ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকার স্যুয়ারেজ লাইন

প্রকাশিত: ০৩:১১, ২১ অক্টোবর ২০১৭

ঢাকার স্যুয়ারেজ লাইন

ঢাকা ওয়াসার বিরুদ্ধে পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিয়ে রাজধানীবাসীর অভিযোগের অন্ত নেই। তবে গত ১০-১৫ বছরে ওয়াসা পানি সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অনেকটাই সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে। ওয়াসার পানি কতটা বিশুদ্ধ, জীবাণুমুক্ত ও সুপেয় তা নিয়ে প্রশ্ন আছে অবশ্যই। কেননা, রাজধানীর সর্বত্র স্যুয়ারেজ লাইন তথা পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। যে কারণে অধিকাংশ স্থানে পানি ও পয়ঃলাইন ভেঙ্গেচুরে একাকার হয়ে গেছে। প্রায়ই বিশেষ করে অতি বৃষ্টি ও বর্ষার সময় জলাবদ্ধতায় সয়লাব ও একাকার হয়ে যায় তরল পয়ঃবর্জ্য ও পানির লাইন যা জনস্বাস্থ্যের জন্য রীতিমতো হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। দুর্বিষহ হয়ে ওঠে নগরজীবন। এ সময়ে মাত্রাতিরিক্ত তরল বর্জ্য যায় বুড়িগঙ্গায়। যে কারণে এ নদীকে বড়সড় নর্দমা বলে প্রতীয়মান হয়। যেমন দুর্গন্ধ তেমনি ময়লা আর্জনায় পরিপূর্ণ। এক্ষেত্রে ওয়াসার পাশাপাশি দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টিও অস্বীকার করা যাবে না। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, রাজধানী ঢাকার জন্য আজ পর্যন্ত যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। যে কারণে পয়ঃবর্জ্যসহ যাবতীয় কঠিন ও তরল বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হয় বুড়িগঙ্গা ও অন্যান্য খালে-বিলে। ওয়াসা কর্তৃপক্ষও স্বীকার করেছে যে, গত ১২ বছরে তারা স্যুয়ারেজ লাইন সংস্কারে আদৌ হাত দেয়নি। এ বাবদ বছরে ২৫-৩০ লাখ টাকা খরচ করে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্লিনারদের পেছনে। এ পরিস্থিতি ঢাকার সর্বত্রই দৃশ্যমান। সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাব সর্বত্র প্রকট। কী বুড়িগঙ্গা, কী হাতিরঝিল, কী হাজারীবাগ, কী উড়াল সড়ক সর্বত্রই যেন বিরাজমান অব্যবস্থা, অনিয়ম, এমনকি দৃষ্টিকটু পরিবেশ-পরিস্থিতি। উদাহরণত হাতিরঝিলের কথা বলা যেতে পারে। রাজধানীর ফুসফুস বলে খ্যাত এই এলাকাটি বহু আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন নিয়ে বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। তবে দুঃখজনক ও হতাশার খবর হলো, যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে মাত্র চার বছরেই নষ্ট হতে বসেছে হাতিরঝিলের নানা স্থাপনা ও সৌন্দর্য। লেকের পানি হয়েছে বিবর্ণ, দুর্গন্ধযুক্ত। গুলশান-বনানীর পয়ঃবর্জ্য এসে পড়ছে এখানকার পানিতে। অনুরূপ রাজধানীর প্রাণপ্রবাহ বুড়িগঙ্গা। রাজধানী হিসেবে ঢাকার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে যে কোন মূল্যে, যে কোন উপায়ে বাঁচিয়ে তুলতে হবে বুড়িগঙ্গাকে। বুড়িগঙ্গাকে ঘিরে আরও একটি হাতিরঝিল নির্মাণের স্বপ্ন ঢাকা ইনটিগ্রেটেড আরবান ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড স্মার্ট সিটি ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় নেয়া হয়েছে। প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে অর্থ ব্যয় করবে বিশ্বব্যাংক ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। তবে এর জন্য সর্বাগ্রে যা করণীয় তা হলো একদার কল্লোলিনী স্রোতস্বিনী বুড়িগঙ্গার পরিপূর্ণ পুনরুদ্ধার, যা আপাত দৃষ্টিতে দুরূহ। কেননা, ভূমিগ্রাসীদের অবৈধ হিংস্র থাবায় ইতোমধ্যেই বুড়িগঙ্গার দুই তীরের অধিকাংশ জমি চলে গেছে বেদখলে। সেসব স্থানে গড়ে উঠেছে বড় বড় স্থাপনা ও বহুতল ইমারত। সময় সময় সে সবের কিয়দংশ উচ্ছেদ করা হলেও অচিরেই তা চলে যায় দখলদারদের কবলে। কোন কোন স্থাপনা উচ্ছেদ স্পর্শকাতরও বটে। সেক্ষেত্রে দু’পাশের অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা না গেলে নদীর প্রবাহ অক্ষুন্ন রাখা সম্ভব হবে না কিছুতেই। সেক্ষেত্রে বুড়িগঙ্গাকে দূষণমুক্ত করাও জরুরী ও অপরিহার্য। বুড়িগঙ্গাকে সর্বাগ্রে পুনরুদ্ধার করতে হবে নাব্য পূর্বাবস্থাসহ। এর পরই না হয় অন্যান্য দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা নির্মাণ, সবুজায়ন, পার্ক ও বিনোদন ব্যবস্থা, থ্রিস্টার-ফাইভস্টার হোটেলের কথা ভাবা যাবে! তা না হলে পরিকল্পনা পরিকল্পনাতে থেকে যাবে, বাস্তবে কোন কাজ হবে না। সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা নিশ্চিত করা না হলে কোন কিছুই যথাযথ ও সৌন্দর্যমন্ডিত রাখা যাবে না। আর এর জন্য সর্বাগ্রে যা প্রয়োজন, তা হলো, রাজধানীর যাবতীয় কঠিন ও তরল বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক পয়ঃঅবকাঠামো গড়ে তোলা। তা না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।
×