ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

চা রফতানিতে রেকর্ড আয়

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

চা রফতানিতে রেকর্ড আয়

বাংলাদেশে চা শিল্পের বয়স ১৭৮ বছর। এ সু-দীর্ঘ সময়ে দেশের মানচিত্র বদলেছে দুইবার। তার মাঝেও এ শিল্পের অগ্রযাত্রা থামেনি। অমিত সম্ভাবনার অনুপাতে এই শিল্পের অর্জনও কিন্তু কম নয়। আমাদের দেশে সর্ব প্রথম চা বাগান করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল ১৮২৮ সালে। অবিভক্ত ভারতের চট্টগ্রামে কোদালায় জমি নেয়া হয় চা বাগান স্থাপনের। বর্তমানে যেখানে চট্টগ্রাম ক্লাব, ১৮৪০ সালে সেখানেই পরীক্ষামূলকভাবে রোপণ করা হয় প্রথম চা গাছ। ১৮৫৪ সালে সিলেট শহরের উপকণ্ঠে মালনিছড়া চা বাগানের মাধ্যমে চা উৎপাদনের মধ্য দিয়ে প্রথম বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয়। তখন থেকে ধীরে ধীরে চা এ দেশে একটি কৃষিভিত্তিক শ্রমঘন শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি আয় বৃদ্ধি, আমদানি বিকল্প দ্রব্য উৎপাদন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গ্রামীণ দারিদ্র্য হ্রাসকরণের মাধ্যমে চা জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন শুরু করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) চা রফতানিতে রেকর্ড পরিমাণ আয় হয়েছে। অর্থবছর শেষ হওয়ার ১০ মাস আগেই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৮ লাখ ডলার বেশি আয় হয়েছে চা রফতানি করে। এই দুই মাসে চা রফতানি করে আয় হয়েছে ৮৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৮৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ বেশি। এই দুই মাসে চা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। শুধু তাই নয়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে ২ হাজার ৬৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে চা রফতানিতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ডলার। বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশে চা-শিল্পের রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এ শিল্পকে সঠিকভাবে তদারকি করতে পারলে দেশের জাতীয় অর্থনীতি আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। বর্তমানে আমাদের দেশে যে পরিমাণ চা উৎপাদন হয় তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। এতে করে আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল হচ্ছে। অপরদিকে এ শিল্পের কারণে দেশের বেকার সমস্যার কিছুটা লাঘব হচ্ছে। চা উৎপাদনে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে দেশের চা-শিল্প। এবারের মৌসুম শেষে চা উৎপাদনে সর্বকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টির ধারণা ক্রমেই বাস্তব রূপ লাভ করছে। চলতি অর্থবছরের শেষ পর্যন্ত চা উৎপাদনের এ ধারা ঠিক থাকলে তা হবে গত ১৬২ বছরে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চা উৎপাদনের রেকর্ড। গত বছর দেশে চায়ের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক। বর্তমানে চা রফতানিতে বাংলাদেশ অষ্টম। জিডিপিতে এর অবদান শূন্য দশমিক ৮১ শতাংশ। চা উৎপাদন এখন শুধু সিলেটেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ১৮৬০ সালে হবিগঞ্জের লালচান্দ চা বাগান ও মৌলভীবাজারের মির্তিঙ্গা চা বাগানে চায়ের বাণিজ্যিক চাষ শুরু হয়। ২০০০ সালে উত্তরবঙ্গের পঞ্চগড়েও ছোট আঙ্গিকে চায়ের চাষ শুরু হয়। ২০০৫ সালে শুরু হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে। বাংলাদেশে চা শিল্পের বিকাশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অবিস্মরণীয়। ১৯৫৭-৫৮ সময়কালে তিনি বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সে সময়ে চা শিল্পে মাঠ ও কারখানা উন্নয়ন এবং শ্রম কল্যাণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে চা রফতানিতে শীর্ষে রয়েছে ১৯৯০ সাল। ওই বছরে চা রফতানি হয় ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫০ হাজার কেজি। তবে গত ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ চা রফতানি হয় ২০০২ সালে। ওই বছর বাংলাদেশ থেকে পণ্যটি রফতানি হয় ১ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার কেজি। এরপর ২০০৩ সালে রফতানি কিছুটা কমে ১ কোটি ২১ লাখ ৮০ হাজার কেজিতে নেমে আসে। ২০০৪ সালে আবার কিছুটা বেড়ে বাংলাদেশ থেকে চা রফতানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১ কোটি ৩১ লাখ ১০ হাজার কেজি। পরে ২০০৯ সাল থেকে চা রফতানির পরিমাণ ব্যাপকভাবে কমে যায়। ওই বছর রফতানি হয়েছিল মাত্র ৩১ লাখ ৫০ হাজার কেজি চা। পরের বছর তা নেমে আসে মাত্র ৯ লাখ ১০ হাজার কেজিতে। ২০১১ সালে ১৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি ও ২০১২ সালে ১৫ লাখ কেজি চা রফতানি হলেও ২০১৩ সালে চা রফতানি হয় মাত্র ৫ লাখ ৪০ হাজার কেজি।
×