ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সকল প্রবীণকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনার সুপারিশ

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ১৯ অক্টোবর ২০১৭

সকল প্রবীণকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনার সুপারিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের মোট জনসংখ্যার ৭ শতাংশ প্রবীণ। গড় আয়ু ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকায় ষাটোর্ধ এই জনগোষ্ঠীর সংখ্যা আগামীতে আরও বাড়বে। বাস্তবতা হলো প্রবীণের আর্থিক সক্ষমতা কমে গেলে পরিবারের অন্য সদস্যদের তুলনায় তার চাহিদা অগ্রাধিকার পায় না। তাই আর্থিক নিরাপত্তার জন্য সকল প্রবীণকে বয়স্ক ভাতার আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। পাশাপাশি সকল শ্রেণির প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, প্রবীণদের সাথে দুর্ব্যবহারে আইনী শাস্তির বিধান রাখা, পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করা এবং প্রবীণদের জাতীয় ডাটাবেজ তৈরি করাসহ নিতে হবে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ । বৃহস্পতিবার শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘প্রবীণকল্যাণ বিষয়ক গবেষণা ফলাফল বিস্তারণ এবং নীতি সংস্কার জাতীয় কর্মশালা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামাজিকবিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ এর আয়োজক। পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে কর্মশালার উদ্বোধন করেন। পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য শামসুল আলম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য বেগম জুয়েনা আজিজ প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বার্ধক্যে পিতা-মাতা বা অন্য প্রবীণেরা সসম্মানে পরিবারের সঙ্গে থাকবেন- এটাই আমাদের সামাজিক সংস্কৃতি। তবে অর্থনৈতিক ব্যস্ততা বাড়তে থাকায় পারিবারিকভাবে প্রবীণদের দেখাশোনার প্রবণতা ভবিষ্যতে কমবে। এজন্য আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। গড় আয়ু বাড়তে থাকায় মানুষের কর্মক্ষমতাও বাড়ছে। জার্মানীতে চাকুরীতে স্বাভাবাকি অবসরের বয়সসীমা ৬৯। আমাদেরকেও অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর ব্যাপারে ভাবতে হবে। কর্মশালায় সামাজিকবিজ্ঞান গবেষণা পরিষদের অর্থায়নে স্বল্পপরিসরে পরিচালিত দুটি গবেষণা প্রতিবেদনের ফল উপস্থাপন করা হয়। এর মধ্যে বগুড়ার ধুনট উপজেলার চারটি গ্রামে প্রবীণদের ভূমিকা ও মর্যাদা নিরূপণে করা গবেষণায় বলা হয়, প্রবীণদের আর্থ-সামাজিক মর্যাদার অবস্থা শোচনীয়। এসব গ্রামের ৬০ শতাংশ বৃদ্ধ নিজেদেরকে পরিবার ও সমাজের বোঝা মনে করেন। পরিবারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূমিকা ও মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রবীণের আর্থিক সক্ষমতা প্রধান ভূমিকা পালন করে। যে সব প্রবীণ পরিবারের দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করেন, তারা অন্য প্রবীণদের তুলনায় ভালো থাকেন। গবেষণাটি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল ইসলাম। অপর গবেষণাটি করা হয়েছে রংপুর বিভাগের দরিদ্র (৪০%) এবং দরিদ্র নন (৬০%) এমন ৮৪৭ জন প্রবীণের সহযোগিতা প্রাপ্তি এবং নিগৃহীত হওয়ার প্রবণতার ওপর। এটি করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ড. প্রসন্নজিত সরকার। এতে বলা হয়েছে, এসব প্রবীণের প্রতি ১০ জনে একজন একাকী জীবন নির্বাহ করছেন। দরিদ্র প্রবীণদের মধ্যে ভিজিডি, বয়স্ক ভাতাসহ অন্যান্য ভাতা পাচ্ছেন মাত্র ১৯ শতাংশ। পুত্রবধু কর্তৃত নিগৃহীত হওয়ার অভিযোগ করেছেন বেশিরভাগ প্রবীণ। তবে সহযোগিতা পাওয়া এবং নিগৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক স্বচ্ছলতার তাতপর্যপূর্ণ কোন ভূমিকা নেই। অর্থাত দরিদ্র এবং স্বচ্ছল উভয় প্রবীণই সমানভাবে নিগৃহীত হন।
×