ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নাটোরে উত্তরা গণভবনের গাছ কর্তন ॥ কার্যকর হয়নি গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০২:০২, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

নাটোরে উত্তরা গণভবনের গাছ কর্তন ॥ কার্যকর হয়নি গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ নাটোরে গণভবনে গাছ কাটার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় গৃহিত কোন সিদ্ধান্তই এখনও কার্যকর হয়নি। গণভবন থেকে উচ্ছেদ করা যায়নি অবৈধ গাছ কাটার দায়ে অভিযুক্ত কেয়ারটকোর আবুল কাসেমকে । তবে গণভবন থেকে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী গাছ কাটার বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত কাজ শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাজ্জাকুল ইসলামের নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি সকাল থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত উত্তরা গণ ভবনে তদন্ত করেন। আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে বলে জানান তদন্ত কমিটি। জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, অবৈধ ভাবে নাটোরের উত্তরা গণভবন থেকে গাছ কেটে নেয়ার প্রেক্ষিতে গত ১৭ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতি ক্রমে গাছ কাটার দায়ে অভিযুক্ত দুই জন কর্মকর্তাসহ ৪জনের বিরুদ্ধে মামলরা দায়ের, গণভবনের নিরাপত্তার জন্য গণভবনের ভিতরে বসবাসরত গাছ কাটার দায়ে অভিযুক্ত কেয়ার টেকার আবুল কাসেম ও আব্দুস সবুরকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে বাসা থেকে উচ্ছেদ, গণভবনের উন্নয়নের জন্য ফুল গাছ রোপন এবং গণভবনের সামনে অবৈধ দখল উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এরমধ্যে কেয়ার টেকার সবুর বাসা ছেড়ে দিলেও আবুল কাসেম বাসা ছেড়ে দেননি। প্রত্যক্ষদর্শিরা জানায়, বুধবার সন্ধ্যায় আবুল কাসেমের বাসার সরকারী মালামালের তালিকা প্রস্তুত এবং তালা মেরে দেয়া হয়। এরপর সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল কিছু নেতা কর্মি নিয়ে সেখানে যান। এসময় তিনি এনডিসি ও জেলা প্রশাসককে আবুল কাসেমকে ৭দিনের জন্য বসবাস করতে দেয়ার জন্য বলেন। ফলে আবুল কাসেম বহাল তবিয়তে গণভবনে বসবাস করছেন। এ বিষয়ে নেজারত ডেপুটি কালেকটার (এনডিসি) অনিন্দ কুমার বলেন, এমপি সাহেবে আবুল কাসমেকে থাকতে দেয়ার জন্য ডিসি সাহেবকে বলেন। পরে ডিসি সাহেবের নির্দেশে সাত দিনের জন্য তাদের থাকতে দেয়া হয়। এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল বলেন, গত ২৭ বছর ধরে তারা সেখানে বসবাস করছেন। কিন্তু মাত্র ১ ঘন্টার নোটিশে তাদের বের করে দেয়া অমানবিক। একারণে তাদের ৭দিনের জন্য বসবাস করতে দিতে বলেছি। জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন জানান, মামলা দায়েরের জন্য সরকারী অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া মাত্র মামলা দায়ের করা হবে। অপরদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজ্জাকুল ইসলাম জানান, নিয়ম বহিঃর্ভূতভাবে কাটা গাছের তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। আরো অধিকতর তদন্ত শেষে তিন কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন তারা জমা দেবেন। তবে সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তারা এখন আর কিছু বলতে রাজি হননি। তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার বানু, সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) শামিম ভুইয়া, নেজারত ডেপুটি কালেকক্টরেট (এনডিসি) অনিন্দ্য মন্ডল। উল্লেখ্য, নাটোরের উত্তরা গনভবনের ভিতরে সম্প্রতি ঝড়ে ভেঙ্গে পড়া এবং মরে যাওয়া দুটি আম,একটি মেহগনি সহ বেশ কিছু গাছের ডালপালার কাটার টেন্ডারের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী তাজা গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ পাওয়া গেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। আর এই গাছ কাটার কাজে সহযোগিতা করেছেন গনপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা, গনবভনের তত্ত্বাবধায়ক, বন বিভাগ সহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তারা। গণভবনের নিরাপত্তায় থাকা সিসি টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তাজা গাছ কেটে নেওয়ার দৃশ্য। মাত্র ১৮ হাজার ৪’শত টাকার টেন্ডারের বিপরীতে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রায় ১৫ টি তাজা গাছ কেটে নেয়া হয়।
×