ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

উত্তরা গণভবনের গাছ কাটা ॥ ২ কর্মকর্তাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

উত্তরা গণভবনের গাছ কাটা ॥ ২ কর্মকর্তাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, নাটোর ॥ নাটোরের উত্তরা গণভবনের ভিতরে ঝড়ে পড়া এবং মরা গাছের নামে লক্ষ লক্ষ টাকার শতবছরের তাজা গাছ কাটার অভিযোগে গণপূর্ত বিভাগের দুইজন কর্মকর্তাসহ ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বুধবার গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। বৈঠকের আগে জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন, গণপূর্ত বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান, গণপূর্ত বিভাগ নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান আকন্দ, নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদারসহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা সরজমিনে কাটা গাছগুলো প্রত্যক্ষ করেন। এছাড়া সিসিটিভির ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করা হয়। পরে সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে মামলা দায়েরের এই সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। যাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তারা হলেন, গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জিয়াউর রহমান, এসও কামরুজ্জামান, কেয়ারটেকার আবুল কাসেম ও আব্দুস সবুর তালুকদার। জেলা প্রশাসন ও গণভবন সংশিষ্ট সুত্র জানায়, উত্তরা গণভবনের চারপাশের লেকের ধারে শতবছরের অন্তত তিন’শ প্রজাতির আম গাছ রয়েছে। এছাড়া মেহগনি, নারিকেল, কাঠ বাদামসহ আরো পাঁচ শতাধিক গাছ রয়েছে লেকের ধারে। সম্প্রতি ঝড়ে এবং মরে যাওয়া দুটি আম, একটি মেহগনিসহ বেশ কিছু গাছের ডালপালার ইজারা আহবান করে স্থানীয় গনপুর্ত বিভাগ। পরে বনবিভাগের কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহ সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে ওই কয়েকটি গাছ এবং ডালপালার মূল্য নির্ধারণ করে মাত্র ১৮হাজার ৪’শ টাকা। পরে পরে সবোর্চ্চ দরদাতা হিসেবে স্থানীয় যুবলীগের সোহেল ফয়সাল নামের এক ঠিকাদার ১৮হাজার ৪'শ টাকার বিনিময়ে গাছগুলো ক্রয় করেন। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে গণপূর্ত বিভাগের কিছু অসাধূ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সহযোগিতায় টেন্ডার নেওয়া গাছের পাশাপাশি আরো ১২ থেকে ১৫টি তাজা গাছ কর্তন করেছেন। যার আনুমানিক মূল্য অন্তত ১০ থেকে ১২লাখ টাকা। ইতোমধ্যে বেশির ভাগ গাছের গুড়ি ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্যত্র। সরেজমিনে গণভবনের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, জনমানবশুন্য গহিন জঙ্গলের ভিতরে দেদারসে কাটা হয়েছে শতবছরের বেশ কয়েকটি আম গাছ। বর্তমানে গনভবনের ভিতরে এখনও পড়ে রয়েছে বড় বড় এসব গাছের গুড়ি। সম্প্রতি গাছ কাটা শেষে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ভ্যানে করে বেশ কিছু গাছ গণভবনের বাহিরে নিয়ে গেছে। যেটা সিসি টিভি ক্যামেরায় রেকর্ড করা হয়েছে। গনভবনের দেখভালের দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের কর্মচারী সুজন পাল বলেন, গনপুর্ত বিভাগ শুধু উত্তরা গণভবনের বিল্ডিংগুলোর দায়িত্বে থাকলেও তারা অন্যায় ভাবে গাছগুলো দরপত্র দিয়েছে। তাছাড়া মরা এবং ঝরে পড়ার নামে গাছগুলো কাটার অনুমতি দিলেও ঠিকাদার শতবছরের তাজা সব গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত অন্তত ১২ থেকে ১৫টি তাজা গাছ কাটা হয়েছে। পরে নেজারত ডেপুটি কালেকক্টরের অনিন্দ মন্ডল সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে বাকি গাছের গুড়ি গুলো নিয়ে যেতে বাধা দিয়েছেন। স্থানীয় পরিবেশবাদী সংগঠনের বেশ কয়েকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঝরে পড়া এবং মরা গাছের নামে কাটা হয়েছে লাখ লাখ টাকার ১৬রকমের অন্তত ১২ থেকে ১৫টি তাজা গাছ। আর এ কাজে সহযোগিতা করেছে গনপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা, গণবভনের তত্ত্বাবধায়ক আবুল কাশেম, আব্দুস সবুর তালকুদার, বনবিভাগ কর্মকর্তা আবু আব্দুল্লাহসহ সরকারী দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তারা। অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা। তবে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সোহেল ফয়সাল বলেন, তিনি দরপত্রের কার্যাদেশ অনুযায়ী গাছকাটা হয়েছে। কোন তাজা বা দরপত্রের বাহিরে গাছ কাটা হয়নি। উত্তরা গণভবনের কেয়ারটেকার আবুল কাশেম বলেন, ঝরে বা মরে যাওয়া গাছের সংখ্যা উল্লেখ করে আমরা আমাদের বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দিই। পরে সেখান থেকে কর্মকর্তারা সরেজমিনে দেখে গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দরপত্রের মাধ্যমে কার্যাদেশ দিয়ে থাকেন। আর কার্যাদেশ কপির আদেশ হাতে পাওয়ার পর আমরা ঠিকাদারকে গাছ কেটে নিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছি। গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মশিউর রহমান আকন্দ বলেন, স্থানীয় বনবিভাগের কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠিয়ে গণভবনের ভিতরে ঝরে এবং মরে যাওয়া গাছের মূল্য নির্ধারণের জন্য বলা হয়। পরে বনকর্মকর্তা গাছের মূল্য নির্ধারণের পর আমরা দরপত্রের মাধ্যমে গাছ কর্তনের অনুমতি দিয়েছি। তবে বুধবার গণভবন ব্যাবস্থাপনা কমিটির সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গণপূর্ত বিভাগের রাজশাহী বিভাগীয় তত্বা প্রকৌবধায়ক প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান জানান, তাকে সরজমিনে পরিদর্শন করে গণপূর্ত বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বরাবর রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তিনি লিখিতভাবেই রিপোর্ট দাখিল করবেন। নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহিনা খাতুন বলেন, পদাধিকার বলে আমি উত্তরা গণভবন ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। কিন্তু গণভবনের ভিতরে গাছ কাটার টেন্ডার দেয়ার বিষয়ে গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে অবগত করেননি। পরে আমি খবর পেয়ে ম্যাজিষ্ট্রেট পাঠিয়ে গাছকাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। পরে আজ (বুধবার) আমি নিজে সহ গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা এবং গণভবন ব্যভস্থাপনা কমিটির সদস্যরা সরজমিনে পরিদর্শন করি। এরপর গাছ কাটার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেও বক্তব্য সিসিটিভিতে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে গণপূর্ত বিভাগের ২জন কর্মকর্তা সহ ৪জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। যত দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামলা দায়ের করা হচ্ছে।
×