ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নিউইয়র্কে সেমিনারে অর্থমন্ত্রী মুহিত

বাংলাদেশ ’২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণে সাফল্য অর্জন করবে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ অক্টোবর ২০১৭

বাংলাদেশ ’২৪ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণে সাফল্য অর্জন করবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যেই দারিদ্র্য দূরীকরণে সাফল্য অর্জন করবে। প্রতিশ্রুতি ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমেই বাংলাদেশ এমডিজির মতো এসডিজির লক্ষ্য অর্জন করবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেছেন। মঙ্গলবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন। টেকসই উন্নয়নের পথে অভিযাত্রা : এমডিজির পথ ধরে এসডিজি অর্জন’ শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক থিঙ্ক ট্যাংক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, এ্যাডভোকেসি এ্যান্ড গবার্ননেন্স (আইপ্যাগ)। এতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। ম্যানহাটানের মিলেনিয়াম হিলটন হোটেলের ডিপ্লোম্যাটিক বলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রধান অতিথির ভাষণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এমডিজি অর্জনের কৌশল ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এমডিজি গ্রহণ করার আগেই ১৯৯৯ সালে আমরা এর বাস্তবায়ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিই এবং নিজেদের মতো করে লক্ষ্য স্থির করি। আমাদের নিজস্ব সম্পদ এবং যা কিছু উন্নয়ন সহযোগিতা পাওয়া যায় তা দিয়েই এমডিজি বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তির ফলে ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজির অধিকাংশ লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হই। এমডিজি বাস্তবায়নের এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ কিভাবে এসডিজি অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে অর্থমন্ত্রী আন্তর্জাতিক এই সেমিনারে তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এসডিজি খুবই আলাদা। আমাদের ভাল অভিজ্ঞতা রয়েছে যার ফলে লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা এখন খুব সহজ। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রতিশ্রুতি ও দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি। এসডিজি বাস্তবায়নে বাংলাদেশ আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে বলেও অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে বক্তৃতা দেন ইউএনডিপির ব্যুরো অব পলিসি এ্যান্ড প্রোগ্রাম সাপোর্টের সহকারী প্রশাসক ও পরিচালক এবং জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মাগদি মার্টিনেজ সোলিমান । টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সামগ্রিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটি নিরবচ্ছিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করতে পেরেছে, যার ফলে দেশটির অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে ৬ ভাগের উপরে রয়েছে। মানব সম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। পাবলিক সেক্টরে জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসকল পদক্ষেপের ফলে ১৯৯১ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ৫৬ শতাংশ ছিল তা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়ে ২০১০ সালে ৩১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। তিনি সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ও ভিশন ২০২১ এর সাফল্যের কথা উল্লেখ করেন। ১৩ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিকে আইসিটি ব্যবহার করে নারী ও শিশুস্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য তিনি বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। এর আগে স্বাগত ভাষণ দেন আইপ্যাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ মুনির খসরু। তিনি ২০৩০ সালের মধ্যে সফলতার সঙ্গে এসডিজির লক্ষ্যসমূহ পূরণে এর বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে ঘনিষ্ট সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এমডিজি থেকে এসডিজিতে উত্তরণ, এমডিজির সাফল্য ও অভিজ্ঞতার ব্যবহার, স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য এসডিজির চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ এবং এসডিজি ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে উন্নয়ন অর্থনীতির ভূমিকা – এ সকল বিষয় নিয়ে সেমিনারটিকে চারটি সেশনে ভাগ করা হয়। সেশনগুলোতে কী নোট স্পীকার ছিলেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশনের পরিচালক সারাহ্ ক্লিফ ইউএনডিপির পরিচালক নিক শিকরান, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন বিভাগের প্রফেসর রুথ ডেফরাইস এবং দ্যা ব্রুকলিন ইনস্টিটিউশনের বৈশ্বিক অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক সিনিয়র ফেলো এ্যান্থনি এফ পিপা । যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষণাবিদ, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশ ও বিশ্বের ১৬ খ্যাতনামা ব্যক্তিত্ব সেশনগুলোতে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেয়। সেশনগুলোতে মডারেটর ছিলেন, ক্যাটো ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর গ্লোবাল লিবার্টি এ্যান্ড প্রসপারিটি বিভাগের সিনিয়র ফেলো সোয়ামিনাথান এস আঙ্কেলেশ্বরিয়া আইয়ার, গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফাউন্ডেশনের পরিচালক লরেন ব্রাডফোর্ড, ইউএনডিপির তুরস্কের প্রতিনিধি ক্যারোলিনা মিজেক ক্যালিয়াস এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের ইউএন প্রতিনিধি বিজর্ন গিলস্যাটার । সেশনের শেষে ভ্যালেডিক্টরি স্পীচ প্রদান করেন জাতিসংঘের এসজিডি বিষয়ক গ্লোবাল এ্যাডভোকেট ও হেলথ্ এমপ্লয়মেন্ট ও ইকোনমিক গ্রোথের হাই লেভেল কমিশনার ডাঃ আলয়া মুরাবিট । বাংলাদেশ ডেলিগেশনের মধ্যে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য সিনিয়র সচিব সামসুল আলম, অর্থ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব কাজী শফিকুল আজম। সেমিনারে বক্তারা বাংলাদেশে এমডিজি বাস্তবায়নের সাফল্য এবং এই অভিজ্ঞতা দিয়ে বাংলাদেশ এসডিজি বাস্তবায়নেও সফল হবে এই প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেন।
×