ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নৃত্যগীতের বৈভবে ছায়ানটের শরত বন্দনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

নৃত্যগীতের বৈভবে ছায়ানটের শরত বন্দনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিদায়বেলায় বন্দনা জানানো হলো স্নিগ্ধ ঋতু শরৎকে। গানের সুরে ও নাচের মুদ্রায় ব্যক্ত হলো শিউলি, শেফালি কিংবা কাশফুলের প্রতি আকুলতা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রোতা-দর্শনার্থীর মাঝে মুগ্ধতা ছড়াল ঋতুভিত্তিক আয়োজনটি। শরতের নৃত্য-গীতে সাজানো এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। খুদে শিল্পীদের সম্মেলক গানে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। দলবেঁধে তারা গেয়ে ওঠে ‘দেখো-দেখো, শুকতারা আখি মেলে চায়’। কাঞ্চন মোস্তফার কণ্ঠে গীত হয় ‘শরত আলোর কমলবনে/বাহির হয়ে বিহার করে যে ছিল মোর মনে মনে’। সুমা রায় পরিবেশন করেন ‘অমল ধবল পালে লেগেছে’। পার্থ প্রতীম রায় গেয়ে শোনান ‘পোহাল পোহাল বিভাবরী’। সঞ্চারী অধিকারী গেয়েছেন ‘শরৎ, তোমার অরুণ আলোর অঞ্জলি’। সুদীপ সরকারের কণ্ঠে গীত হয় ‘এবার অবগুণ্ঠন খোলো’। গানের মাঝে পরিবেশিত হয়েছে নয়নজুড়ানো নাচ। নেপথ্যে বেজেছে ‘কোন খ্যাপা শ্রাবণ ছুটে এল’। সুতপা সাহার গাওয়া গানের শিরোনাম ছিল ‘তোমরা যা বল তাই বলো’। শরতের আবাহনী আয়োজনে ছোটদের গাওয়া আরও দুটি গানের শিরোনাম ছিল ‘আজ প্রথম ফুলের পাব প্রসাদখানি, তাই ভোরে উঠেছি’ ও ‘আজ ধানের খেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা’। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে শেষ হয় এ আয়োজন। চিত্রশালায় ১৩ নারীশিল্পীর শিল্পসম্ভার এক আয়োজনে যূথবদ্ধ হয়েছেন ১৩ নারী চিত্রকর। বর্ণের বিচিত্র ব্যবহারের সঙ্গে বিষয়ের বৈভবে রাঙিয়েছেন চিত্রপট। সেই সঙ্গে ক্যানভাসে ধরা দিয়েছে ভাবনার খোরাক যোগানো নানা মোটিফ। চিত্রকর্মের পাশাপাশি প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে মাটি, পাথর ও এ্যালুমিনিয়ামের তৈরি মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য। সেসব শিল্পসম্ভার কালার্স নামের সংগঠনের আয়োজনে শুরু হলো পক্ষকালব্যাপী শিরোনামহীন এ প্রদর্শনী। শুক্রবার সকালে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার দুই নং গ্যালারিতে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় । যৌথভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ১৩ শিল্পী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ১৯৮৯-৯০ ব্যাচের শিক্ষার্থী। প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া ১৩ শিল্পী হলেনÑ ফারহানা ইসলাম বাপ্পি, ফারজানা ইসলাম মিল্কি, কানিজ সোহেনি ইসলাম, মনিদীপা দাসগুপ্ত, মুক্তি ভৌমিক, মরজিয়া বেগম, মনিরা সুলতানা মুক্তা, শায়লা আক্তার, নিশাত চৌধুরী জুঁই, রেহানা ইয়াসমিন শিলা, রেবেকা সুলতানা, রিফাত জাহান কান্তা ও সুকন্যা আইন। উদ্বোধকের বক্তব্যে রফিকুন নবী বলেন, সামাজিক-সাংসারিক কঠিন বাস্তবতায় খুব কম শিল্পীই শিল্পকলা চর্চায় মন দিতে পারে বা চারুকলার পাঠকে জীবনের অংশ হিসেবে নিতে পারে। প্রদর্শনীর এই শিল্পীরা সে প্রতিকূলতা পেরিয়েই মনোনিবেশ করেছে চারুশিল্পে, চালিয়ে যাচ্ছে শিল্পচর্চা। তাদের শিল্পকর্মগুলো মনন ও মেধার মিশেলে হয়েছে উঠেছে বৈচিত্র্যময়। সুলতানা কামাল বলেন, শিল্পীকে নারী বা পুরুষের বিভাজন থাকা উচিত নয়। শিল্পীকে শিল্পী হিসেবে টিকে থাকতে হবে। সব বাধা পেরিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। নারী অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়। কর্মস্থল, বাসা- সব জায়গায় নানা বাধা পেরিয়েই তবেই সে এগিয়ে যায়। ক্যানভাসে নিপীড়নের বিরুদ্ধে নারীর জাগরণী শক্তিকে তুলে ধরেছেন সোহানী ইসলাম। ফারহানা আফরোজের ‘ইমপ্রেশন’ সিরিজে দৃশ্যমান হয়েছে বিভিন্ন অর্থপূর্ণ মোটিফ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মিশেলে ফারজানা ইসলাম মিল্কির ‘নিসর্গ’ সিরিজে দেখা মেলে রঙের বিচিত্র ব্যবহার। শান্তির বারতায় মুক্তি ভৌমিকের চিত্রপটে দৃশ্যমান হয়েছে পায়রা। মণিদীপা দাশগুপ্ত এঁকেছেন ‘স্বপ্ন’ নামের সিরিজ। মুনিরা সুলতানা মুক্তা কাজ করেছেন পোড়ামাটিতে, তুলে এনেছেন ঝরাপাতার দৃশ্যকাব্য। পোড়ামাটির আশ্রয়ে পুষ্পের রূপায়ন ঘটিয়েছেন নিশাত চৌধুরী। রেহানা ইসলামের ক্যানভাসে এসেছে আবহমান বাংলার দৃশ্যকল্প। বিচিত্র ভঙ্গিতে বৈশিষ্ট্যময় রিফাত জাহান কান্তার ‘নারী’। সুকন্যা আইনের চিত্রে রঙের খেলায় উঠে এসেছে বাস্তবতার বিধ্বংসী রূপটি। প্রদর্শনী চলবে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সমর মজুমদারের ক্যানভাসে সজীব স্বদেশ শিল্পকর্ম সৃজনে রূপসী বাংলার কাছে সমর্পিত এক শিল্পী সমর মজুমদার। সেই সুবাদে এই চিত্রকরের ক্যানভাসে উঠে এসেছে নদীর বহমানতা, দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ, গাঁয়ের কুড়েঘর কিংবা বর্ষার বৃষ্টিজল। সেসব চিত্রপটে আরও আছে মাতৃ¯েœহ, কৃষকের মুখসহ পল্লীবধূর জীবনের গল্প। স্বদেশের প্রতি দায়বদ্ধ শিল্পীর তেমন কিছু ছবি এখন শোভা পাচ্ছে ধানম-ির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের ক্যাফে-লা-ভেরান্দায়। শুক্রবার থেকে সূচনা হওয়া এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘মৃত্তিকা মায়া’। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প সমালোচক অধ্যাপক মইনুদ্দীন খালেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ দো ঢাকার পরিচালক ব্রুনো প্লাস। আপন শিল্পকর্ম প্রসঙ্গে সমর মজুমদার বলেন, আমার মাতৃভূমি বাংলাদেশ আমার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্তাকর্ষক। আমি এই মাটির সন্তান । এ মাটি আমাকে যে শক্তি দেয় সে শক্তিকে আশ্রয় করে আমার চারপাশে দেখা সৌন্দর্যকে মেলে ধরি ক্যানভাসে। আমার স্নেহ, অনুরাগ, প্রতিবাদ বা দুঃখের অনুভূতিÑসবই বাংলাদেশের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। ৩০টি চিত্রকর্মে সাজানো এ প্রদর্শনী চলবে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত। সোম থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১২টা এবং বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা খোলা থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ। উদীচীর আয়োজনে রুশ বিপ্লবের শততমবার্ষিকী উদযাপন আলোচনা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় রুশ বিপ্লবের শততমবার্ষিকী উদ্যাপন করল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। শুক্রবার বিকেলে বাহাদুর শাহ পার্কে আয়োজিত হয় এ অনুষ্ঠান। আলোচনায় অংশ নেন সাংস্কৃতিক সংগঠক হায়দার আনোয়ার খান জুনো, অক্টোবর বিপ্লব উদ্যাপনে জাতীয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সিপিবির উপদেষ্টাম-লীর সদস্য মঞ্জুরুল আহসান খান ও উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ শীশ। সভাপতিত্ব করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক ড. সফিউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানের শুরুতে উদীচী শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘জাগো জাগো সর্বহারা, অনশন বন্দী ক্রীতদাস’ ও ‘এই পতাকা শ্রমিকের রক্ত পতাকা’। আলোচনায় বক্তারা বলেন, এক শ’ বছর আগে ১৯১৭ সালে ভøাদিমির লেনিনের নেতৃত্বে সংঘটিত রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব শোষণ ও যন্ত্রণার অন্ধকার থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিয়েছিল। সেই বিপ্লবের অনুপ্রেরণাতেই পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জেগে ওঠে শৃঙ্খলিত মানুষ। সব শোষণ-বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে উন্নত ও আধুনিক জীবনের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বিপ্লবের নেতৃত্বদানকারীরা, তা বাস্তবে রূপ নিয়েছিল সোভিয়েত রাশিয়ায়। শুধু শোষণ-নির্যাতন থেকে মুক্তিই নয়, সেই বিপ্লবের অভিঘাতে শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও বিশ্বব্যাপী এক নতুন জাগরণ শুরু হয়েছিল, যা বিশ্ববাসীর সামনে মুক্তির বারতা নিয়ে উপস্থিত হয়। আলোচনা শেষে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। উদীচীর শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘হাতুড়িতে পেটাই লোহা মাকুতে দেই টান’ ও ‘ভেদি অনশন মৃত্যু তুষার তুফান’। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন মিজানুর রহমান সুমন ও জোবায়েদুর রহমান। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচীর আবৃত্তি বিভাগ। ‘হেই সামালো ধান হো কাস্তেতে দাও শান হো’ গানটির সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন উদীচী ঢাকা মহানগর সংসদের শিল্পীরা। দলীয় পরিবেশনা পরিবেশন করেন তেজগাঁও ও মিরপুর শাখার শিল্পীরা। উদীচী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের শিল্পীরা পরিবেশন করেন পথনাটক ‘অধিকারনামা’।
×