ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিনিয়রদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১২ অক্টোবর ২০১৭

সিনিয়রদের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ টেস্ট সিরিজ শেষ। বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। বাজে খেলেছে। সমালোচনাতেও পড়তে হয়েছে। এখন আর সেই টেস্ট সিরিজ নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সামনে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ আছে। আজ বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা আমন্ত্রিত একাদশের মধ্যকার একদিনের প্রস্তুতি ম্যাচ ব্লুমফন্টেইনের ম্যাংগাউং ওভালে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় শুরু হবে। এ প্রস্তুতি ম্যাচটি শেষে নির্ধারিত ওভারের সিরিজ নিয়েই তাই এখন ভাবতে হচ্ছে। আর সেই ভাবনায়, দলের জয়ের ভাবনায় সিনিয়রদের দিকেই তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মর্তুজা দলে থাকা মানেই দলের ক্রিকেটাররা চাঙ্গা হয়ে যাওয়া। সাকিব আল হাসান থাকা মানে দল ভরসা পাওয়া। মুশফিকুর রহীম থাকা মানে, ব্যাটিংয়ে নির্ভরশীলতা পাওয়া। তামিম ইকবাল থাকা মানে শুরুতেই প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপরে আঘাত হানার কাজটি করার সাহস পাওয়া। আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ থাকা মানে মাঝপথের ভরসা মেলা। এ পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার দলে থাকা মানে হচ্ছে দল জয়ের আশা করা। তা যে দলের বিপক্ষেই খেলা থাকুক। যেখানেই খেলা থাকুক। এ সিনিয়র ক্রিকেটারদের নৈপুণ্যে বাংলাদেশ জয় তুলে নিতে চায়। শুধু এ পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটারই নন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলে আছেন হার্ডহিটার সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমান রুম্মন, উইকেট আঁকড়ে থাকার মতো ব্যাটসম্যান ইমরুল কায়েস, মুমিনুল হক, লিটন কুমার দাশ, অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ ও নাসির হোসেন, পেসার মুস্তাফিজুর রহমান, তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন এবং পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন। এ ক্রিকেটাররা টেস্টে যেমনই হোক, ওয়ানডেতে নিজেদের আলাদাভাবেই মেলে ধরতে চান। মেলে ধরেনও। ওয়ানডেতে সেই মেলে ধরার প্রমাণ এরআগে বহুবার মিলেছেও। বাংলাদেশ দল ২০১৪ সালের শেষ সময় থেকেই তো জ্বলছে। এখন যে ক্রিকেটাররা দলে আছেন, তারাই তো সেই জ্বলে ওঠার পথের পথিক। তারাই দলকে ওয়ানডেতে আকাশচুম্বী সাফল্য এনে দিয়েছেন। এখন দল দক্ষিণ আফ্রিকাতেও ওয়ানডেতে সেই সাফল্য খুঁজে বেড়াচ্ছে। টেস্টে না মিললেও, ওয়ানডেতে সেই সাফল্য চাচ্ছে। মিলবে তা? ইমরুল কায়েস বলছেন মিলবে। দেশের মাটিতে বাংলাদেশ দলতো সাফল্য পাচ্ছেই। দেশের বাইরেও মিলেছে সাফল্য। সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেই তো সেমিফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ। তাই ইমরুল মনে করছেন, ‘বাংলাদেশের কন্ডিশনে আপনারা জানেন, আমরা শক্তিশালী দল। আমরা প্রমাণ করছি, এ্যাওয়েতে এসে ম্যাচ জেতা সম্ভব। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে আমরা ম্যাচ জেতা শুরু করেছি। এখানে ভাল একটা সিরিজ হবে। যদি আমরা বেটার ক্রিকেট খেলতে পারি ভাল একটা ফল হওয়া সম্ভব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আপনি ওয়ানডেতে চাইলে অনেক কিছু করতে পারেন। থিতু হয়ে গেলে ইচ্ছামতো রান বের করতে পারেন। টেস্ট ক্রিকেটে চাইলেও আপনি ইচ্ছামতো রান বের করতে পারবেন না। যেদিকে শট খেলতে চাইবেন সেদিকে ফিল্ডার রাখে। সেখানে আউট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আমার মনে হয়, টেস্টে বোলারদের অনেক সুযোগ থাকে ব্যাটসম্যানদের আউট করার জন্য। ওয়ানডেতে এটা ভিন্ন হবে।’ এখন বাংলাদেশের সব মনোযোগ যে ওয়ানডে সিরিজকে ঘিরেই তাও জানালেন ইমরুল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৫, ১৮ ও ২২ অক্টোবর যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডেতে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজ নিয়েই এখন মেতে আছেন ক্রিকেটাররা। টেস্ট সিরিজের সব ব্যর্থতা ভুলে নতুনভাবে শুরু করতে চান। এজন্য সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে প্রধান কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহে সভাও করেছেন। বুধবার থেকে পুরোদমে ওয়ানডে সিরিজের জন্য অনুশীলনও শুরু করে দিয়েছে মাশরাফিবাহিনী। ইমরুল বলেছেন, ‘এখন আমাদের মনোযোগ ওয়ানডে ক্রিকেটের দিকে। আমার মনে হয়, টেস্টের উইকেট আর ওয়ানডের উইকেট ভিন্ন হবে। ওয়ানডেতে ওরা রান বেশি করতে চাইবে। রান বেশি করার জন্য ফ্ল্যাট উইকেট বানাতে পারে। কেমন উইকেট পাব তার ওপর নির্ভর করবে খেলাটা কেমন হবে।’ সিনিয়র ক্রিকেটারদের দিকেই যে সবার দৃষ্টি আছে, তাও বুঝিয়ে দিয়েছেন ইমরুল। বলেছেন, ‘মাশরাফি ভাই আর সাকিবের আসা, তামিমও খেলবে এবার। এমন তিনজন খেলোয়াড় না খেললে কতটা ঘাটতি থাকে সেটা তো আমরা এখানে শেষ টেস্টটা খেলে বুঝেছি। ওদের ছাড়া কতটা সংগ্রাম করতে হয়, আমরা বুঝেছি। অবশ্যই ওরা আসাতে দলের ভারসাম্য অনেক ভাল হয়েছে। আশাকরি ওয়ানডে সিরিজে ভাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আমাদের দলেও ভাল ভারসাম্য আছে এখন। ভাল খেলা হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘মাশরাফি ভাই থাকলে আমরা সবাই একসঙ্গে উপভোগ করি। তিনি অনেক মজা করেন। যারজন্য হয়তো বা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপটা অনেক সময়ে আমরা বুঝতে পারি না। এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক জিনিস। উনি এসে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে যে মোটিভেট করেন এটা অবশ্যই অনেক বড় জিনিস।’ টেস্টে বাজেভাবে হারার পরও দল এখন পুরোপুরি চাঙ্গা হয়ে আছে। সব সিনিয়র ক্রিকেটার এবং বিশেষ করে মাশরাফি যে দলের সঙ্গে আছেন। তিনি ক্রিকেটারদের চাঙ্গা করে তুলেছেন। সব ভুলে ওয়ানডে সিরিজে কিভাবে ভাল করা যায়, জয় তুলে নেয়া যায়, তা নিয়েই ভাবতে বলছেন। সেই ভাবনার ফল মিলেও যেতে পারে। তবে এরআগে মাশরাফিদের আজ প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে হবে। যে ম্যাচেই হয়তো বোঝা যাবে, ওয়ানডেতে বাংলাদেশ কেমন করবে।
×