ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন রিচার্ড এইচ থ্যালার

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৫ অক্টোবর ২০১৭

অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন রিচার্ড এইচ থ্যালার

অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রিচার্ড এইচ থ্যালার। ৯ অক্টোবর রয়েল সুইডিশ এ্যাকাডেমি এক ঘোষণায় জানায়, আচরণগত অর্থনীতি নিয়ে গবেষনার স্বীকৃতি হিসেবে এ পুরস্কার দেয়া হলো। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, অর্থনীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পর্যালোচনায় ব্যক্তির মানসিক অবস্থার সংযোগ নিয়ে কাজে করেন থ্যালার। তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে একজন মানুষের যুক্তি, সামাজিক বাস্তবতা এবং আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব পণ্যের বাজারে প্রভাব ফেলে। সংস্থাটির মতে, সামগ্রিকভাবে, রিচার্ড থ্যালার অর্থনীতি এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক পর্যালোচনার মধ্যে সংযোগ স্থাপনে অবদান রেখেছেন। তার অভিজ্ঞতালদ্ধ জ্ঞান এবং তত্ত্ব আচরণগত অর্থনীতিতে নতুন ও ক্রমবর্ধমান দিগন্ত উন্মোচনে সহায়তা করেছে। মার্কিন এই অর্থনীতিবিদ বেস্ট সেলার বই ‘নাজ’ এর সহলেখক, এই বইতে দেখানো হয়েছে মানুষ কি কারণে এবং কীভাবে খারাপ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই বইয়ে ‘নাজ থিওরি’ বা কনুইয়ের গুঁতো তত্ত্বের উৎপত্তি যা মানুষকে জীবনে ভাল সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। অধ্যাপক থ্যালারকে দেয়া হবে ৯০ লাখ সুইডিশ ক্রোনা যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ কোটি টাকার সমান। ৭২ বছর বয়সী এই অর্থনীতিবিদ বলেছেন, আমি যতটা সম্ভব অযৌক্তিক উপায়ে এই অর্থ খরচের চেষ্টা করব। এবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোট আটজন মার্কিন গবেষক নোবেল পুরস্কারের সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। চিকিৎসা ও পদার্থবিজ্ঞানে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখিয়ে ছয়জন মার্কিন বিজ্ঞানী নোবেল জিতে নেন। রসায়ন বিজ্ঞানে এ বছরের নোবেল বিজয়ী তিনজনের মধ্যে একজন ছিলেন মার্কিন। মাঝে শান্তি ও সাহিত্যে কোন মার্কিনের নাম শোনা না গেলেও অর্থনীতিতে এক মার্কিনকেই বেছে নিয়েছে নোবেল কমিটি। অর্থনীতি ও মনোবিজ্ঞানের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধান ঘোচাতে কাজ করেছেন এই অর্থনীতিবিদ। নোবেল কমিটির ভাষায়, তিনি অর্থনীতিকে অনেক বেশি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছেন। অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মনস্তত্ত্বের প্রভাব নিয়ে কাজ করে আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন রিচার্ড থ্যালার। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অর্থনীতিবিদের লেখা ‘নাজ’ নামের বইটি বোদ্ধা ও সাধারণ পাঠক উভয়ক্ষেত্রেই ব্যাপক সমাদৃত হয়। বইটিতেই তিনি অর্থনীতির একটি বিশেষ নিয়ন্ত্রক উপাদান হিসেবে ‘নাজিং’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ‘আলতো ছোঁয়া’। ২০০৮ সালে এই বই প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আচরণগত অর্থনীতি নিয়ে বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়। তিনি মূলত দেখাতে চেয়েছেন, সাধারণ মানুষ তাদের আচরণের মাধ্যমে কীভাবে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। তার মতে, সাধারণ মানুষের আচরণকে প্রভাবিত করতে পারলে অর্থনীতিকে আরও এগিয়ে নেয়া সম্ভব। তার এ মতবাদে পরবর্তী সময়ে অনেক গবেষক উদ্দীপ্ত হন। সময়ের সঙ্গে এ মতবাদ এতটাই প্রভাব বিস্তার করে যে ২০১০ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন একটি নাজ ইউনিট স্থাপন করেন, যার মূল লক্ষ্য ছিল জনগণের আচরণ পরিবর্তনের উদ্ভাবনী কৌশল খুঁজে বের করা। নোবেল কমিটির অন্যতম বিচারক পার স্ট্রোমবার্গ বলেছেন, থ্যালারের গবেষণা অর্থনীতির ওপর সাধারণ মানুষের আচরণ ও মানসিকতার প্রভাবকে সামনে এনেছে। অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য সাধারণ মানুষকে উদ্দীপ্ত করার প্রক্রিয়াটিই ছিল তার গবেষণার মূল ক্ষেত্র। নোবেল কমিটির দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অর্থনৈতিক বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে থ্যালার মানসিক ও আচরণের বিভিন্ন বাস্তবানুগ অনুমানকে ব্যবহার করার প্রস্তাব করেন। তিনি এ ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে হাজির করেন। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তিবোধের সীমাবদ্ধতা, সামাজিক অভিরুচি ও আত্মনিয়ন্ত্রণের ঘাটতি। তার মতে, এসব বিষয় ব্যক্তির সিদ্ধান্ত ও বাজারের কার্যকারিতার ওপর সমন্বিতভাবে প্রভাব ফেলে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, থ্যালারের গবেষণা অর্থনীতি ও মনোবিজ্ঞানের ওপর সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করেছে। যৌক্তিক ও নিয়ন্ত্রিত পন্থায় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যবস্থাপত্র দিলেও থ্যালার নিজে তা মানবেন না বলেই জানিয়েছেন। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে ৯০ লাখ ক্রোনা বা ১১ লাখ ডলার হাতে পেলে তিনি তা ‘সর্বোচ্চ অযৌক্তিক’ পন্থায় ব্যয় করবেন বলে জানিয়েছেন। শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে আচরণ বিজ্ঞান ও অর্থনীতি বিষয়ের অধ্যাপক থ্যালার। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৯৫ সালে যোগদান করেন। ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার থেকে ১৯৭৪ সালে পিএইচডি ডিগ্রী করেন তিনি। ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয় তার আলোচিত বই, ‘মিসবিহেভিং : দ্য মেকিং অব বিহ্যাভিওরাল ইকোনমিকস।’ এ ছাড়া তিনি অনেক বই লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর এবারের নোবেল পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার আগে থ্যালার ইউনিভার্সিটি অব রচেস্টার, কর্নেল, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়ার মতো প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। অর্থনীতি ডেস্ক সূত্র: এএফপি ও বিবিসি
×