ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লাখো মানুষের ভিড়ে নেই আমার স্বামী

প্রকাশিত: ১৯:২১, ১২ অক্টোবর ২০১৭

লাখো মানুষের ভিড়ে নেই আমার স্বামী

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ আমি কোথায় এসেছি, বাড়িতে নাকি শরণার্থী জীবনে এটা সব সময় ভুলে যাই। মনে হয় হাশিমের বাবা বাজার থেকে ঘরে আসছে। তাড়াতাড়ি টুকটাক কাজ সেরে দরজায় দাঁড়াই। হাশিমকে কুলে নিয়ে একটু সম্মুখে গেলেই ধ্যান পাল্টে আমার। এসব কি? তখন দেখি লাখো মানুষ আর মানুষ। ওই লাখো মানুষের ভিড়ে হাশিমের বাবা নেই। নেই আমার আদরের স্বামীধন বড় মাপের ব্যবসায়ী জিয়াবুল। তারপর বুঝতে পারি আমি মিয়ানমারে নিজের হাতে সাঁজানো ঘরে নয়, পরবাসি হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত। রাখাইনে মগজাতি তছনছ করে দিয়েছে আমার সুখের সংসার। তারা কেড়ে নিয়েছে আমার সব কিছু। মিয়ানমার থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে এসে টেকনাফের কেরুনতলী বস্তিতে আশ্রিত রোহিঙ্গা বিধবা নারী নুর ফাতিমা বুধবার ডুকরে ডুকরে কেঁদে বলছিলেন এসব কথা। এদিকে মিয়ানমারে সরকারী বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে নুর ফাতিমার মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের চোখে এখনও ভাসছে মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর নিষ্টুর কর্মকান্ডের চিত্র। টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রিত শিবিরে রোহিঙ্গাদের কক্ষে কক্ষে বিধবা নারী, এতিম সন্তান, ধর্ষিতা যুবতী-কিশোরী, স্বামী হারা বিধবা, মা-বাবা হারা শিশু, সন্তান হারা মা-বাবা রয়েছে। ওসব কক্ষে এখনও প্রতিরাতে স্বজন হারা রোহিঙ্গাদের আহাজারীতে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত জনপদের বাতাস ক্রমে ভারী হয়ে উঠছে। রাতে এসব স্বজন হারা রোহিঙ্গাদের করুন সুরে বিলাপ যে কারও মন-হৃদয় ছুঁয়ে যায়। উত্তর মংডুর বড়গৌজিবিলের ১৮ বছর বয়সী নুরুচ্ছফা অশ্র“ সজল নয়নে বলেন মিয়ানমারে সেনা সদস্যরা আমার স্বামী ও দেবরকে হত্যা করে পাশবিক নির্যাতন করেছে আমার উপর। শুনেছি আমার ২ ভাইকেও হত্যা করেছে তারা। এখন আমার বৃদ্ধ বাবা কোথায় আমি তার খোঁজ পাচ্ছিনা। তাকে কাঁধে করে নিয়ে আসার জন্য ছিল আমার দুই ভাই। তাদের হত্যা করায় আমার বাবা কি শোকে সেখানে মারা গেছেন, নাকি এখনও রয়ে গেছে জানিনা। শুধু আয়েশা নুর ফাতিমা ও নুরুচ্ছফা নয়, উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে তার মতো প্রায় কয়েক হাজার স্বামী হারা নারী। ক্যাম্প-বস্তির পথে পথে রোহিঙ্গাদের সারি পেছনে পড়ে আছে স্বজন হারানোর দু:সহ জীবনের কাহিনী।
×