ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লিটন আব্বাস

৩২ বছরের হাহাকার ঘোচানোর পালা আর্জেন্টিনার

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

৩২ বছরের হাহাকার ঘোচানোর পালা আর্জেন্টিনার

একসময় বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই ছিল ব্রাজিলের একতরফা জনপ্রিয়তা বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কিন্তু ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ সব হিসাব-নিকাশ বদলে দেয় আর সৌভাগ্যবশত ওই আসর থেকেই লাল-সবুজের দেশে বিশ্বকাপের ব্যাপক প্রচার শুরু হয় তখনও এদেশের বেশিরভাগ ফুটবলপ্রেমীর প্রথম পছন্দ ছিল ব্রাজিল, দ্বিতীয় স্থানে আর্জেন্টিনা কিন্তু ওই আসরে ম্যারাডোনা নামের জাদুকর যা করেন, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য, রূপকথার মতো ব্রাজিলের শৈল্পিক ছন্দ, কাব্য পেছনে ফেলে একাই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতান তখনকার সাহসী যুবা তাঁর কীর্তি এতটাই ঔজ্জ্বল্য ছড়াল যে বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেল ম্যারাডোনা জ্বর সেই যে শুরু ধীরে ধীরে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে আর্জেন্টিনার সমর্থনের পাল্লাও বেড়ে গেল বাংলাদেশে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে সম্ভাবনা ও সাফল্যের খতিয়ানে এগিয়ে থাকবে পেলের দেশ ব্রাজিল। কিন্তু তাকে কি! ফুটবল বলুন আর বিশ্বকাপই বলুন, আপনাকে আর্জেন্টিনার নামটিও শীর্ষ তালিকায় রাখতে হবে সবসময়। এটা শুধু জনপ্রিয়তার কারণে নয়, আসল কারণ দিয়াগো ম্যারাডোনা নামের ম্যাজিক। ক্ষুদে এই জাদুকরের কারণেই তেমন ছন্দময় ফুটবল না খেলেও ফুটবলবিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় দল আর্জেন্টিনা। অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে বাছাইপর্ব উতরানো দেশটি এবার রাশিয়ায় যাবে দীর্ঘ ৩২ বছরের হাহাকার ঘোচানোর মিশনে। একসময় বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই ছিল ব্রাজিলের একতরফা জনপ্রিয়তা! বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের মেক্সিকো বিশ্বকাপ সব হিসাব-নিকাশ বদলে দেয়। আর সৌভাগ্যবশত ওই আসর থেকেই লাল-সবুজের দেশে বিশ্বকাপের ব্যাপক প্রচার শুরু হয়। তখনও এদেশের বেশিরভাগ ফুটবলপ্রেমীর প্রথম পছন্দ ছিল ব্রাজিল, দ্বিতীয় স্থানে আর্জেন্টিনা। কিন্তু ওই আসরে ম্যারাডোনা নামের জাদুকর যা করেন, তা এক কথায় অবিশ্বাস্য, রূপকথার মতো। ব্রাজিলের শৈল্পিক ছন্দ, কাব্য পেছনে ফেলে একাই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জেতান তখনকার সাহসী যুবা। তাঁর কীর্তি এতটাই ঔজ্জ্বল্য ছড়াল যে বাংলাদেশে শুরু হয়ে গেল ম্যারাডোনা জ্বর। সেই যে শুরু ধীরে ধীরে ব্রাজিলকে ছাড়িয়ে আর্জেন্টিনার সমর্থনের পাল্লাও বেড়ে গেল বাংলাদেশে। এই অবস্থা এখনও অটুট। তা ওই ম্যারাডোনার কারণেই। ৩১ বছর আগে বিস্ময় বালক সেই যে বিশ্বজয় করালেন