ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজী ফরহাদ

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সাইবার দ্বন্দ্বের নেপথ্যে যে এ্যান্টি ভাইরাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সাইবার দ্বন্দ্বের নেপথ্যে যে এ্যান্টি ভাইরাস

রাশিয়া গত বছর নবেম্বরে অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পর্দার আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়ার চেষ্টা করেছে, এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে বিস্তর বাগযুদ্ধ হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতানো না মার্কিন নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ছিল রাশিয়ার তা নিয়ে বোদ্ধা মহল ইতোমধ্যেই নানা তত্ত্ব হাজির করেছেন। যা হোক দুদেশের মধ্যে এই বিবাদের মূলে একটি রুশ এ্যান্টি ভাইরাস ছিল বলে জানা গেছে। যার নাম ক্যাস্পারস্কি। অন্যতম সেরা অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার নির্মাতা হিসেবে স্বীকৃত ক্যা¯পারস্কির বিরুদ্ধে অভিযোগ, রুশ হ্যাকাররা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির (এনএসএ) তথ্য চুরির জন্য সেটি ব্যবহার করেছে। এনএসএ’র এক কর্মী তার বাড়ির কম্পিউটারে ক্যাস্পারস্কি এ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করেছিলেন, সেই কম্পিউটার থেকেই বহু গোপনীয় নথিপত্র চুরি হয়েছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। বিষয়টি নজরে আসার পরপরই গত মাসে মার্কিন প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয় যে রাষ্ট্রীয় কোন কম্পিউটারে ওই রুশ সংস্থাটির কোন সফটওয়্যার আর ব্যবহার করা হবে না। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের ফেলো জেমস লুইস জানান, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান সাইবার সংঘাতে আমরা হারছি। এর মূল কারণ, এ ধরনের যুদ্ধের সঙ্গে আমরা পরিচিত নই। ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোচনা শুরুর পরই ক্যাস্পারস্কির বিষয়টি সামনে আসে। লুইস আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোন দল বা গোষ্ঠী নেই যারা এ জাতীয় মানসিক যুদ্ধ করে, এবং এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার মতো কোন আইন বা আইনী প্রতিষ্ঠানও আমাদের নেই। একুশ শতকের লড়াই নিয়ে লেখালেখি করেন নিউ আমেরিকান ফাউন্ডেশনের গবেষক পিটার সিঙ্গার। তিনিও স্বীকার করেন, সাইবার যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার কাছে হারছে। তবে ইসরাইলের হাইফা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এবং সাইবার নিরাপত্তা গ্রন্থের লেখক গ্যাব্রিয়েল ওয়েইম্যান বলেন, রুশরা জয়ী এখনই এ ধরনের ঘোষণা অনেকটা শিশুসুলভ। ইন্টারনেটে নজরদারির বিষয়ে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসএ) আসলে অর্জন কি তা আমরা সত্যি জানি না। কারণ, এটি ভীষণ গোপনীয়। আর সাইবার যুদ্ধকে ওয়েইম্যান বলছেন, এটা অনেকটা ইঁদুর-বেড়াল খেলার মতো। তুমি যত কৌশলী এবং বিপজ্জনক হয়ে উঠবে, প্রতিপক্ষও তেমনই তোমার চেয়ে এগিয়ে থাকার চেষ্টা করবে। এক প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, রুশ সরকার ক্যাস্পারস্কি সফটওয়্যারকে এমনভাবে পরিবর্তন করেছে যে, এটিকে সে এখন গুপ্তচরবৃত্তির যন্ত্র হিসেবে কাজে লাগাতে পারে। কারণ, এই সফটওয়্যারটি যে কম্পিউটারে ইনস্টল করা হয়, তার সব ফাইলেই এটি প্রবেশ করতে পারে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০১৫ সালের দিকে রাশিয়ানরা বিভিন্ন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মসূচী স¤পর্কে তথ্য জোগাড় করতে চাইছিল। কিন্তু ইসরাইলী গোয়েন্দারা নিজেরাই যখন ওই সফটওয়্যারের গোপনীয়তা ভেদ করতে যায় তখনই ক্যাস্পারস্কির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের রুশ কার্যকলাপ তাদের নজরে আসে। ক্যাস্পারস্কি অবশ্য বলেছে তাদের এই ধরনের কোন ঘটনার কথা জানা নেই। সংস্থাটি আরও দাবি করেছে, তারা এর সঙ্গে আদৌ জড়িত নয় বা রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও তাদের কোন যোগসাজশ কখনও ছিল না। জানা যায় যে ক্যাস্পারস্কির বিষয়ে ইসরাইলীরাই নাকি মার্কিন প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছিল, তবে এনএসএ, হোয়াইট হাউস বা ওয়াশিংটনস্থ ইসরাইলী দূতাবাস এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেনি। নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, রুশ দূতাবাসকে এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে অনুরোধ করলেও কোন জবাব দেয়নি তারা। আর সংস্থার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি জারি করে এই গোটা ঘটনায় তাদের কোন দায় নেই বলে দাবি করেছে ক্যাস্পারস্কি। তারা বলছে ক্যাস্পারস্কি এ বিষয়ে আদৌ অবহিত ছিল না। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা ইউজিন ক্যাস্পারস্কি এক টুইট বার্তায় জানান, তাদের সংস্থার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে শীঘ্রই তদন্ত শুরু করছেন তারা। এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর স্ট্রাটেজিক এ্যান্ড ইন্টারন্যাশনালের ফেলো জেমস লুইস বলেছেন, ইউজিন ক্যাস্পারস্কি লন্ডনে প্রধান অফিস থাকা এই প্রতিষ্ঠানটিকে তার ব্যক্তিগত ব্যবসা হিসেবেই পরিচালনা করতে চাইছেন, কিন্তু রাশিয়ার সরকার হয়ত তার এই আশা পূরণ করতে দেবে না।
×