ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

দূর্যোগ প্রশমন দিবসের সূফল পাচ্ছে না উপকূলের লক্ষাধীক মানুষ

প্রকাশিত: ২২:২২, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

দূর্যোগ প্রশমন দিবসের সূফল পাচ্ছে না উপকূলের লক্ষাধীক মানুষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী (বরগুনা) ॥ আজ আর্ন্তজাতিক দূর্যোগ প্রশমন দিবস।এ দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “দূর্যোগ ঝুঁকি কমাতে হলে,কৌশল সমুহ বলতে হবে”। কিন্তু এ কৌশল সমুহ জানেনা উপকুলের লক্ষাধীক মানুষ। ফলে দূর্যোগ প্রশমনের সুফল পাচ্ছে না উপকুলবাসী। উপকুলের লক্ষাধীক মানুষ সমুদ্র ও সমুদ্র নিকটকর্তী স্থানে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে। এ প্রান্তিক জনগোষ্ঠি জানেনা দুর্যোগ প্রশমন দিবস, সুনামী, ভমিকম্প, বর্জ্রপাত, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস কি? প্রতিবছর সরকার দূর্যোগ প্রশমন দিবস উদযাপনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে তোলে। কিন্তু যাদের সচেতন করা প্রয়োজন তাদের কাছে পৌছেনি সচেতনতার সতর্কবানী। সমুদ্রতীর, বুড়িশ্বর ও আন্ধারমানিক দুটি বৃহৎ নদীর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত আমতলী ও তালতলী উপজেলা। তালতলীর পচাঁকোড়ালিয়া, কড়াইবাড়িয়া, শারিকখালী, ছোটবগী, বড়বগী, নিশানবাড়িয়া ও সোনাকাটা ইউনিয়ন সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় এটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এছাড়া আড়পাঙ্গাশিয়া, আমতলী সদর,আমতলী পৌরসভা, গুলিশাখালী ইউনিয়ন পায়রা নদীর তীরবর্তী স্থানে হওয়ায় এ এলাকা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। উপকুলীয় অঞ্চল হওয়ায় অনাদিকাল সাইক্লোন, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস,ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে আমতলী ও তালতলীতে। এতে ব্যাপক জান মালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ১৯৭০ সালে ১২ নভেম্বর আমতলী ও তালতলীর উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস ছিল প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়। এ জলোচ্ছ্বাসে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল কোটি কোটি টাকার সম্পদ। ২০০৭ সালে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে আমতলী ও তালতলীর ২৯৭ জন মানুষ প্রাণ হারায়। নিখোঁজ রয়েছে ৪৯ জন এবং আহত হয় ২৫০০ জন। ওই সময় সবচেয়ে প্রাণহানী ঘটে তালতলীর বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী নিদ্রা, সখিনা, আশারচর, জয়ালভাঙ্গা ও ফকির হাট এলাকায়। এর একমাত্র কারন অসচেতনতা। যারা সাইক্লোন সেল্টারে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের প্রাণহানী ঘটেনি। বেশী প্রাণহানী ঘটেছে সাগরে অবস্থানরত জেলেরা। জেলেদের অসচেতনতার জন্য এত প্রাণহানী। আমতলী ও তালতলী উপজেলার লক্ষাধীক মানুষ সমুদ্র উপকুলীয় অঞ্চলে দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এ উপকুলের মানুষ সচেতনতার দিক দিয়ে নিন্মমানের। এদের মধ্যে রয়েছে বেশীর ভাগ প্রান্তিক জেলে। আমতলীতে নিবন্ধিত জেলে ৭ হাজার ২’শ ১০ ও তালতলীতে ৯ হাজার ৩শ’২১ জন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নিবন্ধনের