ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

হুন্ডির দিন শেষ, এখন থেকে অনলাইনেই সব লেনদেন

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২০ অক্টোবর ২০১৭

হুন্ডির দিন শেষ, এখন থেকে অনলাইনেই সব লেনদেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে আর হুন্ডি ব্যবসা থাকবে না। হুন্ডি না থাকলে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়বে। এখন থেকে অনলাইনেই সব ধরনের লেনদেন করা যাবে। বাংলাদেশে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম পেপ্যালের জুম সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ আইসিটি এক্সপো-২০১৭’র দ্বিতীয় দিনে পেপ্যালের জুম সেবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তিনি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ফজলে কবির, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, বিদেশে থাকা এক কোটি ১৮ লাখ প্রবাসী গত অর্থবছরে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। এর বাইরে হুন্ডির মাধ্যমে কত টাকা এসেছে তার কোন হিসাব নেই। এখন পেপ্যাল চালু হওয়ায় দ্রুত টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে প্রবাসীরা আর হুন্ডিতে টাকা পাঠাবেন না। এখন থেকে তারা অনলাইনেই টাকা পাঠাবেন। এতে দেশে রেমিটেন্স বাড়বে। রেমিটেন্স এবং ফ্রিল্যান্সারদের আয় যে হুন্ডির মধ্য দিয়ে আসত, সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। লিগ্যাল চ্যানেল দিয়ে চলে আসবে, দুর্নীতির সুযোগ বন্ধ হবে। যারা হুন্ডি করে তারা চিট করে। অনলাইন ব্যবস্থায় দুর্নীতি করার কোন সুযোগ থাকবে না। পেপ্যাল ইন্টারনেট ভিত্তিক বিশ্বের বৃহত্তম পেমেন্ট ব্যবস্থা। জুম তাদের ক্রস বর্ডার পেমেন্ট সার্ভিস। এক সময় জুম আলাদা কোম্পানি থাকলেও ২০১৫ সালে পেপ্যাল তা কিনে নেয়। একই বছর শেষদিকেই কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে জুমের সেবা চালু হয়। কিছুদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বৃহস্পতিবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো। আপাতত এই সেবা হবে ‘ইনবাউন্ড’। অর্থাৎ বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো হলে তা তোলা যাবে। তবে বাংলাদেশ থেকে কেউ বিদেশে টাকা পাঠাতে পারবেন না। প্রাতিষ্ঠানিক কাজে দেশের বাইরে বিল পরিশোধ, ইন্টারনেটে কেনাকাটা বা হোটেল বুকিংয়ের সুবিধাও আপাতত পাওয়া যাবে না। প্রবাসীরা জুম ব্যবহার করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দেশে টাকা পাঠাতে পারবেন। যারা দেশে বসে বিদেশে কাজ করেন, ফ্রিল্যান্সার বা আউটসোর্সিংয়ে জড়িত, তারাও এই সুবিধা পাবেন। অনলাইন ভিত্তিক এই সেবা আংশিক সুবিধা নিয়ে চালু করায় যারা সমালোচনা করছেন তাদের সমালোচনার জবাব দেন সজীব ওয়াজেদ জয়। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে তখন টাকা পাঠানোরও সুযোগ তৈরি হবে। কিছু কিছু সমালোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে যে পেপ্যাল সব কিছু দিতে পারছে না। পেপ্যাল দিয়ে টাকা পাঠানো যাচ্ছে না। এটা পেপ্যালের ব্যর্থতা নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনের বাইরে টাকা পাঠানো নিষেধ রয়েছে। এর পেছনে সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করে জয় বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা শুরু হলে তার প্রভাব সরাসরি যাতে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে না পড়ে সেই চেষ্টায় আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে ‘কিছুটা আইসোলেটেড’ রেখেছে। বাংলাদেশ থেকে টাকা যেন ফ্রিলি না যেতে পারে, সেটা আমাদের পলিসি। তবে আমাদের সরকারের আমলেই বিদেশে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তিকে ১০ হাজার ডলার নিয়ে যাওয়ার সুবিধা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন উন্নত হবে, যখন আমরা বিদেশের যে কোন দেশের সঙ্গে অর্থনীতিতে পাল্লা দিতে পারব, সেই পর্যায়ে আর কারেন্সির এই প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। তখন আমরা আমাদের কারেন্সি মুক্ত করে দেব। কোন সীমা থাকবে না। তবে এখনও আমরা সেই পর্যায়ে পৌঁছিনি। সে কারণে আউট বাউন্ড বিদেশে টাকা পাঠানো এটা আমাদের দেশের আইনে নেই, আমরা পারছি না। যে পরিমাণ টাকা আনতে চান, আনা যাবে। এই সিস্টেম এখন চালু। