ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংঘর্ষ ভাংচুর আহত ৯ হলত্যাগের নির্দেশ

শিক্ষার্থী-কর্মচারী সংঘর্ষে তাজউদ্দীন মেডিক্যাল বন্ধ ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

শিক্ষার্থী-কর্মচারী সংঘর্ষে তাজউদ্দীন মেডিক্যাল বন্ধ ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের কর্মচারীদের মাঝে মঙ্গলবার সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করেছে। সংঘর্ষে ৫ শিক্ষার্থীসহ উভয় পক্ষের অন্ততঃ ৯ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে। এছাড়াও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আগের দিনের তুচ্ছ ঘটনায় ভাংচুর ও মারধরের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার জন্য শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা একে অপরকে দায়ী করেছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ ও স্থানীয়রা, গাজীপুর শহরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজের ৫ম বর্ষের ছাত্র জাহাঙ্গীর আলম তার মাকে এক্সরে করাতে সোমবার হাসপাতালের এক্সরে কক্ষে নিয়ে যায়। কিন্তু সাদা কাগজের স্লিপে কোন চিকিৎসকের স্বাক্ষর না থাকায় টেকনিশিয়ান মোফাজ্জল হোসেন খান চিকিৎসকের স্বাক্ষর নিয়ে পরদিন আসতে বলে। পরে ওই ছাত্র ফিরে গিয়ে সহপাঠীদের বিষয়টি জানায়। এতে অন্য শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়। পরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জোট বেঁধে মিছিলসহ হাসপাতালে হামলা চালিয়ে হাসপাতালের এক্সরে ও প্যাথলজি বিভাগের কক্ষসহ টিকিট কাউন্টারে হামলা চালিয়ে আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। এ সময় সেখানে উপস্থিত আউটসোর্সিং কর্মচারীরা বাধা দিলে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের বেধড়ক মারধরে কর্মচারী শাহীন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনার জেরে কয়েক শিক্ষার্থীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগে আউট সোর্সিংয়ের ঠিকাদার আমজাদ হোসেন পলাশসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল আলম সরকার মঙ্গলবার জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এদিকে সোমবারের ওই ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল হতে আউট সোর্সিংয়েরসহ হাসপাতালের কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করে। অপরদিকে মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরাও একদিন সকালে ক্লাস বর্জন করে। এ সময় তারা কলেজের অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখে এবং একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করতে থাকে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা এ সময় কলেজ ও হাসপাতালের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদ জানিয়ে আউট সোর্সিংয়ের ঠিকাদার ও দায়ী কর্মচারীদের শাস্তির দাবি জানায়। দু’পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও কর্মসূচীর কারণে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এ সময় কয়েক কর্মকর্তা ও শিক্ষক উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আসাদ হোসেন সকাল ৯টার দিকে ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বেলা ১২টায় তিনি বৈঠকে বসার জন্য কর্মচারীর কয়েকজন প্রতিনিধিকে আহ্বান জানান। কিন্তু বেলা পৌনে একটার দিকে বৈঠকে যোগ দেয়ার জন্য কর্মচারীরা দলবেঁধে মিছিলসহ কলেজ একাডেমিক ভবনে প্রবেশ করে। তারা ভবনের সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠার সময় দু’পক্ষের মুখোমুখি হয়। এ সময় কর্মচারীদের সঙ্গে থাকা আউট সোর্সিংয়ের ঠিকাদারকে মারধর শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এতে দু’পক্ষের মাঝে সংঘর্ষ বেধে যায়। এ সময় অধ্যক্ষের কক্ষসহ একাডেমিক ভবনের আসবাবপত্র ও দরজা জানালাসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে তারা। এতে হাসপাতালের রোগী ও অন্যদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়লে তারা দিগি¦দিক ছুটোছুটি শুরু করে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্ততঃ ৯ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজ নিয়াজ ও মোম্মদ উল্লাহ কাজল, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহরীন সেলী অর্পা, সীমান্ত সালেহীন ও কামাল আহমেদ এবং কর্মচারী রাজীব হোসেন, সজীব হোসেন ও ঠিকাদার আমজাদ হোসেন পলাশকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আসাদ হোসেন জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে কলেজ একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য মেডিক্যাল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে ফরম ফিলাপ ও ভর্তি কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।
×