ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গুজরাটে শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বিজেপি

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ১০ অক্টোবর ২০১৭

 গুজরাটে শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে চায় বিজেপি

অনলাইন ডেস্ক ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি'র সভাপতি অমিত শাহ'র রাজ্য গুজরাট। কয়েক মাসের মধ্যেই সেখানে বিধানসভা নির্বাচন। স্বাভাবিক ভাবেই এই নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়ে চলেছে ক্রমশ। ক্ষমতাসীন বিজেপি যে কোনও ভাবেই রাজ্যে শাসন ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। গত মাসে বিজেপি প্রধান অমিত শাহ গুজরাট সফর করেছেন, আর প্রধানমন্ত্রী দিন কয়েক আগে রাজ্য সফরে গিয়ে ১২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করে এসেছেন। ১৬ অক্টোবর তিনি আবারও যাবেন গুজরাটে। অন্যদিকে কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গান্ধীও বারে বারেই গুজরাট ছুটে যাচ্ছেন। ক্ষমতাসীন আর বিরোধী - দুই পক্ষই গুজরাট জয়ের চেষ্টা করে চলেছে জোর কদমে। তবে এরই মধ্যে অমিত শাহ'র পুত্র জয় শাহ হঠাৎ বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে এসেছেন। একটি সংবাদ ওয়েবসাইট তাদের তদন্তমূলক প্রতিবেদনে লিখেছে যে জয় শাহ'র বাণিজ্যিক সংস্থা এক বছরের মধ্যেই ১৬ হাজার গুণ টার্নওভার বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। বিরোধী দলগুলি দাবী তুলছে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের। কংগ্রেস মুখপাত্র কপিল সিব্বল ওই ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন উল্লেখ করে অভিযোগ তুলেছেন যে ২০১৫-১৬ - এই এক বছরে জয় শাহর সংস্থাটি মাত্র ৫০ হাজার টাকার ব্যবসা থেকে হঠাৎই ৮০ কোটি টাকার ব্যবসা কী করে করতে পারল? বিজেপি অবশ্য বলছে, অমিত শাহকে বদনাম করার জন্যই ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। জয় শাহ ওই ওয়েবসাইটের সম্পাদক ও প্রতিবেদন সহ আরও কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেছন। এই ঘটনায় সরকার কী ভূমিকা নেবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। কিন্তু গুজরাট নির্বাচনের আগে দলের বিরুদ্ধে এধরনের অভিযোগ বিজেপি'র ফলাফলের ওপরে প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অমিত শাহ দীর্ঘদিন ধরেই গুজরাতে বিজেপি'র বড় নেতা। তাই তাকে জড়িয়ে যে কোনও বিষয়ই রাজ্য বিজেপির ওপরে প্রভাব ফেলবে, এটাই স্বাভাবিক। অন্যদিকে গুজরাটে দলিতদের বিক্ষোভও বাড়ছে ক্রমশ। আনন্দ জেলায় এ মাসের গোড়ায় গরবা নাচ দেখতে যাওয়ার 'অপরাধে' একদল লোক প্রকাশ সোলাঙ্কি নামে ১৯ বছর বয়সী একটি দলিত কিশোরকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। গান্ধীনগর জেলায় শুধু গোঁফ রাখার কারণে ১৭ আর ২৪ বছর বয়সী দুই দলিত যুবককে পেটানো হয়েছে। দশেরার দিন আহমেদাবাদে প্রায় ৩০০টি দলিত পরিবার বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হয়েছেন। এই সব ঘটনাগুলিতেই বিজেপিকে দোষারোপ করা হচ্ছে। রাজ্যের প্রায় সাড়ে ছয় কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৩৬ লক্ষ দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। কিন্তু সেই অনুপাতে রাজ্য রাজনীতিতে দলিতদের প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। আর নির্বাচনের সময়ে প্রত্যেকটি ভোটই যে গুরুত্বপূর্ণ , তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে আরও একটা ধাক্কা খেয়েছে বি জে পি, যখন সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব আহমেদ প্যাটেল গুজরাট থেকে রাজ্যসভার নির্বাচনে জিতে বেরিয়ে গেছেন। মি. প্যাটেলের জয় আটকাতে বি জে পি সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাজি মাত করে বেরিয়ে যান সোনিয়া গান্ধীর রাজনৈতিক সচিব। ওই ভোটের আগে কংগ্রেস দলের বিধানসভার সদস্য - যারা রাজ্যসভা নির্বাচনের ভোটার, তাