ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভালুকায় মাল্টা চাষে বিপ্লব

প্রকাশিত: ০০:০৬, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

ভালুকায় মাল্টা চাষে বিপ্লব

নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা ময়মনসিংহ ॥ ভালুকার কৃষিতে সম্পূর্ণ নতুন অর্থকরী ফসল হিসেবে মালটার আবাদ করে বিপ্লব ঘটিয়েছেন মনমথ সরকার। যিনি এলাকায় মাল্টা বাবু নামে অধিক পরিচিত। তারই উৎসাহে মালটার আবাদ করে বর্তমানে অনেকেই লাভের মুখ দেখছেন। যেসব চালা জমি এক সময় গোচারণ ভূমি হিসেবে সারা বছর অনাবাদি ফেলে রাখা হতো ওই সব জমিতে এখন মাল্টার আবাদ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। গত রবিবার সরজমিন উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সাইনবোর্ডে লেখা পশ্চিম পাঁচগাঁও মাল্টা বাগান ও নার্সারি। সারি সারি গাছে শোভা পাচ্ছে ছোট বড় বিভিন্ন সাইজের কাঁচা-পাকা মালটা, সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে আবার পাতা ঝরা ডালেও ঝুলে আছে দৃষ্টিকাড়া মনোলোভা মালটার ঝোকা। ভালুকায় মালটার আবাদ করে যিনি ব্যাপক সারা জাগিয়েছেন কথা হয় সেই বাগান মালিক বৃক্ষপ্রেমী মনমথ সরকারের সঙ্গে। তিনি জানান বহুদিন পূর্বে নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলা থেকে ভালুকায় এসেছিলেন চাকরির সুবাদে। ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১, ২, ও ৩ অফিসে দীর্ঘ ২৫ বছর সুপারভিশন ও স্টেকিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি করেছেন। ২০০৯ সালে ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের পাঁচগাঁও গ্রামে মনমথ সরকার জমি কিনে প্রথম মালটার আবাদ শুরু করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত কিছুটা শারীরিক প্রতিবন্ধী মনমথ সরকার মালটা বাগানের তদারকি করছিলেন ঘুরে ঘুরে। তিনি জানান ২০০৯ সালে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার কাশবন নার্সারি থেকে ৫ হাজার টাকায় একটি মাত্র মাল্টার চারা কিনে এনে রোপণ করেন। এক বছর পর ওই গাছে ৫/৬টি ফল আসে। ফলগুলো পাকার পর খুবই মিষ্টি হয়। এর পর তিনি শুরু করেন মাল্টার আবাদ। উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে অনাবাদি ফেলে রাখা জমি কিনে তাতে শুরু করেন মাল্টা চাষ। ওই গ্রামের আফতাব উদ্দীন নামে এক ব্যক্তি মনমথের সঙ্গে ৩ বৎসরের জন্য ব্যবসায়িক চুক্তিতে মালটা বাগানে শ্রমিক মালিক হিসেবে দেখাশোনা ও পরিচর্যার দায়িত্ব পালন শুরু করেন। কয়েক বছর পর তার বিশ্বস্থতার পুরস্কার হিসেবে মনমথ সরকার খুশি হয়ে তাকেও ছোট বড় মিলিয়ে ৩০০ মালটা গাছ বিনে পয়সায় রোপণের জন্য দেন। বর্তমানে মনমথ সরকারের বাগানে দুই একর জমিতে ৪শ’র মতো বড় গাছ ও প্রায় ১০ হাজার চারা গাছ রয়েছে। ২০১৬ সালে তিনি সারে ৪ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করেছিলেন। এ বছর ফল ও চারা কিক্রি করে ১০/১২ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন। ছেলে সায়র সরকার অর্ক শাহ জালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সে অনার্স ও মেয়ে তটিনি সরকার সুনম মমিনুন্নেছা কলেজ হতে এইচএসসি পাস করেছেন। স্ত্রী দেবীরানী জোয়ারদার ২০০২ ইং সাল হতে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২ ভালুকায় বিলিং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত আছেন। মেয়ে তটিনি খুদে বিজ্ঞানী হিসেবে জেলা ও জাতীয় পুরস্কার লাভ করেছে। মাল্টা চাষে ব্যাপক সফলতার জন্য মনমথ সরকার ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি উসমানী মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার ১৪২০ লাভ করেছেন। তিনি মাল্টার আবাদ করে নিজে লাভবান হয়েছেন পাশাপাশি আফতাব উদ্দীনের পরিবারটিকেও আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখাতে সাহায্য করেছেন। শুধু মাল্টা নয় বিভিন্ন ফলের গাছ রয়েছে তার বাগানে। চিকন পাতার একটি গাছ দেখিয়ে বললেন ওটি অস্ট্রেলিয়ান লিচু আকৃতিতে নাকি আপেলের মতো প্রায় স্বাদে অতি মিষ্টি। একটি গাছে কয়েকটি বেল দেখালেন আকৃতিতে বড় বড়। তার মাল্টা বাগানে সব সময় কর্মরত রয়েছেন কয়েকজন শ্রমিক। ৪ হাজার ৩০০শ’ টাকা মণ দরে বাগান থেকে পাইকাররা এসে মালটা কিনে নিচ্ছেন। নতুন অবস্থায় চারা গাছে ২০ কেজি থেকে ৪০/৫০ কেজি পর্যন্ত মালটা আসে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর মালটা ধরেছে বেশি। প্রায় ১৫০ মন মাল্টা এবছর বিক্রি হবে। বাগান থেকে প্রায় ১০ হাজার মাল্টার চারা বিক্রয় করা যাবে। যার মূল্য প্রতিটি ১০০ টাকা করে ১০ লাখ টাকার চারা বিক্রি করা যাবে। গাছ যত বড় হয়ে ডালপালা বিস্তার করবে তত বেশি ফল আসবে। ফালগুন চৈত্র মাসে মালটার মুকুল আসে, এ সময় গাছের গোড়ায় প্রচুর পানি ও সার, কীটনাশক দিতে হয়। প্রায় ৯ মাস এটি পরিপক্ব হতে সময় লাগে যে কারণে বছরে মাত্র একবার ফল পাওয়া যায়। তবুও মালটা চাষ অন্যান্য ফসলের চেয়ে ব্যাপক লাভজনক এর কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মনে করেন। ভালুকার মতো উঁচু পাহাড়ি জমি মালটা চাষের জন্য খুবই উপযোগী।
×