ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুপপুর পরমাণু কেন্দ্র এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের নামে ২৮ কোটি টাকা লোপাট

প্রকাশিত: ০০:২৮, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

রুপপুর পরমাণু কেন্দ্র এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের নামে ২৮ কোটি টাকা লোপাট

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ নির্মানাধীন রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের পাকশী পদ্মা চরের ৯৯০ একর খাস জমিতে আবাদকারী কৃষকদের ক্ষতি পুরণের নামে প্রায় ২৮ কোটি টাকা লোপাটের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ভ’মি মন্ত্রনালয় থেকে করে দেওয়া নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে অকৃষকদের কৃষক দেখিয়ে ৭৭৫ জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা চুড়ান্ত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকায় নাম অন্তর্ভূক্ত করতে চেয়ারম্যান-কয়েকজন মেম্বরর নির্দিষ্টহারে কমিশনের অগ্রিম টাকা নিয়েছেন। এসব কারণে রুপপুরসহ পাকশী ইউনিয়ন ব্যাপি প্রকৃত কৃষকদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে এলাকাব্যাপি। অনিয়মের মাধ্যমে তৈরী করা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা বাতিল ,সরকারী টাকা তসরুপ করা বন্ধ ও তদন্তের দাবি উঠেছে এলাকাব্যাপি । একইসাথে অনিয়মের সাথে জড়িতদের শাস্তিরও দাবি করা হয়েছে। পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল ইসলাম,সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবু মন্ডল,উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি এম রশিদ উল্লাহ,কৃষক মুক্তি,আওয়ামীলীগ নেতা জহুরুল ইসলাম মালিথা, ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস,ইউএনও নাসরিন আক্তার,কৃষি অফিসার রওশোনুজ্জামান , রুপপুর পরমাণু প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস ও দুদকে অভিযোগকারী কৃষক জুবায়ের বিশ্বাসের দেওয়া তথ্যসূত্রে এসব জানাগেছে। সূত্রমতে, রুপপুর পরমাণু প্রকল্পের জন্য চররুপপুর,পূর্ববাহিরচর ও দিয়াড় রুপপুর মৌজার ১৯০ একর এবং রুপপুর কণিকা মৌজার ৮০০ একর মিলে মোট ৯৯০ একর জমি সরকার বরাদ্দ দেয় । বরাদ্দকৃত মোট জমির অর্ধেকই ধুধু বালুচর। পদ্মার এই চরে বছরে ৪/৫ মাস পানি ভর্তি থাকায় কোন প্রকার চাষাবাদ হয়না। অথচ ক্ষতিপুরণ দেওয়ার জন্য ৭৭৫ জন ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকা তৈরী করা হয়েছে। ১৯০ একর জমির অনুকুলে ১৫০ জন ব্যক্তির নাম ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের নামের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এদের জন্য ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৯ হাজার ৮৫০ টাকা। অপরদিকে রুপপুর কণিকা মৌজার ৮০০ একর জমির অনুকুলে ৬২৫ জন ব্যক্তির নাম ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের নামের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এদের জন্য ক্ষতিপূরণ ধরা হয়েছে ২৪ কোটি ৫৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৪০ টাকা। অর্থাৎ ৯৯০ একর জমির অনুকুলে ৭৭৫ জন ব্যক্তির নাম ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে মোট ক্ষতিপুরণ ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার৯৯০ টাকা। এই টাকা লোপাটের জন্য কমিশন গ্রহনের মাধ্যমে বেশীরভাগ অকৃষকদের নাম তালিকা ভুক্ত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও ফসলের তালিকায় দেখানো হয়েছে শত শত বিঘা জমিতে পেঁপে