ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গৃহ নির্মাণ ঋণ মেলার উদ্বোধন

বস্তিবাসীদের জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ২০ অক্টোবর ২০১৭

বস্তিবাসীদের জন্য ১০ হাজার ফ্ল্যাট হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বস্তিবাসীদের আবাসন সমস্যা নিরসনের জন্য সরকার ভাড়াভিত্তিক ১০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, নবেম্বরের শেষ সপ্তাহে সাড়ে ৫০০ ফ্ল্যাট নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে এই কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে। বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশনের উদ্যোগে ও রিহ্যাবের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার থেকে প্রথমবারের মতো ৩ দিনের গৃহায়ন অর্থায়ন মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। হোটেল সোনারগাঁওয়ে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোশারফ হোসেন বলেন, প্রতি বছর ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি কমছে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়বে। এ জন্য কৃষি জমি নষ্ট না করে বহুতল ভবনের দিকে যেতে হবে। পল্লী এলাকায় ভবন নির্মাণে কীভাবে সহায়তা করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্তিবাসীদের জন্য ৫৫০টি এ্যাপার্টমেন্টের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন বলেও জানান তিনি। বিএইচবিএফসি ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান, আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন, সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন), বিএইচবিএফসির চেয়ারম্যান শেখ আমিনউদ্দিন আহমেদ, রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়াসহ অন্যরা। মেলায় স্বাগত বক্তব্য দেন বিএইচবিএফসির মহাব্যবস্থাপক মোঃ জাহিদুল হক। মেলায় ৩১টি আবাসন, ৭টি ব্যাংক ও আর্থিকসহ আবাসন সম্পর্কিত ৪৭টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। মেলা উপলক্ষে প্লট ও ফ্ল্যাট কিনতে ছাড় দিচ্ছে অনেকেই। এ ছাড়া ঋণেও কিছুটা ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। মেলা প্রতিদিন সবার জন্য সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। এ সময় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, বস্তিবাসীর জন্য ভাড়াভিত্তিক এ্যাপার্টমেন্ট করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্তিবাসীদের জন্য ৫৫০টি এ্যাপার্টমেন্টের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার গৃহায়নকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করছে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল একটি দেশে সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করা একটি কঠিন কাজ। আমাদের দেশের শতকরা ৭২ শতাংশ লোক গ্রামে বসবাস করে এবং মোট গৃহের ৮১ শতাংশই গ্রামে অবস্থিত। এই ৮১ শতাংশ গৃহের মধ্যে ৮০ শতাংশই নি¤œমানের কাঠামো। ‘জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে যত্রতত্র বাড়িঘর নির্মাণ করায় প্রতিদিন প্রায় ২৩৫ হেক্টর কৃষিজমি নষ্ট হচ্ছে। তাই সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে হলে শুধু নগরে বসবাসকারীদের জন্যই নয়, গোটা দেশের একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরী হয়ে পড়েছে’ বলেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় স্বল্পমূল্যে ইতোমধ্যে ৮ হাজার এ্যাপার্টমেন্ট হস্তান্তর করেছি এবং বিভিন্ন জায়গায় ১৫ হাজার এ্যাপার্টমেন্ট পাইপ লাইনে রয়েছে। তবে একটা কষ্ট আছে। আমরা পরিবেশবান্ধব এ্যাপার্টমেন্ট করছি। কিন্তু ঢাকা শহরের স্যুয়ারেজ সিস্টেম কোথায় যাচ্ছে আমরা জানি না। রাজউকের অধীনে গুলশানে যেসব লেক আছে, সেসব লেকের পাড় দিয়ে গন্ধে হাঁটা যায় না। বড় বড় বাড়ির মালিকরা, অর্থশালীদের সমস্ত মলমূত্র ওখানে গিয়ে পড়ে এবং ক্যান্টনমেন্টের মলমূত্র ওখানে গিয়ে পড়ে। আমাদের স্যুয়ারেজ যাচ্ছে কোথায়, কেউ জানে না। বস্তিবাসীদের বাসস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ৬৫০ বর্গফুটের এ্যাপার্টমেন্ট করছি। আলাদা টয়লেট ও বাথরুমের ব্যবস্থা করছি। বেসিনটাও আলাদা জায়গায় করা হবে। লিফট ও জেনারেটরের ব্যবস্থাও থাকবে। এই এ্যাপার্টমেন্টে ৪ থেকে ৫ জন থাকতে পারবে। ভাড়া নিচ্ছি মাত্র ৮ হাজার টাকা। এটা দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে দিতে পারবে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় এই ১০ হাজার এ্যাপার্টমেন্ট করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। এই প্রকল্প গ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বস্তিবাসীদের এই সমস্যা জিইয়ে রাখা ঠিক হবে না। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বস্তিতে ঘর ভাড়া তারা দেয়। বিদ্যুতের সংযোগের জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, আবার বিদ্যুত বিলও দেয়; সেভাবে পানির জন্য অতিরিক্ত টাকা দেয় ও পানির বিলও দেয়। সাধারণ মানুষের আবাসন সমস্যার সমাধানে সরকারী উদ্যোগে এ্যাপার্টমেন্ট করার নানা উদ্যোগের বিষয় তুলে ধরেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ। ভবন নির্মাণে সুদের হার কমানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও বাড়ি নির্মাণের জন্য ঋণের সুদ ৪ শতাংশের বেশি নাই। বাংলাদেশেও সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
×