ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রিফাত কান্তি সেন

ঘুরে আসুন লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২০ অক্টোবর ২০১৭

ঘুরে আসুন লক্ষ্মীপুর

নারিকেল, সুপারি আর সয়াবিনের কথা যদি বলেন ভাই, সৌভাগ্যের শহর লক্ষ্মীপুর আসা চাই। ইলিশ আর মহিষের দধি খেতে যাও যদি ভাই, সৌভাগ্যের শহর লক্ষ্মীপুরে আস তাই। প্রিয় পাঠক, আমরা আজ আপনাদের লক্ষ্মীপুর জেলার গল্প শুনাব। লক্ষ্মীপুর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। অর্থনীতির দিক থেকে, বিখ্যাত একটি জেলা লক্ষ্মীপুর। লক্ষ্মীপুর নামকরণে রয়েছে নানা প্রচলিত মত। ধারণা করা হয়, হিন্দু পূরাণে লক্ষ্মী ধন-সম্পদ ও সৌভাগ্যের দেবী তার অর্শিবাদে পুষ্টো এই জেলা। সে হিসেবে লক্ষ্মীপুরের অর্থ দাঁড়ায় সম্পদসমৃদ্ধ শহর বা সৌভাগ্যের নগরী। আবার অনেকে মনে করেন, লক্ষ্মী নারায়ণ রায় এবং গৌর কিশোরের স্ত্রী লক্ষ্মীপ্রিয়ার নাম অনুসারে লক্ষ্মীপুরের নামকরণ করা হয়। কৃষি, অর্থনীতি আর ইতিহাস সমৃদ্ধ এক জেলা লক্ষ্মীপুর। রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। উপকূলীয় জনপদ হলেও এর নয়নাভিরাম সৌন্দর্য মুগ্ধ করে দর্শনার্থীদের। রফতানি পণ্যের মধ্যে সয়াবিন, সুপারি নারিকেল, মাছ, মরিচ অন্যতম। ওই জেলায় ৬৮টি মৎস্য খামার রয়েছে। রয়েছে ৩টি হ্যাচারি। লক্ষ্মীপুর জেলার, রায়পুরে রয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য বিভাগের প্রতি তিনজনের একজন প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জন্য নিয়োজিত। প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি দেখতে বিপুল পর্যটক আসেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া দর্শনার্থী বেশি আসেন। জিনের মসজিদ রায়পুরে রয়েছে, জিনের মসজিদ। এটি একটি প্রাচীন মসজিদ। অনুমান করা হয় ১৮ ‘দশ শতকের শেষার্ধে নির্মিত হয় মসজিদটি। ‘মৌলভী আবদুল্লাহ সাহেবের মসজিদ’ নামে এলাকায় পরিচিত হলেও এর সামনের সিঁড়ির কাছে লাগানো শিলালিপিতে একে ‘মসজিদ-ই-আবদুল্লাহ’ বলা হয়েছে। লোকমুখে শোনা যায় জিন নাকি মসজিদটি নির্মাণে সহায়তা করেছিলেন। অনেকেই তাদের পূর্বপুরুষ থেকে শুনে আসছেন, মসজিদ নির্মাণের পর নাকি জিনেরা সেখানে ইবাদতও করেছেন। আবার এমনও শোনা যায়, মসজিদ নির্মাণে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন জিনেরা। ১২৭ বছর আগের দৃষ্টিনন্দন এই জিনের মসজিদ দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা ছুটে আসেন। মসজিদটি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর পৌর শহর থেকে ৮-৯ শ’ গজ পূর্বে পীর ফয়েজ উল্লাহ সড়কের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। রিক্সায় কিংবা সিএনজিচালিত অটোরিক্সাযোগে সেখানে পৌঁছানো সম্ভব। দালাল বাজার জমিদার বাড়ি ও খোয়াসাগর দীঘি নেই জমিদার, নেই জমিদারি, আছে শুধু জমিদারদের রেখে যাওয়া স্থাপত্য। ‘রাম নেই, নেই রাজত্ব’ এটি একটি বাংলা প্রবাদ। আমাদের দেশে এখন আর রাজাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি না থাকলেও তাদের রেখে যাওয়া স্থাপত্যশৈলি নজর কাড়ার তো। লক্ষ্মীপুর জেলার দালাল বাজারের প্রাচীন এ জমিদার বাড়িটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রাজ গেট, প্রাসাদ, অন্দর মহল, শাণ বাঁধানো ঘাট এ সবই দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। জমিদার বাড়ির পাশেই রয়েছে খোয়াসাগর দীঘি। ধারণা করা হয় জমিদার ব্রজবল্লভ রায় মানুষের পানীয় জল সংরক্ষণে দীঘিটি খনন করেন। দীঘিটি এতটাই দীর্ঘ যে এর একপ্রান্তে তাকালে আরেক প্রান্তে কুয়াশাময় মনে হয়। লক্ষ্মীপুর-রায়পুর- দালাল বাজার সংলগ্ন সড়কের পাশে বিশাল আকার দীঘি চোখে পড়বে। দীঘিটি নিয়ে অনেক রূপ কথার গল্পও কথিত আছে। মেঘনা নদী- লক্ষ্মীপুর মেঘনা বাংলাদেশের একটি বড় নদী। চাঁদপুর জেলার দক্ষিণ পূর্ব দিক থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম কোন দিয়ে রায়পুর উপজেলা দিয়ে এ নদী লক্ষ্মীপুরে প্রবেশ করেছে। এ নদীতে বিপুল রুপালি ইলিশ পাওয়া যায়। মেঘনার অপার সৌন্দর্য অবলোকন করতে প্রতিদিন হাজারো মানুষের মিলনমেলা ঘটে লক্ষ্মীপুর জেলার মেঘনা নদীর পাড়ে। লক্ষ্মীপুরের রামগতির বেশিরভাগ লোকের আয়ের বড় উৎস হলো মাছ আহরন। মেঘনা একটি ভয়ঙ্কর নদী ও বটে। এ নদী যেমন মানুষের হৃদয়ে প্রশান্তির খোড়াক জোটায় আবার তেমনি এর ভয়াল রূপে সর্বস্ব কেড়ে নিচ্ছে অনেকেরই। তাই তো কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘এ কূল ভেঙে ওকূল তুমি গড়ো, যার একূল ওকূল দু-কূল গেল তার লাগি কি কর? কিভাবে যাবেন লক্ষ্মীপুর জেলায়? ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুরের ভাড়া, ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।এসি নন এসি দুই ধরনের যানবাহন ই রয়েছে। যাতায়াতের মাধ্যমে বাসযোগে। সেখান থেকে দর্শনীয় স্থানগুলোতে যেতেও আহামরি পয়সা খরচ করতে হবে না।
×