ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মাহিয়ান দ্বীপ

অবশেষে শারাপোভার মুখে হাসি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

অবশেষে শারাপোভার মুখে হাসি

টেনিস দুনিয়ার হার্টথ্রুব মারিয়া শারাপোভা। সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে তার গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। কিন্তু তারপরও গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বিশ্ব টেনিসের পাদপ্রদীপের আলোয় অবস্থান তার। কোর্টে দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের পাশাপাশি রুপ-সৌন্দর্যেও ভক্ত-অনুরাগীদের মুগ্ধ-বিমোহিত করেছেন তিনি। তবে গত বছর গোটা টেনিস বিশ্বকেই অবাক করে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন শারাপোভা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আবারও কোর্টে ফিরেছেন তিনি। শুরুতে অবশ্য তার পারফর্মেন্স নিয়ে সংশয় ছিল অনেকেরই। কিন্তু ক্রমেই জ্বলে ওঠার ইঙ্গিত দিলেন রাশিয়ান টেনিসের এই গ্ল্যামারগার্ল। দুর্দান্ত খেলেই যে তিয়ানজিন ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন শারাপোভা। রবিবার ফাইনালে এ্যারেনা সাবালেঙ্কাকে পরাজিত করে নিষেধাজ্ঞার পর প্রথম কোন শিরোপা জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। শুধু তাই নয়, ২০১৫ সালের পর এটাই তার প্রথম কোন শিরোপা। ফাইনালে এদিন রাশিয়ান টেনিসের গ্ল্যামারগার্ল ৭-৫ এবং ৭-৬ (১০-৮) গেমে পরাজিত করেন বেলারুশ সুন্দরী এ্যারেনা সাবালেঙ্কাকে। গত বছরের শুরুতেই মেলডোনিয়াম জাতীয় নিষিদ্ধ ওষুধ সেবনের দায়ে ডোপ টেস্টে পজিটিভ হন মারিয়া শারাপোভা। প্রথমে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ ছিল দুই বছর। কিন্তু আবেদন করার প্রেক্ষাপটে ৯ মাস কমিয়ে তাকে ১৫ মাসের জন্য টেনিস থেকে নির্বাসনে পাঠায় বিশ্ব টেনিসের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে চলতি বছরের এপ্রিলেই কোর্টে ফেরেন তিনি। জার্মানির স্টুটগার্ট ওপেন দিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় অধ্যায়ের মিশন শুরু করেন তিনি। প্রথম টুর্নামেন্টেই বাজিমাত করেন শারাপোভা। শুরু থেকে অসাধারণ পারফর্মেন্সের সৌজন্যেই স্টুটগার্ট ওপেনের শেষ চারে জায়গা করে নেন তিনি। এরপর আরও বেশ কয়েকটি ডব্লিউটিএ টুর্নামেন্টে অংশ গ্রহণ করেন তিনি। খেলেছেন মৌসুমের শেষ গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট ইউএস ওপেনেও। তবে কোনটিতেই নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান এই তারকা। কিন্তু কখনোই হাল ছাড়েননি জাত চ্যাম্পিয়ন শারাপোভা। স্টুটগার্ট ওপেনের পর তিয়ানজিন ওপেনেই সেরা পারফর্মেন্স উপহার দেন রাশান। নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর এটাই তার প্রথম কোন টুর্নামেন্টের ফাইনাল। আর ফাইনালে ওঠেই চমকে দেন তিনি। দীর্ঘদিন পর শিরোপার দেখা পেলেন মারিয়া। সবমিলিয়ে প্রায় ২৯ মাস পর শিরোপার স্বাদ পেলেন রাশিয়ান তারকা। এর আগে ২০১৫ সালের মে মাসে ইতালিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতেছিলেন শারাপোভা। এরপর থেকেই ফর্মহীনতার ভুগছিলেন। দুঃসময় পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই ডোপ পাপের কারণে নিষিদ্ধ হন পাঁচবারের গ্র্যান্ডস্লাম জয়ী এই রাশিয়ান সুন্দরী। বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০১ নাম্বারের খেলোয়াড় সাবালেঙ্কা। এই টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দুর্দান্ত খেলেন। বড় বড় তারকাদের চমকে দিয়েই ফাইনালে জায়গা করে নেন বেলারুশ সুন্দরী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শারাপোভার