ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আজ সিরিজ হার এড়ানোর লড়াই মাশরাফি বাহিনীর

পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙ্গতে পারবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

পরাজয়ের বৃত্ত ভাঙ্গতে পারবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ ॥ উপমহাদেশের বাইরে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে গেলেই বাংলাদেশের বেহাল দশা হচ্ছে। এবারও তা থেকে বের হতে পারছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে গিয়ে তো অবস্থা কাহিল। হারেরও তো একটা অবস্থা থাকে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তো বারবার লজ্জার হারই হচ্ছে। পার্লের বোল্যান্ড পার্কে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ম্যাচটিতে হারলেই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে যাবে। আর জিতলে সিরিজে আসবে সমতা। কিন্তু যে খেলা দেখাচ্ছে বাংলাদেশ দল তাতে সিরিজে সমতা আনা খুব কষ্টকরই মনে হচ্ছে। ২০১০ সাল থেকেই বাংলাদেশের এমন কাহিল অবস্থার দেখা মিলছে। যখনই উপমহাদেশের বাইরে দ্বিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ তখনই বিপদে পড়েছে। প্রতিপক্ষ দল যেরকই থাকুক। কন্ডিশন যেরকই হোক। সিরিজ হার যেন নিয়তি হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (০-৩) সিরিজ হার দিয়ে শুরু হয়। এরপর একই বছর ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে (১-২), ২০১১ সালে জিম্বাবুইয়ের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে (২-৩), ২০১৩ সালে একই দলের বিপক্ষে (১-২), ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে (০-৩), গত বছর শেষদিকে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে (০-৩) সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। উপমহাদেশের বাইরে এতটাই খারাপ অবস্থা বাংলাদেশের, ২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ (১-১) খেলতে গিয়েও জেতা যায়নি। করুণ দশা বাংলাদেশের আগে থেকেই বিদ্যমান। কিন্তু এবার যেন সেই দশা ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। উপমহাদেশের বাইরে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বাদ দিলে বাংলাদেশ দুর্দান্ত সাফল্য অবশ্য পেয়েছে। বাংলাদেশ দল এই সময়ের মধ্যে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে। এ বছর ইংল্যান্ডে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনালে খেলেছে। এর বাইরে উপমহাদেশের মাটিতে বিশেষ করে নিজেদের মাটিতে সাফল্যও তো ঈর্ষণীয়। উপমহাদেশের বাইরে সিরিজ হার হলেও একটি, দুটি ওয়ানডে করে ঠিকই জিতেছে বাংলাদেশ। আর তাই বর্তমান সময়ে বাংলাদেশকে নিয়ে অনেক আশাও করা হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কঠিন কন্ডিশনে বাংলাদেশ খেলতে গেলেও জয়ের আশা করা হয়েছে। বা এখনও হচ্ছে। হাতে যে আরও দুটি ওয়ানডে আছে। বাংলাদেশ ওয়ানডেতে সাফল্যে ভাসতে থাকাতেই দলকে নিয়ে উচ্চাশা করা হয়েছে। কিন্তু সেই আশা হতাশাতেই এখন পর্যন্ত পরিণত হয়েছে। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইওয়াশ হওয়ার পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে এমন অবস্থাই হয়েছে, লজ্জা মিলেছে। রেকর্ড গড়ে জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ২৭৯ রানের টার্গেটে ১০ উইকেটে জিতে রেকর্ড গড়েছে। এত বেশি রানের টার্গেটে ১০ উইকেটে এর আগে কোন দল জিততে পারেনি। কি করুণ দশাই না হয়েছে বাংলাদেশের। বোলাররা এতটাই অসহায় হয়ে পড়েছেন একটি উইকেটও ফেলতে পারেননি। উইকেট ফেলার সুযোগ ছিল। কিন্তু একাধিক ক্যাচ মিস হয়েছে। এরপরও কী একটি উইকেট ফেলা গেল না! বোলারদের নির্জীব বোলিং নিয়ে বাংলাদেশ দলও আছে ভাবনায়। এ নিয়ে কোচিং স্টাফ, সিনিয়র ক্রিকেটাররা দফায় দফায় মিটিংও সেরেছেন। তাতে করে শেষ পর্যন্ত যদি সাফল্য মিলে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা কি আর দুর্বল দল। নিজেদের মাটিতে কতটা বিধ্বংসী তারা তা তো বুঝিয়েই দিয়েছে। এখন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের কাজ হচ্ছে হার হলেও যেন সম্মানজনক হার হয়। আর যদি জেতা যায় তাহলে তো কথাই নেই। সব লজ্জা, হারতে থাকার দুঃস্মৃতি দূর হয়ে যাবে। হতাশা দূর হয়ে আবার আত্মবিশ্বাসী মনোবল ফিরে আসবে। যে মনোবল ফিরে আসা এ মুহূর্তে খুবই জরুরী। না হলে যে সামনে দুটি ওয়ানডের পর দুটি টি২০ও আছে। সেই ম্যাচগুলোতেও বাজে অবস্থা হয়ে যেতে পারে। বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অবশ্য দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘যা যা করার আছে পরের ম্যাচে (দ্বিতীয় ওয়ানডেতে) সব করব। ফলাফল আমাদের পক্ষে আসছে না। সে কারণেই সবকিছু কঠিন হয়ে গেছে। আমাদের উচিত হবে ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখা।’ প্রথম ওয়ানডেতে আগে ব্যাট করে ২৭৯ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। এই লক্ষ্য নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জেতা এত সহজ হওয়ার কথা নয়। কিন্তু হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ বোলাররা যে নখদন্তহীন বোলিং করেছেন। তাই দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটসম্যানদের চাপেও ফেলা যায়নি। সাবলীল ব্যাটিং করেই জিতেছে প্রোটিয়ারা। মাশরাফি তাই প্রথম ওয়ানডের স্মৃতি থেকে মনে করেছেন ‘পুরো ইনিংসে আমাদের অন্তত পাঁচ থেকে ছয়টি উইকেট নেয়া উচিত ছিল। এটা করতে পারলে আমরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে চাপে ফেলতে পারতাম। কিন্তু আমাদের বোলাররা হতাশ হয়ে যাচ্ছিল। এই উইকেটে ২৮০ রান নিয়েও জেতা সম্ভব ছিল। যদি আমরা শুরুতে উইকেট নিতে পারতাম। দুইদিক থেকেই আমরা যদি চাপ তৈরি করতে পারতাম তাহলে হয়তো সম্ভব হতো। এসব উইকেটে যদি দুই পাশ থেকে পার্টনারশিপ বোলিং না করা যায় তাহলে উইকেট পাওয়া খুব কঠিন। তারপরও যা হয়েছে তা আমাদের একেবারেই ভাবনার বাইরে। আমরা একটা উইকেটও নিতে পারিনি এখানে।’ প্রথম ওয়ানডেতে যা হয়েছে তা নিয়ে বসে থেকে এখন আর লাভ নেই। আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নামতে হবে। এ ওয়ানডেতে না জেতা গেলে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে যাবে। যেভাবেই হোক বাংলাদেশ দল এখন জিততে মরিয়া। জিতলে তো দুর্দান্ত সাফল্যই মিলবে। আর তা না হলে উপমহাদেশের বাইরে সিরিজ হারের বৃত্তেই আটকে থাকবে বাংলাদেশ। এখন সাফল্যের সন্ধান মিলুক সেই আশাই করা হচ্ছে।
×