ও কলার আবাদ করা হতো তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভূঁয়া। একই ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে একাধিকবার নিজের নামে ক্ষতিপুরণের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে তারা কৃষক না এবং ক্ষতিগ্রস্থও হয়নি। জনৈক আব্দুল্লা আল বাকি নামের ব্যক্তির নামে তালিকার ক্রমিক নং-১০০,১২১৫,৫৫৮ ও ৬১৯ তে মোট ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৫২০ টাকা ক্ষতিপুরণ ধরা হয়েছে। মৃত কেরুর ছেলে আদম আলীর নামের ক্রমিক নং-৫৪৭ ও ৫৯৫ তে মোট ৩৫ লাখ ৪ হাজার টাকা এবং রহমান সরদারের ছেলে মন্টু সরদারের নামের ক্রমিক নং-৪৩১ ও ৫১০ তে মোট ৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ক্ষতিপুরণ ধরা হয়েছে। বরাদ্দকৃত জমিতেসরকার ফসলের ক্ষতি পুরণের ঘোষণা দিলে প্রথমে যে তালিকা তৈরী করা হয়েছিল ,পরে সে তালিকা বাদ দিয়ে নতুন তালিকা তৈরী করে কোটি কোটি টাকা লোপাট করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল ইসলাম বলেন,যে ব্যক্তি জীবণে চরে যাইনি তার নামও তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তালিকা প্রস্তুতে শতভাগ ভেজাল থাকায় আমি সম্পৃক্ত হয়নি এবং আমাকে ঐ কাজের জন্য ডাকাও হয়নি। পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য সাইফুল ইসলাম বাবু মন্ডল বলেন,যারা প্রকৃত কৃষকরা ক্ষতিপুরণ পাক এটা আমি চাই। উপজেলা আওয়ামীলীগের সহসভাপতি এম রশিদ উল্লাহ বলেন,নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। দু’চারটি ভঁয়া কৃষকের নাম থাকতেই পারে,বাকিসব জেনুইন। পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক জহুরুল ইসলাম মালিথা বলেন,এলাকার ২/৪ জন চরে আবাদ করতো। ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস ও কয়েকজন মেম্বররা নিজেদের লোকজনের নামে তালিকা করেছেন। টাকা নিয়ে ভূঁয়া কৃষকের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।বরাদ্দকৃত টাকা লোপাটের জন্য। তালিকা প্রস্তুতের সময় জালিয়াতি করার জন্য লক্ষিকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান শরীফের সাথে পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাসের সাথে একাধিকবার মতানৈক্য হয়েছে। তিনি সকল বিষয়ের তদন্ত করার দাবি করেন। ঈশ্বরদীর ইউএনও নাছরিন আক্তার বলেন,ভুমি মন্ত্রনালয় থেকে দেওয়া নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে তালিকা তৈরী করা হয়েছে। রুপপুর পরমাণু প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস বলেন,থানা প্রশাসনের উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত আছি। কৃষক মুক্তি বলেন, বরাদ্দকৃত জমির মধ্যে আমার ৫০ বিঘা জমি আছে। যে জমির এসএ রেকর্ড হয়েছে কিন্তু আরএস রেকর্ড হয়নি।াামিসহ এলাকাবাসী ১৯০ জমির মালিকানা দাবি করে ৮/১০ বছর আগে হাইকোর্টে রিটমামলা করেছি। (নং-৭৩৭৩/১০)। পাকশী ইউপি চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস বলেন,অভিযোগ সঠিক না। মন্ত্রনালয় থেকে দেওয়া তালিকা অনুযায়ী গঠিত কমিটি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও ক্ষতিপুরণের তালিকা তৈরী করেছে। দুদক পাবনার ডিডি আবুবক্কর বলেন,কৃষকনা এমনসব ব্যক্তির নাম ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকের নাম অন্তর্ভুক্ত করা,ভুয়া কৃষক ও ফসলের তালিকা বাতিল এবং ভুয়া তালিকা প্রস্তুতকারী ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এক ব্যক্তি আবেদন করেছেন। আবেদনটি তদন্তের অনুমতি প্রাপ্তির জন্য ঢাকা প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
×