ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ সিকদার

শান্তির জননী শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

শান্তির জননী শেখ হাসিনা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা শান্তির জননী হিসেবে দেশে এবং বহির্বিশ্বে এক বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন। আমরা সকলেই জানি যে, স্বল্প আয়তনের এই বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষ বাস করে। তার ওপরে ১৯৭৮ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে আরাকান রাজ্য থেকে (তৎকালীন বার্মা) বর্তমানে মিয়ানমার সরকার এবং সেনা বাহিনীর নির্যাতনের কারণে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে এখনও আমাদের প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য, সেখানে আজকে নতুন করে এসেছে ৫ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের আশ্রয় দেয়া আসলে বাংলাদেশের জন্য একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জলকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন, শান্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্পূর্ণ একটি মানবিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়াবে এই চিরন্তন সত্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নতুন করে আশ্রয় দিয়েছেন। এ আশ্রয় একেবারে বাধ্য হয়েই মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দিতে হয়েছে। কিন্তু এটি রাজনৈতিকভাবে এবং জঙ্গীবাদ সম্প্রসারণ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে একটি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। কিন্তু সে কাজটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব নিয়ে, মায়ের মমতা দিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছেন। যত রোহিঙ্গা এসেছে এদের অধিকাংশই শিশু এবং নারী। তারা অনেকেই কর্মক্ষম নয়। এমনিতেই জনসংখ্যার ভারে আমাদের অনেক মানুষ বেকার বসে আছে। সেখানে আবার নতুন করে এতগুলো মানুষকে আশ্রয় দেয়া, লালন-পালন করা, খাদ্য এবং বস্ত্র দেয়Ñ সামগ্রিকভাবে একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। এ কাজে আর্থিক বিষয় তো রয়েছেই, এ ছাড়া স্বাস্থ্য ঝুঁকিও রয়েছে। রোহিঙ্গারা যেখানে বসবাস করে, আরাকান রাজ্যে ম্যালেরিয়া থেকে শুরু করে এইডস রোগ পর্যন্ত আছে। এ ছাড়া আরও অনেক সংক্রামক ব্যাধি তাদের আছে। তারা যখন বাংলাদেশের মতো একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশে নতুন করে বাস করবে, তখন স্বাস্থ্যের একটি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করবে। যা গোটা দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ রোগ-ব্যাধি দেশে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। এই ঝুঁকিও নিতে হয়েছে। যদিও ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ কক্সবাজারের সিভিল সার্জন থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিকিৎসককে সেখানে পাঠানো হয়েছে। টিকা দেয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রকার রোগ শনাক্ত করতে পারে এবং চিকিৎসা করতে পারে এ ধরনের জনশক্তি সেখানে নিযুক্ত করা হয়েছে। তারপরেও আমরা বলব, এই রোগগুলো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি জেনেও প্রধানমন্ত্রী ঝুঁকি নিয়েছেন এবং সেখানে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এটি একমাত্র বঙ্গবন্ধু কন্যার পক্ষেই সম্ভব। বঙ্গবন্ধু উপলব্ধিতে এনেছিলেন যে, সাড়ে ৭ কোটি বাঙালীর জন্য নতুন একটি রাষ্ট্র গঠন ছাড়া বিকল্প নেই। তেমনি আজকে যাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, যুবক এবং তরুণদের হত্যা এবং নির্যাতন করা হচ্ছে, শিশুদের পর্যন্ত হত্যা করা এবং নির্যাতন করা হচ্ছে এবং তাদের দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে শুধু জাতিগত সঙ্কটের কারণে, তাদের আশ্রয় দেয়া হচ্ছে আমাদের দেশে। সেই বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী, যার মন বঙ্গবন্ধুর মতোই, তিনি উপলব্ধি করেছেন। এই সঙ্কটের মুহূর্তে চোখ বন্ধ করে থাকলে মানবিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের আর কোন বিকল্প থাকবে না। এ কারণেই তিনি এগিয়ে এসেছেন উদারহস্তে, এগিয়ে এসেছেন নেতৃত্বের ভূমিকায়। তিনি আজকে শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, দক্ষিণ এশিয়ার নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের নেত্রী। সারাবিশ্বে তিনি বিরল উদাহরণ তৈরি করেছেন। কিভাবে নিজে সীমিত সম্পদের মাঝেও বিদেশী উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দিতে হয়, লালন-পালন করতে হয় এবং চিকিৎসা দিতে হয়, সেটা তিনি দেখিয়েছেন। যেখানে অনেক উন্নত দেশ পর্যন্ত উদ্বাস্তুদের নিজের দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না, সেখানে বাংলাদেশ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক ফোরামে বিশেষ করে জাতিসংঘে তিনি বিষয়টি অত্যন্ত জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন এবং একজন বিশ্ব নেতার ভূমিকা পালন করেছেন জাতিসংঘে ভাষণের মাধ্যমে। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘে তিনি ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অনতিবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করাসহ রোহিঙ্গাদের সম্মানের সঙ্গে সেদেশে ফিরিয়ে নিয়ে পুনর্বাসন নিশ্চিত করার কথা। সে জন্য আন্তর্জাতিক মহলকে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। এটা শুধু যথার্থ বললে ভুল হবে। আজকের দিনে সারাবিশ্বে যদি কোন মানবিক আবেদন থাকে, রাজনৈতিক সঙ্কট মোচনের সবচাইতে বলিষ্ঠ কণ্ঠ থাকে, আমরা বলব জননেত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে তাঁর ভাষণে সেটি উল্লেখ করেছেন। আজকের দুনিয়ায় সবচাইতে যথোপযুক্ত মানবিক কর্মসূচী, যেটি মানবিক বিপর্যয় থেকে লাখ লাখ মানুষকে রক্ষা করবে এবং উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে, যেন বিশ্বের অন্য কোন কোথাও জাতিগত সহিংসতা না হয়। শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চির দেশে আজকে রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হচ্ছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষগুলোর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, তাদের বুকে তুলে নিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে গিয়ে তিনি কক্সবাজারে চোখের পানি ফেলেছেন। তিনি যে কতটা মানবিক, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের জন্য দেশের ভিতরে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন শান্তির জননী শেখ হাসিনা। তাই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার তাঁরই প্রাপ্য। প্রধানমন্ত্রী আজকে শুধু বাংলাদেশের নেত্রী নন, তিনি বিশ্বের নেত্রী। তিনি উন্নয়ন, সন্ত্রাস দমন, অসাম্প্রদায়িক দেশ বিনির্মাণের ক্ষেত্রে যেমন দৃঢ়ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মানবতার পক্ষে দাঁড়িয়ে, সংঘাতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মানবিক আহ্বান নিয়ে। শান্তির জননী হিসেবে আজকে তিনি দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে অবস্থান নিয়েছেন, সেটি আমাদের দেশের জন্য যেমন শিক্ষণীয়, ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রে একটি শ্রেষ্ঠ মানবিক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। বিশ্ব দরবারে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উদাহরণ তৈরি করে যাচ্ছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে, শিশুমৃত্যুর ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে, গড় আয়ু বাড়িয়ে, শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নয়নের মাধ্যমে এবং ক্রমবর্ধমান জিডিপি অব্যাহত রেখে। বাংলাদেশের উদাহরণ সারা বিশ্বের শান্তিকামী মানুষদের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। প্রত্যাশা করি, আমাদের প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘায়ু হবেন। তিনি বাংলাদেশকে যেমন সঠিক পথে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন, তেমনি বিশ্ব মানবতা এবং শান্তির পক্ষেও তিনি নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবেন। বিশ্বে একজন অনন্য মানবিক গুণসম্পন্ন শান্তির পক্ষের নেতা হিসেবে তিনি যে উদাহরণ রেখেছেন, তা অব্যাহত রাখবেন। তাঁর হাতে সবসময় শান্তির পতাকা থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর হাতে শান্তির পতাকা দেখে উৎসাহিত হবেন। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছেন। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নপূরণের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সে লক্ষ্য পূরণে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালী জাতি সফল হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস রাখি। শান্তির জননী শেখ হাসিনার জয় হবে সুনিশ্চিত। তিনি বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তির প্রতীক হয়ে থাকবেন। বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত মানুষের পক্ষ থেকে তাঁকে হাজার সালাম। লেখক : প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×