ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জোবায়ের মিলন

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ সচেতন বোধের শাণিত প্রকাশই কবিতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২০ অক্টোবর ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ সচেতন বোধের শাণিত প্রকাশই কবিতা

কবে একদিন মাথার ভিতর ঢুকে গেল সরল বাক্যের উল্টো সাজ- জানি না! সেদিন থেকে আমজনতা ভাবনার উচ্ছ্বিষ্ট কুড়িয়ে নিতে শিখে গেছি। বুঝে গেছি ফেলে যাওয়া পথেই আছে ফেলে রাখাা রতন। ঝেরে ফেলা কথায়ই আছে অনেক না বলা কথা। সে কথা ছকে তুলে ধুয়ে মুছে রং করে সততার টবে সাজিয়ে তুলতে সাধ হলো খুব। সাধেরা হলো বড়। রেণুগুলো স্বপ্নের বেণী বুনলো মনের অজান্তে। জটের মতো ভারি হলে ছিঁড়ে ফেলতে গিয়ে দেখি এ শেকড় চলে গেছ অনেক দূর, চলে গেছে অনেক দিকে। টান পড়লেই হৃৎপি-ের কোষে কোষে বেজে ওঠে সর্ব-ছেদের ব্যথা। ততদিনে বুঝে গেলাম কবিতার কামড় দাঁত বসিয়েছে গায়ে। তা আর সারবার নয়। দেখি- ওষুধেই অসুখের জ্বালা বাড়ে, কবিতায় সুখ নামে মরা চাঁদেরও ওলান বেয়ে ঢুলোঢুলো; দুঃখের নদী তার কিছুই না। সহস্র বেদনা উড়ে যায়, উবে যায় কবিতার সঙ্গমে। সহবাসে। তারপর মাথা থেকে নেমে যায় কোটি বছরের ক্লান্তি আর ঘাম। ধরা দেয় অনন্ত বিশ্রাম; প্রসব পর মায়ের মতো। আমি যেন প্রতিবারই অন্দরে আনন্দে নেচে উঠি শিশুটির মুখ দেখে। তারপর আবার রাত জাগা, দিন জাগা; সকল সুখের সকল দুখের আর বোধ-বিন্দর তোলপাড়, অথৈ ভাঙ্গা-গড়া; ছেনেছুনে প্রকাশের বেদনা। কিন্তু তবুও কি সহজ কবিতা? অযুত নিযুত বায়ু চষে যেন একটি শব্দ বোনার চেষ্টা, বুনে আবার ফলানোর ক্রন্দন, ফলের অপেক্ষা। এ যেন এক পারত্রিক চিত্রপটে সাধুর সাধনা- অলৌকিক ইশারার অপেক্ষায়। ইহলোকে এ অসত্য নয়, তাই সচেতন বোধের শাণিত প্রকাশই এক একটি কবিতা। কখনো রূপসী, কখনো অপরূপ। ** তিল তোমার নিচ পেটে গভীর কালো তিল তিলেরা বাচ্চা দিচ্ছে প্রতিরাতে. . . অগুনতি তিল বড় হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে; তোমাকে বিশ্বাস করতে ভয় হয় খুব। দ্যাখো কী কম্পমান আমার হাত, পা পাঁজরের অতলে দ্যাখো কী বিকট ঢংকার! ওই নিচ পেটে হাত রাখতে আমার ভয় হয়; প্রতিটি কালো তিল সাপ হয়ে উঠছে এই প্রতিহিংসার অভয়ারণ্যে! ** নগ্নতা পোনার মতন কিলবিল করে পিচাশ. . . পিচাশে পিচাশে ভরে গেছে মাঠ একটা ঘাসের ডগাও নেই কোথাও। কোথাও। বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে গাধা ও ঘোড়ার লীলা হুবহু সুপাঠ্যের মতো সজারুর বিচরণ. . . আজব মহিষ ঘোরে ঘরে বাহিরে! যাবতীয় আলো-দিন অস্তে গেছে চলে ভ্রমর ও প্রজাপতি নিয়েছে বিরাম, দু’চারটা দোয়েল কোয়েল ডাকে মাঝে মাঝে তারও স্বর পতন প্রবণ। এই যে দ্যাখো- মানুষ মানুষের নাশে করতালি বাজায় সিটি দিয়ে ফেটে পড়ে হরিত উল্লাসে। হায়! ** কবি ও কাক কাক আহত হলে কাকের ঢল নামে আহত কাক ঘিরে মাতম করে কাকের দল; শুধু মানুষ নয়, কাকহীন কোনো প্রাণি ভিড়তে পারে না ঘটনার ধারে-কাছে। কয়েক দিন। কাকের চেয়ে কবির সংখ্যা বেশি এই শহরে. . . মিথ্যুক কবিরাই এসব বলে বলে রং লেপেছে ষোল কোটি দেয়ালে! অকারণ ভয় ধরিয়ে দিয়েছে- না হয় নিজেরাই নিজেদের শত্রু হয়ে চালিয়েছে শাণিত ছুরি; তাই কবির কথায় বিশ্বাস নেই কাকেরও! কাক জড়ো হয়। কবিরা বিচ্ছিন্ন। কাক কা কা করে কবিরা শব্দহীন। কবির আহত দিনে আর বসে না কবির হাট আঙ্গুলের ফিনকি দিয়ে ছোটে না দ্বিধাহীন তীর; শুধু মরক্তের মতো এখানে ওখানে পড়ে আছে কবি ও কলম। ** বৃষ্টি ঘন দিন ও মৌন ক্রন্দন আমি বারান্দায় তুমি উঠোনে আমি চেয়ে আমি তুমি নৃত্যরত. . . আমি পরাধীন- শেকল অথবা মনের বেড়ি; তুমি স্বাধীন- তা-ধিন-না-ধিন। তুমি যখন তখন আমি সূচীপত্র তুমি সুস্থ সবল আমি ক্র্যাচে ভর করা. . . এঘর ওঘর।
×