বিপক্ষে পেরে উঠতে পারেননি তিনি। রাশিয়ান তারকার কাছে হেরে তাই চরম হতাশ সাবালেঙ্কা। তবে এই জয়ে উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসছেন শারাপোভা। কেননা নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার পর কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি তাকে। অনেকেই তার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। কানাডার তরুণ প্রতিভাবান খেলোয়াড় ইউজেনি বাউচার্ড তো শারাপোভাকে প্রতারক বলেই মন্তব্য করেন। সেইসঙ্গে রাশিয়ান তারকাকে টেনিস থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধেরও দাবি জানিয়েছিলেন বাউচার্ড। তবে সমালোচনায় কান দেননি শারাপোভা। তিয়ানজিন ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটাই তার বড় প্রমাণ। এই শিরোপা শারাপোভাকে যে নতুন করে অনুপ্রাণিত করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিয়ানজিন ওপেন জয়ের একদিন পরই নতুন করে র‌্যাঙ্কিং আপডেট করেছে কর্তৃপক্ষ। আর সোমবার প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়েই চমকে দিয়েছেন মারিয়া শারাপোভা। এক লাফে ২৯ ধাপ অগ্রগতি হয়েছে তার। এর ফলে ৮৬ থেকে ৫৭ নাম্বারে উঠে এসেছেন ৩০ বছর বয়সী এই রাশিয়ান তারকা। তবে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে কোন পরিবর্তন আসেনি। যে কারণেই শীর্ষে যথারীতি রোমানিয়ার সিমোনা হ্যালেপ। তার পরেই রয়েছেন যথাক্রমে স্প্যানিশ টেনিস তারকা গারবিন মুগুরুজা, চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা পিসকোভা, ইউক্রেনের এলিনা সিতোলিনা এবং আমেরিকান কিংবদন্তি ভেনাস উইলিয়ামস। সোমবার হংকং ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন শারাপোভারই স্বদেশী এ্যানাস্তাসিয়া পাভলিউচেঙ্কোভা। চলতি মৌসুমের তৃতীয় শিরোপা জেতায় র‌্যাংঙ্কিংয়ে অগ্রগতি হয়েছে তারও। তিন ধাপ এগিয়ে এখন ১৮ নাম্বারে অবস্থান করছেন তিনি। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ক্রেমলিন কাপ। রাশিয়ার মস্কোতে হচ্ছে এই টুর্নামেন্ট। শারাপোভা লক্ষ্য এখন সেখানেই। ২০০৭ সালের পর এই প্রথম ক্রেমলিন কাপে খেলবেন তিনি। ওয়াইল্ড কার্ড নিয়ে সেই ইভেন্টের কোর্টে নামবেন তিনি। নিজের দেশের সমর্থকদের সামনে শারাপোভাও সেরাটা ঢেলে দিতে মরিয়া। ক্রেমলিন কাপে খেলতে উন্মুখ হয়ে আছেন হংকং ওপেনের চ্যাম্পিয়ন পাভলিউচেঙ্কোভাও। এই দুই তারকার দিকে তাকিয়ে আছেন রাশিয়ান সমর্থকরাও। বিশ্ব ক্রীড়াজগতে শারাপোভার নামটা বেশ উজ্জ্বল। রাশিয়ান তারকার আজ টাকার অভাব নেই। তবে, একদিন এমন ছিল, যখন দিন চালানোর পয়সাই ছিল না তাদের। প্রচ- কষ্টে কাটত দিন। গত মাসে শারাপোভার আত্মজীবনী প্রকাশিত হয়। সেখানেই রুশ সুন্দরী ছেলেবেলার নানা কাহিনী তুলে ধরেছেন। ছেলেবেলা থেকে দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়েই এই জায়গায় পৌঁছাতে তাকে কতটা ঘাম ঝরাতে হয়েছে। সেই কথাও খুব স্পষ্ট করে লিখেছেন মাশা। ১৯৯১ সালে মাত্র চার বছর বয়সে টেনিস খেলা শুরু করেন শারাপোভা। ওই বয়সে ভাল করে র‌্যাকেটই ধরা সম্ভব নয়। ছয় বছর বয়সে ঠিকঠাক র‌্যাকেট ধরতে শেখেন তিনি। যখন একাডেমিতে ভর্তি করার সময় আসে, তখন দেখা যায় তাদের হাতে পর্যাপ্ত অর্থই নেই। রাশিয়ায় টেনিসের পরিকাঠামো ভাল ছিল না। বাধ্য হয়ে মার্কিন-মুলুকে যেতে হয় শারাপোভাদের। আমেরিকায় গিয়ে জীবন চালানোর জন্য দরকার প্রচুর অর্থ। অথচ শারাপোভার বাবার কাছে সেই সময়ে ছিল মাত্র ৭০০ ডলার। পরিবারের খরচ চালানোর জন্য ছোট ছোট চাকরি নিতে হয় শারাপোভার বাবাকে। এভাবেই দারিদ্র্যের সঙ্গে তাদের বেড়ে ওঠার গল্প জানান শারাপোভা।
×