ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মহত্যা করেছিলেন মালদ্বীপের মডেল কন্যা রাউধা

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

আত্মহত্যা করেছিলেন মালদ্বীপের মডেল কন্যা রাউধা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজে পড়তে আসা মালদ্বীপের মডেল কন্যা রাউধা আথিফকে হত্যা করা হয়নি, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহীর আদালতে এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এর আগে দু’দফার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও বলা হয়েছিল মালদ্বীপের এই মডেল আত্মহত্যা করেছিলেন। রাজশাহী মহানগর জজ আদালতের পরিদর্শক আবুল হাশেম জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আসমাউল হক সোমবার সন্ধ্যায় তাদের কাছে মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মঙ্গলবার দুপুরে তারা সেটি রাজশাহীর মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত-১ এ উপস্থাপন করেন। আবুল হাশেম জানান, মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদনে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি। রাউধাকে হত্যা করা হয়েছিল, এমনটিও বলা হয়নি। তাই বাদীপক্ষের আইনজীবী এই প্রতিবেদনে নারাজি দিতে চান। এ জন্য তিনি বিচারক মাহবুবুর রহমানের কাছে সময় প্রার্থনা করেছেন। তবে এ বিষয়ে আদালত এখনও কোনো আদেশ দেননি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (সিআইডি পরিদর্শক) আসমাউল হক জানান, দুই দফার ময়নাতদন্ত, ভিসেরা ও মুঠোফোন পরীক্ষার পর নিশ্চিত হওয়া গেছে, রাউধা আত্মহত্যাই করেছিলেন। এরপরই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। তদন্ত শেষে এবং প্রতিবেদন দাখিলের আগে এ বিষয়টি রাউধার বাবাকেও অবহিত করা হয়েছে। আসমাউল হক জানান, প্রেমে ব্যর্থ হয়েই রাউধা আত্মহত্যা করেছিলেন। মালদ্বীপের শাহী গণি নামে এক যুবকের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই যুবক পড়াশোনার জন্য লন্ডনে থাকেন। রাউধার মোবাইলে হটসঅ্যাপ থেকে জানা গেছে, শাহীর সঙ্গে রাউধার সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। এ নিয়ে প্রচন্ড রকমের মানসিক চাপে ছিলেন রাউধা। আত্মহত্যার আগের রাতেও শাহীর সঙ্গে রাউধার কথা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৯ মার্চ রাজশাহীর নওদাপাড়ায় অবস্থিত ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীনিবাস থেকে রাউধা আথিফের (২২) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ওই কলেজের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মালদ্বীপের নীলনয়না মেয়ে রাউধা বাংলাদেশে এসেছিলেন পড়তে। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি মডেলিং করতেন। রাউধার মৃত্যুর দিনই কলেজ কর্তৃপক্ষ শাহমখদুম থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করে। রাউধার লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাজশাহীতে দাফন করা হয়। ওই সময় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, রাউধা গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। এরপর মালদ্বীপরে দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহীতে গিয়ে ঘটনা তদন্ত করেন। এদিকে রাউধার মৃত্যুর ঘটনায় কলেজের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সে কমিটিও তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তবে রাউধার বাবা মোহাম্মদ আথিফ এসব প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে গত ১০ এপ্রিল তিনি রাজশাহীর আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় রাউধার সহপাঠী ভারতের কাশ্মিরের মেয়ে সিরাত পারভীন মাহমুদকে (২১) একমাত্র আসামি করা হয়। কিন্তু সিরাতকে গ্রেফতার করা হয়নি। তবে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। গত ১৪ এপ্রিল হত্যা মামলাটি শাহমখদুম থানা থেকে সিআইডিতে হস্তান্তর করা হয়। এরপর কবর থেকে লাশ তুলে দ্বিতীয়বারের মতো রাউধার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। সে প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। তবে রাউধার বাবা মোহাম্মদ আথিফ এখনও দাবি করে আসছেন, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর থেকে তিনি রাজশাহীতেই অবস্থান করছেন। কনকলতা নামে রাজশাহীর এক নারীকে তিনি বিয়েও করেছেন। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশন চ্যানেল ‘নাইনের’ একটি দল রাজশাহীতে এসে রাউধাকে নিয়ে একটি প্রমান্যচিত্র নির্মাণ করেছে।
×