ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কলাপাড়ায় পৌরশহরে খাস পুকুর দখলের পায়তারা

প্রকাশিত: ২২:২১, ১১ অক্টোবর ২০১৭

কলাপাড়ায় পৌরশহরে খাস পুকুর দখলের পায়তারা

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ কলাপাড়া পৌরশহরের অধিকাংশ খাবার হোটেল এবং চায়ের দোকানে ব্যবহার হচ্ছে অনিরাপদ পানি। ফলে সাধারণ মানুষ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে সংক্রমিত হচ্ছে। কলাপাড়া পৌরশহরের অধিকাংশ পুকুরের পানি এখন নিরাপদ নয়। পুকুরগুলোর পানি নিরাপদ রাখতে কোন ধরনের বিশেষ পদক্ষেপ নেই। এমনিতে কলাপাড়া পৌরশহরের কয়েকশ’ পুকুর ইতোমধ্যে ভরাট করা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ মানুষ পৌরসভার সরবরাহ করা পানি গোসলে ব্যবহার করছে। কিন্তু পান করছে গভীর নলকূপের পানি। যদিওবা অধিকাংশ বাসাবাড়িতে গৃহকত্রীরা বৃষ্টির পানি ধরে সংগ্রহ করে তা রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। কিন্তু খাবার হোটেলে ব্যবহার হচ্ছে পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি। যা মানুষ খাচ্ছে। আর চায়ের দোকানগুলোতে খাবার জন্য কেউ সাপ্লাইয়ের পানি এবং কেউ কেউ গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করছে। কিন্তু অধিকাংশ দোকানগুলোয় ব্যবহার করছে পুকুরের অনিরাপদ পানি। যা খেয়ে আশঙ্কাজনক হারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে পানিবাহিত ডায়রিয়া, জন্ডিস, টাইফয়েডসহ বিভিন্ন রোগে। ১৯৯৮ সালের মে মাসের এক তথ্যে জানা যায় কলাপাড়া পৌরসভায় এক সময় ৬৪০টি পুকুর ছিল। যার অর্ধেক তখন দখল ও ভরাট হওয়ার কথা বলা হয়েছে। পটুয়াখালী বরগুনা মৎস চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্প পরিচালিত এক জরিপের তথ্য ছিল এটি। বর্তমানে পুকুর ভরাট হয়ে গেছে প্রায় ৮০ ভাগ। পৌরশহরে খাস পুকুর ছিল ২৪টি। এসব পুকুরও সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। এসব পুকুরের পানি এখন দুষিত হয়ে আছে। যা মানুষ দেদারছে গোসলসহ রান্নার কাজে ব্যবহার করছে। আর খাবার হোটেল ও চায়ের দোকানে এসব পানির তৈরি চা হরদমে খাওয়াচ্ছে। এ পানি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় না ফোটালে দুষণমুক্ত না হওয়ার কথা। আর হোটেলের থালা-বাসন থেকে চায়ের কাপ সবকিছু ওই দুষিত পানি দিয়ে ধোয়ার কাজ চলছে। ফলে হচ্ছে না জীবানুমুক্ত। যা জনস্বাস্থ্যের জন চরম ঝুকিপুর্ণ। পৌরশহরের অফিস মহল্লার খাস পুকুরটি এখন শহরের অধিকাংশ চায়ের দোকানিসহ একটি বড় জনগোষ্ঠী ব্যবহার করছে। অথচ ওই পুকুরটির উত্তর পাড়ে পুকুরসহ দখল করে তোলা হয়েছে স্থাপনা। এসব পরিবারের টয়লেটের আউট লাইন চুইয়ে পানি পুকুরে আসছে। এছাড়া কোন ধরনের বিশেষ সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় মল-মূত্র পানিতে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে। নাচনাপাড়া চৌরাস্তার খাস পুকুরটি দখল করে ভরাট করে মার্কেট করা হয়েছে। এভাবে আবার কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে সরকারি খাস পুকুরগুলো দখল করে মাছ চাষ করছে। গোবরসহ সার প্রয়োগে ওই পানি আর নিরাপদ থাকছেনা। মানুষ বর্জ্য ফেলে ভাগাড়ে পরিণত করেছে কোন কোন পুকুর। এক সময় মানুষ স্বাচ্ছন্দে জীবনযাপন এবং ব্যবহারের নিরাপদ পানির নিশ্চয়তা বিধানকল্পে বাড়ির সামনে পেছনে দু’টি করে পুকুর খনন করেছে। কিন্তু বর্তমানে ফ্রি-স্টাইলে তাৎক্ষণিক লাভের আশায় পুকুর ভরাট করায় নিরাপদ পানির ব্যবহারে চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। প্রাকৃতিক জলাধার আইনে কোন ধরনের পুকুর ভরাট করার সুযোগ নেই। কিন্তু আইনের প্রয়োগ নেই। ফলে মানুষের সবচেয়ে অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজন নিরাপদ পানির উৎসগুলো পুকুর দেদার নষ্ট হয়ে গেলেও সংশ্লিষ্ট প্রশাসন রয়েছেন নির্বিকার। নেই সামাজিক কোন দায়বদ্ধতা পর্যন্ত। কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার জেএইচ খান লেনিন জানান, পুকুর ভরাটে নিরাপদ পানির সঙ্কটের কারণে বর্তমানে ডায়রিয়াসহ জন্ডিস, টাইফয়েডের রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। এমনকি মানুষ হেপাটাইটিস বি ভাইরাসেও আক্রন্ত হচ্ছে অনিরাপদ পানির ব্যবহারে। পরিবেশ বিশেষঞ্জের মতে পৌর এলাকায় ব্যক্তিগতভাবে পুকুর খনন কিংবা ভরাটের জন্য পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়া কত সংখ্যক মানুষের ব্যবহারের জন্য কত পুকুর দরকার তা সংরক্ষণের দায়িত্ব পৌর কর্তৃপক্ষের। এব্যাপারে কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার জানান, পৌরসভার নিয়ন্ত্রণে যেসব পুকুর জনস্বার্থে সংরক্ষণ করা দরকার তা রক্ষার্থে পৌরসভার উদ্যোগ রয়েছে। এর পানিও পরিস্কার এবং ভাল। কিন্তু পৌর এলাকায় কিছু বড় বড় পুকুর ভূমি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে থাকায় তার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ পৌরসভা করতে পারছে না। ওইসব পুকুরের পানি অস্বচ্ছ এবং ব্যবহার অনুপযোগী মনে হচ্ছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) খন্দকার রবিউল ইসলাম জানান, অফিস মহল্লার খাস পুকুরসহ সকল খাস পুকুর থেকে দখলদার পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হবে।
×