ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

উদ্ভিদের শ্বাস-প্রশ্বাস কিভাবে হয় ॥ নতুন ব্যাখ্যা

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২০ অক্টোবর ২০১৭

উদ্ভিদের শ্বাস-প্রশ্বাস কিভাবে হয় ॥ নতুন ব্যাখ্যা

উদ্ভিদের শ্বাস-প্রশ্বাস কিভাবে হয় সে সম্পর্কে পাঠ্যবইয়ের এতদিনের ব্যাখ্যা পাল্টে যেতে পারে। নতুন এক গবেষণায় এ ব্যাপারে আলাদাভাবে আলোকপাত করা হয়েছে। উদ্ভিদ কিভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ছাড়ে সে সম্পর্কিত আগের ব্যাখ্যাগুলোতে রক্ষক কোষগুলোর ভেতরভাগের দেয়ালগুলো শুরু হয়ে ওঠার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হতো। উদ্ভিদ গ্যাস আদান-প্রদান, পানি নিয়ন্ত্রণ ও প্যাথাজেনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা গড়ে তোলার জন্য স্টোমাটা নামে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র যেসব রন্ধ্র ব্যবহার করে থাকে এই কোষগুলো সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। প্রফেসর রিচার্ড মরিসের নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী সম্প্রতি উদ্ভিদের একটি রক্ষক কোষের প্রথম পূর্ণাঙ্গ থ্রিডি মডেল উদ্ভাবন করেছেন। থ্রিডি সাইমুলেশন ব্যবহার করে তারা আবিষ্কার করেছেন যে রক্ষক কোষগুলোর ঠিকমতো কাজ করার জন্য তিনটি উপাদান প্রয়োজন। প্রথমত কোষের অভ্যন্তরে পানির মাত্রা বা চাপ, দ্বিতীয়ত কোষ প্রাচীরের স্থিতিস্থাপকতা এবং তৃতীয়ত এর কিডনি আকৃতির ক্ষেত্র যা চাপকে আকার পরিবর্তনে সাহায্য করে থাকে। প্রফেসর মরিস বলেন, যে তাদের এই গবেষণা উদ্ভিদকে আরও বেশি জলবায়ুর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার উপায় কি তা বুঝতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, রক্ষক কোষগুলোও প্যাথোজেন আক্রমণের অতি উত্তম লক্ষ্য। কাজেই স্টোমাটা খোলা ও বন্ধ হওয়ার কাজটা কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় তা বুঝতে পারা উদ্ভিদের স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অন্য আরেকটি গবেষণায় রক্ষক কোষের কার্যক্রমের আরও কিছু গোপন রহস্য উন্মোচিত হয়েছে। আণবিক শক্তি চালিত মাইক্রোস্কোপি ও কম্পিউটার মডেলিং ব্যবহার করে এই গবেষক দলটি রক্ষক কোষের প্রান্ত অঞ্চল বা দুই মেরুতে অপ্রত্যাশিত শক্ত হয়ে যাওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করেছেন। গবেষক দলের প্রধান জেমি হবস বলেছেন মেরু দেশগুলো শক্ত হয়ে যাওয়া থেকে বোঝা যায় যে রক্ষক কোষের প্রান্ত ভাগগুলো দুর্বল হয়ে পড়ছে যার ফলে স্টোমাটা খোলার সময় লম্বায় বাড়তে পারছে না। এতে করে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রন্ধ্রগুলোর খোলার গতি বেড়ে যায় এবং বৃহত্তর রন্ধ্র সৃষ্টি হয়। তখন আরেকটি ভাল ধরনের স্টোমাটা পাওয়া যায়। একই ধরনের ফল এরাবিডোপসিস, টমেটো ও ভুট্টার ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হওয়া থেকে বোঝা যায় এই ব্যাপারটা উদ্ভিদের নানা প্রজাতি জুড়ে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান। অধ্যাপক মবিসের দলটি এখন তাদের গবেষণা ঘাসের স্টোমাটায় প্রসারিত করার কথা ভাবছেন। কারণ ঘাসের স্টোমাটার আকার ভিন্ন এবং এর অন্তর্নিহিত কার্যধারাও ভিন্ন রকম হতে পারে। রক্ষক কোষ সেগুলোর কাজের গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও এর অন্তর্নিহিত ক্রিয়াকলাপ সম্পর্কে এ পর্যন্ত তেমন ভাল একটা জানা যায়নি। রক্ষক কোষ ভেতরকার পানির মাপে আকার বদলায়। পানির চাপ বেশি থাকলে কোষগুলো স্ফীত হয়, পরস্পর থেকে বেঁকে সরে যায় এবং তার ফলে স্টোমাটার পথ খুলে যায়। কোষ থেকে পানি বেরিয়ে গেলে পানির চাপ কমে যাওয়ায় পাতাগুলো অধিকতর সমতল রূপ ধারণ করে। কিডনি আকৃতিটা কমে যায়। তার ফলে রন্ধ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফি
×