বাহিরে জেলে রয়েছে অর্ধলক্ষ। নিবন্ধনের বাহিরে অধিকাংশ জেলে সাগর ও সাগর মোহনায় মাছ ধরে। এদের মধ্যে অনেকেই এখনো জানে না ঘূর্ণিঝড়, সুনামী, ভমিকম্প, বর্জ্রপাত, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস কি? সরকারের পক্ষ থেকে দূর্যোগ প্রশমনে সচেতনতা তৈরিতে প্রশিক্ষন দিয়ে থাকেন। যাদের সচেতন করতে প্রশিক্ষন প্রয়োজন তারা প্রশিক্ষন পায়না এমনই অভিযোগ উপকুলবাসীর। উপকূলীয় বেড়িবাঁধ উঁচুকরণ, আরও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ, দুর্যোগকালে সমুদ্রে জেলেদের সাথে যোগাযোগের উন্নত মাধ্যম ব্যবহার, কমিউনিটি রেডিও চালুকরণ, সচেতনতা অনুষ্ঠান জোরদারকরণ,আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো, বন্যাপ্রবণ এলাকায় কিল্লা নির্মাণ, বন্যা প্রতিরোধে সবার করণীয় নির্ধারণ করে গাইডলাইন নির্মাণের ওপর গুরুত্বরোপের দাবী জানান সচেতন নাগরিক সমাজ। তালতলীর আশারচরের জেলে শাহাজাদা মিয়ার কাছে সুনামী, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন সুনামী কি জানিনা। “সাইক্লোন মোগো এলাকায় আছে। বইন্যা আইলে মোরা ওই সাইক্লোনে যাইয়্যা থাহি, বইন্যা, দেওই এর মধ্যে সাগরে জাল বাই আল্লায় মোগো বাঁচায়”। সখিনা গ্রামের জেলে নজরুল ইসলাম বলেন সাগর সংলগ্ন আশারচরে মৌসুম ভেদে জাল ফেলি। এ জীবনে বহুবার বন্যার কবলে পরেছি কিন্তু সুনামী কি তা জানিনা। তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন কেউ কোন দিন জেলেদের ঝড়, সাইক্লোন ও জলোচ্ছ্বাস সম্পর্কে সচেতন করতে আসেনি। আশারচরের মন্টু বিশ্বাস বলেন গত ২০ বছর ধরে সাগরে হাজার হাজার জেলে বন্যার কবলে পরতে দেখেছি। অনেক জেলেকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করেছি। নিজে বন্যার কবলে পরেছি কিন্তু কেউ কোন দিন সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, সুনামী, বর্জ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় বিষয়ে সচেতন করতে আসেনি। তিনি আরো বলেন আশারচরে প্রায় ৪০ হাজার জেলে রয়েছে। এ সকল জেলেদের কেহ খোঁজ খবর নেয়নি, সচেতন করাতো দুরের কথা। তিনি সরকারের কাছে দাবী জানান আশার চরের জেলেদের বন্যা, সুনামী, বর্জ্রপাত, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সচেতন করে তোলার। সোনাকাটা ইউপি সদস্য আবদুস ছালাম হাওলাদার বলেন সাগরের জেলেরা যুদ্ধ সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। তারা বন্যা, সুনামী, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সচেতন নয়। তাদের এগুলো সম্পর্কে সচেতন করলে তারা উপকৃত হতো। সরকার তা না করে উপজেলা শহরের সচেতন মানুষকে সচেতন করছে। প্রান্তিক জেলে ও সাগর পাড়ের প্রতিটি অসচেতন মানুষকে সচেতন করলে দূর্যোগ প্রশমন দিবসের সুফল পাবে উপকূলবাসী। তিনি আরো বলেন বর্তমান মৌসুমে যে পরিমান জেলে আশারচর এলাকায় অবস্থান করছে ওই পরিমান আশ্রয়কেন্দ্র এখানে নেই। সকল জেলেদের আশ্রয় দিতে হলে আরো আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা প্রয়োজন। তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বদরুদ্দোজা শুভ বলেন আশার চরে পর্যাপ্ত সাইক্লোন সেল্টার নেই। তিনি আরো বলেন উপকুলের জনগোষ্ঠিকে সচেতন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×