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের পেপ্যাল এ্যাকাউন্টধারী যে কোন ব্যক্তি তার পেপ্যাল ওয়ালেট ব্যবহার করে ৪০ মিনিটের মধ্যে নিরাপদে বাংলাদেশে নির্দিষ্ট ব্যক্তির এ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারছেন। ধীরে ধীরে অন্যান্য দেশও এর সঙ্গে যুক্ত হবে। প্রতিবার সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার পাঠানো যাবে। প্রতি লেনদেনে এক হাজার ডলার পর্যন্ত ৪ দশমিক ৯৯ ডলার ফি লাগবে। এক হাজারের বেশি লেনদেনের ক্ষেত্রে বাড়তি আর কোন ফি দিতে হবে না। প্রাথমিকভাবে সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে বাংলাদেশে পেপ্যালে আসা টাকা তোলা যাবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জয় বলেন, যারা দেশে বসেই ফ্রিল্যান্সিং করে বিদেশ থেকে অর্থ আয় করেন, সেই টাকা আনতে তাদের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হত। টাকা আনতে ৩ থেকে ৭ দিন সময় লেগে যেতে। তখন ৩০ শতাংশ টাকা খরচ হয়ে যেত ফি দিতে গিয়েই। এ কারণে ফ্রিল্যান্সাররা বাংলাদেশে পেপ্যাল চালুর দাবি করে আসছিলেন। আজকে সেই সার্ভিস বাংলাদেশে চালু হয়েছে। পেপ্যাল এ্যাকাউন্ট থেকে, এ্যাপ থেকে লগইন করে সরাসরি টাকা পাঠানো যাবে। ৪০ মিনিট থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে টাকা চলে আসবে। এখানে বছরে কোন ফি দিতে হবে না। সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা যে কোন সময় টাকা পাঠানো যাবে। আমারও পেপ্যাল এ্যাকাউন্ট আছে, আমিও চেক করে দেখেছি যে কোন সময় বাংলাদেশে টাকা পাঠাতে পারি। এখন প্রবাসীদের টাকা হুন্ডিতে নয়, পেপ্যালের মাধ্যমে এলে রেমিন্টেস আরও বাড়বে। সরকারী বিভিন্ন ফি, বেতন, লাইসেন্স ফি, বিদ্যুত-গ্যাসের বিল অনলাইনে পরিশোধের ব্যবস্থা চালু হয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে এসব বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে। আমরা আইসিটি বিভাগ থেকে উদ্যোগ নেব। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সিস্টেম বানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে দেব। ভাতার টাকা, সেবার টাকা মেরে দেয়ার সুযোগ, ঘুষ নেয়ার সুযোগ কারও হাতে থাকবে না। ভবিষ্যতে ইন্টারনেটের দাম আরও কমানোর আশ্বাস দেন তিনি। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে তখন এক এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ছিল ৭৮ হাজার টাকা। সরকারের গত মেয়াদের শেষে তা নামিয়ে করা হয় মাত্র ৭ শ’ টাকা। বর্তমানে এর মূল্য ৬ শ’ টাকা। ভবিষ্যতে ইন্টারনেটের দাম আরও কমানো হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে দেব। ইনফো সরকার-৩’র মাধ্যমে ২৬ শ’ ইউনিয়নে ফাইবার অপটিক কেবল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, এ বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের ফোরজি নিলাম করতে বুধবার প্রতিমন্ত্রী, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও অপারেটরদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা বৈঠক করেছেন তিনি। ফোরজি গাইডলাইন নিয়ে ২৪টির সমস্যা ছিল, ২২টির সমস্যা সমাধান করেছি। বাকি দুটি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ বছরেই ফোরজি (চতুর্থ প্রজম্মের ফোন) চালু করা হবে।
×