আর্জেন্টিনাকে, তারপর থেকে দেশটির ভাগ্যে শুধু হতাশা। সমর্থকদের বেলাতেও একই কথা প্রযোজ্য। ১৯৯০ সালে নিজে কেঁদে ও ১৯৯৪ সালে সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছেন ম্যারাডোনা। ২০১০ সালে ফের এসেছিলেন মুকুট জয়ের লক্ষ্যে। কিন্তু মেসি, তেভেজদের কোচ হয়ে দেখা পাননি সাফল্যের। আবার বিশ্বকাপ হাজির, থাকছেন ম্যারাডোনাও। সরাসরি না থাকলেও আর্জেন্টিনা বলতেই এসে যায় জীবন্ত এই কিংবদন্তির নাম। এই এক ব্যক্তির দাপটের কারণেই বাংলাদেশে আর্জেন্টিনার সমর্থক এখন ব্রাজিলের চেয়ে বেশি। বিষয়টা এমন যে, এরা যতটা না আর্জেন্টিনার সমর্থক তার চেয়ে অনেকটাই বেশি ম্যারাডোনার। এবারও একই মন্ত্র নিয়ে আর্জেন্টাইন ভক্তরা প্রস্তত। টানা ব্যর্থতা, কষ্টের সাগরে ডুব দেয়ার পরও ম্যারাডোনা যা দিয়ে গেছেন তা নিয়েই সন্তুষ্ট ভক্ত-সমর্থকরা। আর্জেন্টাইন ফুটবলঈশ্বর যা দিয়েছেন তার বিনিময়ে বছরের পর বছর কষ্ট পেতেও যেন সুখ সমর্থকদের! আবারও বিশ্বকাপ, আবারও কষ্টের সাগরে ভেসে যাওয়া!? কিন্তু না, ব্রাজিল সব কষ্ট দূর করতে চেয়েছিলেন মেসি, হিগুয়াইন, এ্যাগুয়েরো, ডি মারিয়ারা। ২৮ বছরের হাহাকার ঘোচানোর মিশন নিয়েই ব্রাজিল বিশ্বকাপে এসেছিল ম্যারাডোনর উত্তরসূরিরা। সেই যে ১৯৮৬ সালে কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনা বিশ্বকাপ জিতিয়ে গেছেন তার পর সঙ্গী শুধু হাহাকার আর হাহাকার। এর পরের বিশ্বকাপগুলোতে বুকভরা কষ্ট আর দীর্ঘনিঃশ্বাস সঙ্গী হয়েছে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটির। কিন্তু ব্রাজিলেও স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। ফাইনালে জার্মানির কাছে হারতে হয় ১-০ গোলে। এবার বাছাইপর্বেও ছিল ত্রাহি অবস্থা। শেষ রাউন্ডে অনেক হিসাব-নিকাশ পেরিয়ে বিশ্বাকাপের টিকেট কেটেছে মেসির দল। এখন থেকেই তাই আর্জেন্টাইনরা বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে! শুধু যে বলার জন্যই বলা বিষয়টা এমন না। অতীত পরিসংখ্যান ও ইতিহাসে দৃষ্টি দিলেই বিষয়টা পরিষ্কার। এমন অনেক দেশ আছে যারা কোনরকমে বিশ্বকাপে খেলার টিকেট কাটে। পরে দেখা গেছে সেই দেশটিই জিতে নিয়েছে বিশ্বকাপ ট্রফি। এক্ষেত্রে অন্য দেশের দৃষ্টান্ত লাগবে না। আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে। তাও আবার তখন স্বযং ম্যারাডোনা খেলতেন। সেটা ১৯৮৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের সময়। আর্জেন্টিনাকে কাঠখড় পেরিয়ে বিশ্বকাপে নাম লেখাতে হয়। পরে কি হয় সেটা তো সবারই জানা। ম্যারাডোনা একাই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে হয়ে যান ফুটবল ঈশ্বর। এবার বাছাইপর্বে যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচের আগপর্যন্ত ঝুলেছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপে অংশগ্রহণের বিষয়টি। শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে অধিনায়ক মেসির দুর্দান্ত হ্যাটট্রিকে আর্জেন্টিনা পেয়েছে ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকেট। দুর্ভাবনাও দূর হয়েছে আর্জেন্টিনার ভক্তদের। টালমাটাল এ পরিস্থিতির পর এখন নতুন করে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্নও জোরদার হতে পারে আকাশি-নীলদের। কারণ এই একই রকম পরিস্থিতির মধ্যে আর্জেন্টিনা পড়েছিল ম্যারাডোনার আমলে। ম্যারাডোনার সঙ্গে মেসির তুলনাটা চলে আসছে অনেক দিন ধরেই। সেটা যে অমূলক কিছু না, তাও প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে চলেছেন মেসি। এমনকি ম্যারাডোনাও নিজের উত্তরসূরি হিসেবে ঘোষণা করেছেন মেসির নাম। আগামী বছরের বিশ্বকাপে সেই তুলনা হয়ত আসবে অরও বেশি করে। ১৯৮৬ সালে কোনমতে বাছাইপর্বের বাধা পেরিয়ে ম্যারাডোনা যেভাবে আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন, মেসির কাছেও ঠিক তেমন প্রত্যাশাই থাকবে আর্জেন্টিনার ভক্ত-সমর্থকদের। ১৯৮৬ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো লড়েছিল তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে। নিয়ম ছিল, প্রতিটি গ্রুপের সেরা দল সরাসরি চলে যাবে বিশ্বকাপে। আর এর পরের সেরা চারটি দলকে খেলতে হবে প্লেঅফ। সেখান থেকে মাত্র একটি দল সুযোগ পাবে বিশ্বকাপে খেলার। গ্রুপ পর্বের সেই লড়াইয়ের শেষ ম্যাচের আগপর্যন্তও অনিশ্চিত ছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ যাত্রা। পেরুর বিরুদ্ধে সেই শেষ ম্যাচে ২-২ গোলে ড্র করে কোনমতে সরাসরি বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছিল ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা। এরপর চূড়ান্ত আসরে ম্যারাডোনার নৈপুণ্য ও শিরোপা জয়ের কথা তো আজীবনই স্মরণীয় হয়ে থাকবে ফুটবল ইতিহাসে। এবার ম্যারাডোনার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি মেসিও তেমন কিছুই করে দেখাতে পারবেন কি না, সেটাই দেখার বিষয়। নিজেকে কিংবদন্তিদের কাতারে নিয়ে যাওয়ার জন্য আগামী বিশ্বকাপ শিরোপাটা যে খুব করেই দরকার মেসির। ২০১৪ সালেই নিজেকে অমরত্বের সুযোগ ছিল বার্সিলোনা ডায়মন্ডের। কিন্তু তীরে এসে তরী ডোবান তিনি। ফাইনালে আর্জেন্টিনা হেরে যায় জার্মানির কাছে। শুধু তাই নয়, পর পর দুই বছর দুটি কোপা আমেরিকার ফাইনালেও চিলির কাছে হেরে যায় মেসির দল। এবার কি করবেন মেসি? ইতিহাসের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি কি পারবেন আর্জেন্টিনাকে ২৮ বছরের প্রতিক্ষার শিরোপা উপহার দিতে? এদিকে প্রিয় বন্ধু মেসি বিশ্বকাপ খেলতে পারায় খুশি হয়েছেন নেইমার। মেসির সঙ্গে বার্সিলোনয় চার বছর খেলেছিলেন নেইমার। গত আগস্টে প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইনে যোগ দেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। এরপরও মেসির প্রতি ভালবাসা কমেনি নেইমারের। মেসিদের বিশ্বাকাপ নিশ্চিত হওয়ার পর সেলেসাও তারকা বলেন, ‘তার (মেসি) জন্য ভাল লাগছে। এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে আমার বন্ধুও অংশ নিচ্ছে, আমি তাতে খুশি।’
×