ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমি শুধু সন্তানদের জন্যই বেঁচে আছি’

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

‘আমি শুধু সন্তানদের জন্যই বেঁচে আছি’

ইরাকের শিয়া তুর্কমেন সম্প্রদায়ের একজন নারীর বর্ণনায় উঠে এসেছে কথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএসের নৃশংসতার বিবরণ। জঙ্গীদের হাতে আটক থাকার সময়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি বিবিসি তুর্কী সার্ভিসের মাহমুত হামসিসির কাছে : ‘বড় বোন, দয়া করে সাহায্য করুন, আমাদের বাঁচান’- এমন আকুতি করছিল মেয়েগুলো। আমি আমার শরীর দিয়ে মেয়েদের ঢাকার চেষ্টা করছিলাম। আমি লোকগুলোকে অনুরোধ করে বললাম, কোরানের শপথ করে বলছি ওরা ভার্জিন নয়। আমি আল্লাহর নামে তোমাদের কাছে ভিক্ষা চাই, দয়া করে এটা করোনা তোমরা। ক্ষুব্ধ হয়ে একজন এসে আমাকে আঘাত করল আর আরেকজন আমার কাঁধে কামড় বসিয়ে দিল। তারা আমার সৎকন্যাকে ধর্ষণ করল, যার বয়স মাত্র ১৮ বছর। পরে মেয়েটি মারাই গেল। অন্য যেসব মেয়েকে ওরা ধর্ষণ করল তাদের সবার বয়স ছিল বিশের ঘরে। লোকগুলো ওদের ধর্ষণ করছিল আবার একই সময় প্রহার করছিল। ব্যাপক রক্তক্ষরণ হচ্ছিল মেয়েদের। একের পর এক ওরাও মারা গেল। আমি ধর্ষকদের মুখগুলোকে দেখছিলাম এবং এক সময় বুঝলাম যে, অন্তত দুজনকে আমি চিনেছি। তারা আল আলমের কাছের একটি সুন্নি আরব গ্রাম থেকে এসেছে। সেখান থেকে ওদের মতো আরও অনেকেই আইএসের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল আবার অনেক সুন্নি আরবই আইএসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছিল। যাই হোক পরে তারা সবাইকে একটি গ্যারাজে ফেলে গেল, যার তত্ত্বাবধানে ছিল একজন বয়স্ক ব্যক্তি। আমি আমার দুই বাচ্চা আর একজন তুর্কমেন নারী শিক্ষক ও তার বাচ্চা একসঙ্গেই ছিলাম। পরে একদিন তত্ত্বাবধায়ক বয়স্ক ব্যক্তিটি আমাদের পালানোর পরামর্শ দিলেন এবং আমাদের রাস্তা দেখিয়ে তিনি গ্যারেজে ফিরে গেলেন। আমরা মরুভূমির পথ ধরলাম। বৃষ্টি হচ্ছিল অনেক। পর্যাপ্ত জামাকাপড় ছিল না। খাবার ছিল না। শিক্ষিকার বাচ্চাটি আমার হাতেই মারা গেল। পাঁচ দিন পর কিরকুকের মাকতাব খালিদ এলাকায় পৌঁছলাম এবং শহরে এসে এক খালার বাসায় অবস্থান নিলাম। পরে আমার স্বামীর খোঁজ করলাম কিন্তু পেলাম না। এ মুহূর্তে আমি শুধু সন্তানদের জন্যই বেঁচে আছি। আইএসের হাতে আটক থাকার সময়ের দুঃসহ ঘটনার বর্ণনা দেয়া এ নারী ইরাকের শিয়া তুর্কমেন গোত্রের সদস্য। মূলত আইএসের সঙ্গে জড়িত সুন্নি জিহাদীদের একটি গ্রুপের হাতে বন্দী ছিলেন তিনি। আইএস আসার আগে তিকরিতের আল আলম জেলায় বাস করতেন তারা। নিজে শিয়া তুর্কমেন গোত্রের হলেও স্বামী ছিলেন সুন্নি আরব গোত্রের একজন ইমাম। নিজেদের সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বেশ মান্যগণ্যও করত বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, শিয়া ও সুন্নি আলাদা কিছু এটা আমরা কখনই ওভাবে ভাবিনি। কে কোন্ গোত্রের তাও আমরা অনেকেই জানতাম না। কেউ আমাদের মধ্যে এসব নিয়ে কথাও বলত না। কোন ধরনের হিংসা-বিদ্বেষও ছিল না। -বিবিসি
×