ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিরকুকের ‘বড় অংশের’ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি ইরাকী বাহিনীর

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ১৭ অক্টোবর ২০১৭

কিরকুকের ‘বড় অংশের’ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দাবি ইরাকী বাহিনীর

কুর্দীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা দক্ষিণের তেলখনিগুলোসহ কিরকুক শহরের ‘বড় অংশ’ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে ইরাকের সরকারী বাহিনী। সোমবার সকালে দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এই দাবি করা হয়। অপরদিকে কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক সরকার (কেআরজি) কিরকুকে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা হাতছাড়া হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে। খবর বিবিসির। ইরাকের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল আবাদি সরকারী বাহিনীকে সাধারণ জনগণ ও কুর্দী পেশমেরগা বাহিনীর সহযোগিতা নিয়ে কিরকুকে নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রশিক্ষিত অভিজাত ‘কাউন্টার টেররিজম সার্ভিস, নাইন্থ আর্মারড ডিভিশন ও ফেডারেল পুলিশ’ যুদ্ধ ছাড়াই কিরকুকের তেলখনি ও কুর্দীদের সামরিক স্থাপনাসহ বড় অংশের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। কেআরজির এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এই দাবি অস্বীকার করে বলেছেন, ইরাকী বাহিনী কুর্দি নিয়ন্ত্রিত শহরের কাছাকাছিই আসেনি। কিরকুকের দক্ষিণে থাকা তেলখনিগুলো ও বিমান ঘাঁটি এখনও পেশমেরগা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে আছে। শহরটির বাসিন্দারাও জানান, সোমবার পর্যন্ত তারা ইরাকী বাহিনীকে ধারে কাছে দেখেননি। শহরটি এখনও কুর্দী আসাইশ পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। তবে সোমবার সকালে শহরটির মধ্যে তরুণ কুর্দী যোদ্ধাদের রাইফেল হাতে ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গীগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কাছে ইরাকী বাহিনীর পরাজয়ের মুখে ২০১৪ সালে কুর্দিস্তানের কাছের তেলখনিগুলোর সুরক্ষায় কিরকুকে অবস্থান নেয় কুর্দী বাহিনী। তখন থেকেই তারা শিয়া অধ্যুষিত শহরটির নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে। গত মাসে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় গণভোট করে কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক সরকার। এরপর থেকেই বাগদাদের সঙ্গে তাদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় এলেও ওই ভোটকে অবৈধ দাবি করে বাগদাদের কেন্দ্রীয় সরকার। কুর্দিস্তানে বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞাসহ নানান ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও আরোপ করে। তখন থেকেই কিরকুকের তেলখনিগুলো কাদের নিয়ন্ত্রণে থাকবে তা নিয়ে হিসাব-নিকাশ শুরু হয়। গত সপ্তাহে ইরাকী বাহিনী ও কুর্দী পেশমেরগা যোদ্ধারা শহরটিতে নিজ নিজ পক্ষের শক্তি বৃদ্ধি করে। সঙ্কট সমাধানে দুই পক্ষ রবিবার আলোচনায় বসেছিল। কিন্তু বাগদাদের চাওয়া অনুযায়ী কেআরজির নেতারা গণভোটের ফল প্রত্যাখ্যান করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর সেই আলোচনা ভেস্তে যায়। এরপরই শিয়া মিলিশিয়াদের নিয়ে ইরাকী বাহিনী কিরকুকের দক্ষিণে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। সেখানেই কুর্দী পেশমেরগা বাহিনীর সঙ্গে সরকার সমর্থিত শিয়া আধাসামরিক বাহিনী ‘পপুলার মোবিলাইজেশন’-এর গোলা বিনিময় হয় বলে এক কুর্দী কর্মকর্তা জানান। পেশমেরগা বাহিনী পপুলার মোবিলাইজেশনের দুটি হামলা ফিরিয়ে দিয়েছে ও তাদের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি হাম্বি সামরিক যান ধ্বংস করে দিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। পরে কেআরজি নেতা মাসুদ বারজানির উপদেষ্টা হেমিন হারমানি টুইটারে জানান, তাদের বাহিনী দক্ষিণ কিরকুকের বিমান ঘাঁটির ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ ধরে রেখেছে। হারমানি বলেন, কুর্দী বাহিনী সামরিক বিকল্পের কথা ভাবছে না, তবে শহরের নিয়ন্ত্রণ রক্ষায় তারা প্রস্তুত। এদিকে কিরকুক থেকে ৫০ মাইল দক্ষিণের শহর তাজ খোরমাতুতে কুর্দী বাহিনী ও শিয়া তুর্কমান গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেলেও হতাহতের সংখ্যা জানা যায়নি। এর আগে বাগদাদ অভিযোগ করেছিল, কুর্দিস্তানের আঞ্চলিক সরকার কিরকুকে বিদেশী বিশেষ করে তুরস্কের পিকেকে যোদ্ধাদের মোতায়েন করেছে, যা যুদ্ধ ঘোষণার সামিল। কেআরজি এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
×