ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বলি ১১ বাংলাদেশি

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ১২ অক্টোবর ২০১৭

ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বলি ১১ বাংলাদেশি

অনলাইন ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মেক গ্রেট অ্যাগেইন’ বলে স্বপ্ন দেখানো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির বলি হলেন ১১ বাংলাদেশি। তাঁদের জোর করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোরে ১১ জনকে আটক করে অ্যারিজোনার দুর্গম ডিপোর্টেশন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশগামী বিশেষ ফ্লাইটে জোর করে তুলে দেওয়া হয়। ১১ জনের মধ্যে ১০ জনই নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশি। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো ব্যক্তিরা হলেন সেলিম আহমেদ, মোজাম্মেল হক, করিম চৌধুরী, মুজিবুর রহমান, বাবলু শরিফ, মোহাম্মদ বাদল রনি, মোহাম্মদ ফরিদুল মওলা, মনিরুল ইসলাম, নাসরিন চৌধুরী, মোহাম্মদ আম্বিয়া ও খায়রুল আম্বিয়া। সম্প্রতি ব্যাপক ধরপাকড়ে অ্যারিজোনার ফ্লোরেন্স কারেকশন সেন্টারে দুই নারীসহ ২৭ বাংলাদেশি ডিপোর্টেশনের পথে রয়েছেন বলে জানা গেছে। যেকোনো সময় তাঁদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত ব্যক্তিদের স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ দ্রুত পাসপোর্ট দিয়ে মার্কিন অভিবাসন বিভাগকে সহযোগিতা করেছে। এতে ভুক্তভোগী অভিবাসী ও তাঁদের পরিবার আইনের সাহায্য নেওয়ার আগেই বিতাড়ন প্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাচ্ছে। কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের আটক করার পর মার্কিন অভিবাসন বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট বা ট্রাভেল ডকুমেন্ট সংগ্রহ করা হয়। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা কনস্যুলেট তাদের দেশের নাগরিক কি না, তা তদন্ত করে সময় নিলে ওই ব্যক্তির পক্ষে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, আনডকুমেন্টেড অভিবাসীদের তথ্যাদি চাওয়া মাত্র দ্রুত আইএস-কে (ইমিগ্রেশন সার্ভিস) দিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে সতর্ক করা হয়েছে। ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভিবাসীদের তথ্য জানাতে গড়িমসি করায় বাংলাদেশের নাগরিকদের বি-১ ভিসা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন বিভাগ এ–সংক্রান্ত হুঁশিয়ারি পত্র দূতাবাসে পাঠায়। এরপর থেকেই ভিসাপ্রক্রিয়া সচল রাখার স্বার্থে দূতাবাস দ্রুতগতিতে ট্রাভেলস ডকুমেন্ট ইমিগ্রেশন সার্ভিসের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করে। দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আনডকুমেন্টেড বাংলাদেশিদের তথ্য দিতে দেরি হওয়ায় ঢাকা থেকে বাংলাদেশের অনেক নাগরিকের ভিসা আবেদন বাতিল হয়। ওই প্রক্রিয়া বন্ধ করতেই দূতাবাসকে দ্রুত তথ্য দিতে হয়। মানবাধিকার সংগঠক, সাউথ এশিয়ান এডুকেশন স্কলারশিপ অ্যান্ড ট্রেনিং অর্গানাইজেশনের নির্বাহী মাজেদা উদ্দিন বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির শিকার হয়ে দুই নারীসহ ২৭ বাংলাদেশি ডিপোর্টেশনের পথে আছেন। তাঁরা এখন অ্যারিজোনার ফ্লোরেন্স কারেকশন সেন্টারে আছেন। নিউইয়র্ক, কানেকটিকাট, নিউজার্সি ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্য থেকে তাঁদের আনডকুমেন্টেড হিসেবে আটক করে ইমিগ্রেশন সার্ভিস। আটক ব্যক্তিদের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রেই এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আটক হওয়া ব্যক্তির পরিবারের বরাত দিয়ে মাজেদা উদ্দিন বলেন, আটক ব্যক্তিদের হাতে ইংরেজিতে ‘লো আর হাই’ লেখা বিভিন্ন রঙের ব্যান্ড লাগানো আছে। গত চার মাসে বাংলাদেশ দূতাবাস ১৪ জনকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিয়েছে। কোনো তদন্ত ছাড়াই দূতাবাস ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিচ্ছে এবং দূতাবাস আটক ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ দূতাবাস তদন্ত করে যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত নন, তাঁদের মুক্ত করার ব্যাপারে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে মার্কিন অভিবাসন বিভাগকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট না দিলে তাঁরা আপাতত রক্ষা পেয়ে আইনের আশ্রয় নিয়ে বৈধ হওয়ার সুযোগ নিতে পারতেন। পাকিস্তান দূতাবাস দেশটির আটক ব্যক্তিদের ট্রাভেলস ডকুমেন্ট না দেওয়ায় তাঁরা বন্ড দিয়ে ফিরে এসে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে থাকতে আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন। মাজেদা উদ্দিন বলেন, গত দেড় মাস আগে চারজন ও গত তিন-চার মাসে মোট ১৪ বাংলাদেশিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ডিপোর্ট করা হয়েছে। বিতাড়নের শিকার হওয়া বাংলাদেশিরা অনেকেই দুই-তিন দশক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বাস করছেন। এখানে বিয়ে করেছেন, সন্তান হয়েছে। বিতাড়নের শিকার বাবলু শরিফের পরিবার গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করেছে। তাঁরা ট্রাম্পের কাছে আবেদন জানিয়েছেন, এভাবে যেন বিতাড়ন না করা হয়। এদিকে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নতুন ৭০ দফা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ভাষ্য, অবৈধ অভিবাসন সমস্যা চূড়ান্তভাবে সমাধান করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোয়াইট হাউস গত ৯ সেপ্টেম্বর ৭০-দফা পরিকল্পনা কংগ্রেসে উপস্থাপন করে। এ পরিকল্পনায় সীমান্তদেয়াল নির্মাণের কথাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যমান আইনে তিনটি পরিবর্তন রয়েছে। সীমান্ত নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ আইনের শক্ত প্রয়োগ এবং বৈধ অভিবাসন ব্যবস্থার সংস্কার। অবৈধ অভিবাসন বন্ধে বিচার বিভাগ,পররাষ্ট্র, লেবার ডিপার্টমেন্ট এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটিসহ প্রধান তিন অভিবাসন সংস্থার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে অবৈধ অভিবাসী–অধ্যুষিত নগরে দেওয়া আর্থিক অনুদান ও সহযোগিতা বন্ধ করার বিধান রাখা হয়েছে। রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার শিথিল নীতি কঠোর করার কথা বলা হয়েছে। মা-বাবাহীন বহিরাগত শিশুদের প্রমাণ করতে হবে, তারা মা-বাবাহীন এবং দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষার উদ্দেশ্যে মানবিক সুরক্ষা চাইছে। ভ্রমণকারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত সময় অবস্থান করলে তাদের কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে। ২০০১ সালে সুপ্রিম কোর্ট দেওয়া হত্যার আসামিসহ হাজারো অবৈধ অভিবাসীকে মুক্ত করার যে সিদ্ধান্ত, তা সংকুচিত করা হবে। ফেডারেল, অঙ্গরাজ্য এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে অবৈধ অভিবাসীদের আটক করার ক্ষমতা থাকবে। ‘আমেরিকান ভয়েস’-এর নির্বাহী পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক সারী বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কংগ্রেসকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা এ সংকটের সমাধান করবেন নাকি মিলারের ফাঁদে পা দেবেন। অনেকের ধারণা, ট্রাম্পের নতুন কর্মসূচি বৈষম্য ও পক্ষপাতদুষ্ট। এতে আরও বেড়া তৈরি হবে, সীমান্ত পাহারাদারদের সংখ্যা বাড়বে, বহুমাত্রিক লটারি ভিসা বন্ধ হবে, ইলেকট্রনিক যাচাই বাধ্যতামূলক হবে। অন্য সব বিষয়ের মতো অভিবাসন নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর যাত্রা অব্যাহত থাকবে।
×