ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উৎকোচ বাণিজ্যের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০১:০৩, ১০ অক্টোবর ২০১৭

জামালপুরে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উৎকোচ বাণিজ্যের অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের কাছ থেকে উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরুদ্ধে ১০৩ জন শিক্ষকের শ্রান্তি বিনোদনের বিল পাশ করতে শিক্ষকদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা হারে ১৯৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ৪০০ টাকা হারে উৎকোচ নিয়েছেন। এছাড়াও মাদারগঞ্জের ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে বিদ্যালয় উন্নয়ন কাজের বিল ছাড় করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাদারগঞ্জ উপজেলার কায়স্থপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. দুলাল মিয়া ৯ অক্টোবর ঢাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে ভুক্তভোগী শিক্ষকদের পক্ষে লিখিত অভিযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অভিযোগে জানা গেছে, মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: খোরশেদ আলম সম্প্রতি ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১০৩ জন শিক্ষকের জন্য সরকারের বরাদ্দকৃত শ্রান্তি বিনোদনের বিল পাশ করেন। এই বিল পাশ করানোর নামে তিনি ১০৩ জন শিক্ষকের কাছে থেকে ৫০০ টাকা হারে ৫১ হাজার ৫০০ টাকা উৎকোচ নেন। এ ছাড়াও গত বছর মাদারগঞ্জ উপজেলার ১৯৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়নে সরকার স্লিপের ৪০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। ওই বিদ্যালয়গুলোর প্রধান শিক্ষকেরা বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় সরকারের বরাদ্দের স্লি¬পের ৪০ হাজার টাকার জন্য ভ্যাট বাবদ ২ হাজার ২০০ টাকা হারে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে জমা দিতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা স্ব স্ব বিদ্যালয় প্রধানকে স্লি¬পের টাকার ভ্যাট সরাসরি পরিশোধে নিষেধ করেন। তিনি শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে একটি চালানেই ১৯৬টি বিদ্যালয়ের ভ্যাটের টাকা জমা দেওয়ার কথা বলে প্রত্যেক প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ভ্যাট বাবদ ২ হাজার ২০০ টাকার সাথে আরও ৪০০ টাকা সেলামিসহ মোট ২ হাজার ৬০০ টাকা হারে জমা নেন। এতে তিনি মাদারগঞ্জের ১৯৬টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে ৭৮ হাজার ৪০০ টাকা হাতিয়ে নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রধান শিক্ষক জানান, মাদারগঞ্জের ১১টি বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ইমারজেন্সি অব ইডুকেশন খাত থেকে টাকা বরাদ্দ হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ৩০শে জুনের আগেই বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ওই ১১টি বিদ্যালয়ের বিল পরিশোধের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারী রাফেজা বেগমের মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ২০ হাজার টাকা করে সেলামি দাবী করেন। কিন্তুু ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকগন প্রথমে সেলামির টাকা দিতে অপারগত প্রকাশ করায় গত ৩০ জুনের মধ্যে টাকা পরিশোধের সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: খোরশেদ আলম ১১টি বিদ্যালয়ের অনুকুলে বরাদ্দকৃত ৩৭ লক্ষাধিক টাকা তার ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করেন। পরবর্তীতে তার দাবীকৃত ঘুষের টাকা আদায় করে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় উন্নয়ন কাজের ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ছাড় করেন। তবে চরপাকেরদহ দিকপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ২০ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে ওই বিদ্যালয় উন্নয়ন কাজের ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সরকারী তহবিলে ফেরত দিয়েছেন। মাদারগঞ্জের চর পাকেরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আশরাফ হোসেন বলেন, সরকারি বিধি উপেক্ষা করে মোটা অঙ্কের উৎকোচ নিয়ে তাদের বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের চেষ্টা করায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে তিনি জামালপুর আদালতে একটি মামলাও দায়ের করেন। এ ব্যাপারে মাদারগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: খোরশেদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শ্রান্তি বিনোদনের বিল পাশ করতে কোন ঘুষ নেইনি। স্লি¬পের টাকার ভ্যাট ২ হাজার ২০০ টাকা হিসেবে জমা দেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষকেরা কেন ২ হাজার ৬০০ টাকা করে জমা তারা তারাই জানেন। এ ছাড়াও ১১টি বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ সঠিক সময়ে শেষ না হওযায় জুনের আগে ইমারজেন্সি অব ইডুকেশন খাতের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
×