ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর জোর দাবি

প্রকাশিত: ২৩:৩৮, ১২ অক্টোবর ২০১৭

ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর জোর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার, ঈশ্বরদী ॥ প্রয়োজনীয় সংখ্যক যাত্রী থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বরদীতে বিমানের ফ্লাইট চালু না থাকায় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ প্রতিমাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত বিদেশীরা বিমান ভ্রমন করতে পারছেন না। একই ভাবে ঈশ্বরদীসহ নিকটস্থ এলাকার বিভিন্ন পেশার প্রায় ১০/১২ হাজার বিমান যাত্রীরাও বঞ্চিত হচ্ছেন বিমান ভ্রমন থেকে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অযোগ্য,অদক্ষ ও দূর্ণীতি পরায়ণ কতিপয় কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই ঈশ্বরদীতে বিমানের ফ্লাইট চালু করা হচ্ছে না। একাধিক রাজনৈতিক নেতা,আইনজীবি, বিদেশী একাধিক যাত্রী, সংশ্লিট বিভাগের বিভিন্ন দায়িত্বশীল সুত্র, এলাকাবাসী, বাংলাদেশ অটোমেজর এন্ড হাসকিং মিল এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ ও ঈশ্বরদী চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব খাইরুল ইসলামের দেওয়া অভিযোগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রমতে, ঈশ্বরদীতে অবস্থানরত রাশিয়ানসহ বিভিন্ন দেশের পাঁচ শতাধিক বিদেশীরা বিমানে ভ্রমন করতে না পেরে প্রতিনিয়ত নানা অসুবিধার শিকার হচ্ছেন। তাদের কাজের গতি বৃদ্ধিতেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। ঈশ্বরদী, পাবনা ,কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, নাটোর অঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীরাও বিমানে চলাচল করতে না পেরে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা মুখি অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। একইসাথে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ও প্রতিমাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চুয়ান্ন বছর আগে পাকিস্তান আমলে নির্মিত ঈশ্বরদী বিমান বন্দরটিতে প্রতিদিন দুটি করে ফ্লাইট চলাচল করতো। স্বাধীনতার পরও বেশ কিছুদিন এটি চালু ছিল এবং যাত্রী সংখ্যাও ছিল বেশী। পার্শ্ববর্তী পাবনা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও নাটোরের যাত্রীরা ঢাকাতে যাতায়াত করতো ঈশ্বরদী বিমানবন্দর থেকে। সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে এরশাদ সরকার আমলে হঠাৎ করে রাজশাহীতে নতুন একটি বিমান বন্দর চালু করার পর থেকে যাত্রী সংকটের অজুহাত দেখানো শুরু হয়। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কর্মকর্তারা এ ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এরই অংশ হিসাবে ১৯৮৭ সালে এই রুটে ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্তমানেও শুধুমাত্র রানওয়ে প্রশস্ত না থাকার অজুহাত দেখিয়ে বেসরকারী বিমান সংস্থাগুলোও এ বিমান বন্দরটি ব্যবহারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। সূত্রমতে, ঈশ্বরদীসহ নিকটস্থ এলাকার যাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালের ১৭ই জুলাই থেকে বিমান চলাচল শুরু হয়। তিন বছর পর ১৯৯৬ সালের ৩ নবেম্বর লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে পুনরায় বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়। এরপর ঈশ্বরদী অঞ্চলের মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৮ সালের ১০ মে বেসরকারি এয়ারলাইন্স এয়ার পারাবতের ফ্লাইট চালু করা হয়। মাত্র ৩৮ দিন চলার পর ২৮ জুন এই সার্ভিস বন্ধ করা হয়। দীর্ঘ ১৭ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালের ১৮ই নবেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আবারও ফ্লাইট উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ৬ মাস ১১ দিন পর আবার বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। নানা প্রয়োজন ও কারণেই বর্তমানে ঈশ্বরদীর এই বিমানবন্দরটি আবারও চালু হওয়া বিশেষ প্রয়োজন। এখানে রয়েছে দেশের গুরত্বপূর্ণ বাংলাদেশ সুগারক্রপস গবেষণা ইন্সটিটিউট, ঈশ্বরদী ইপিজেড, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় অফিস, আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, পাবনা চিনিকল, আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিল, পাকশী নর্থবেঙ্গল পেপার মিল(বর্তমানে বন্ধ) ,বেনারসী পল্লীসহ সাত শতাধিক চাউল কল, অটো রাইচ মিল, অয়েল মিলসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও এখানে নির্মিত হচ্ছে দেশের একমাত্র পারমানবিক বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প। বর্তমানে রূপপুর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প ও ইপিজেডকে ঘিরে পাঁচ শতাধিক বিদেশী অবস্থান করছে। জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা যাতায়াত করতে চাইলেও সেই সুযোগ তাঁরা পাচ্ছেন না। ঈশ্বরদীতে অবস্থানরত রাশিয়ানসহ অন্যান্য বিদেশীরা বিমান ভ্রমন করতে না পেরে প্রতিনিয়ত অসুবিধার সন্মুখিন হচ্ছেন। তাদের কাজের গতি বৃদ্ধিতেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। বিদেশীসহ এ অঞ্চলের হাজার হাজার যাত্রীরাও বিমানে চলাচল করতে না পেরে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা মুখি অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। একইসাথে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ও বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় মাসে ২০ লাখ টাকারমত রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়ে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশ অটোমেজর এন্ড হাসকিং মিল এসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুর রশিদ ও ঈশ্বরদী চাউল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব খাইরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বরদীতে বিমানের ফ্লাইট চালু না করা খুবই দুঃখজনক। আমরা নিজেরাই ভুক্তভোগী। তাছাড়া উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় শিল্প এলাকা হিসেবে জরুরিভাবে ঈশ্বরদীতে বিমানের ফ্লাইট চালু করা প্রয়োজন। ঈশ্বরদী বিমান বন্দরের ব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ আকন্দ জানান, এ বিমান বন্দরটি ৪৩৫ একর জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত। রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৪ হাজার ৭শ’ ফুট ও প্রস্থ ৭৫ ফুট। বর্তমানে দেশে যে ধরনের ফ্লাইট রয়েছে, সেগুলো ঈশ্বরদী বিমান বন্দরে অবতরণের জন্য রানওয়ের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। রানওয়ের দৈর্ঘ হওয়া প্রয়োজন ৬ হাজার ফুট এবং প্রস্থ ১শ’ ফুট। ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে একটি প্রস্তাব বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। সরেজমিন পর্যবেক্ষন করে রিপোর্ট সংগ্রহের মাধ্যমে করনীয় বিষয় নিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও তদন্ত করে রিপোর্ট দেননি বিমান বন্দরটি চালুর করণীয় বিষয়ে।
×