য জেলে শ্রমিকের সঙ্গে শাকিলও জালে রশি লাগানোর কাজ করছিল। যেন একটি সতেজ সুস্থ মনের স্কুলগামী শিশুর অকাল ঝরে পড়া। শুরুতেই আটকে গেল শিক্ষাজীবন। এখনও সহপাঠীদের কথা মনে জাগে। কিন্তু শাকিলের সেসব ভাবনা যেন তার কচি মনে তেমন ছেদ কাটে না। কেন? উত্তর নেই। ছোট্ট সদা হাসিমুখে কথা বলা শাকিলের শিক্ষাজীবন থমকে যাওয়ার কারণ কেউ আর খোঁজেনি। নেই ঝরে পড়া শিশুদের খাতায়ও তার নাম। মৌলিক অধিকার খাদ্য-বস্ত্রের যোগান দিতে গিয়ে তার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে আরেক মৌলিক অধিকার শিক্ষা। এসব কে বাস্তবায়ন করবে তা নিয়ে কোন ভাবনা নেই শাকিলের। রাষ্ট্র, সরকার কিংবা সমাজ বা শিক্ষা বিভাগ কেউ এগিয়ে আসেনি শাকিলের এসব মেটাতে। তাইতো নতুন পরিচয়, জেলে শ্রমিকের তকমা গায় আটকে যাচ্ছে চীরদিনের জন্য। কয় বছর পরে হয়ত একটি বাল্য বিয়ে। তারও স্ত্রী-সন্তান হবে। হবে সংসারও। তারপর আর কী। শাকিলদের অপরিণত বয়সে পরিণত হতে হবে। কিশোর বয়সের শরীরটা পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে আগামীর না জানা গন্তব্যে এগিয়ে যাবে। এমনসব জেলেপল্লীর অসংখ্য গল্পের মতো বাস্তবতা চোখের আশপাশেই না জানা থাকে আমাদের মতো তৃণমূলের গণমাধ্যম কর্মীদের। আর মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ কী তাদের ঝরে পড়া হিসাবের খাতায় শাকিলের কোন নাম জানে? এমন প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারও। তারপরও শাকিলের কর্ম থেমে থাকবে না। হয়তো একদিন হবে খ্যাত কিংবা অখ্যাত শ্রমজীবী। মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া থেকে
×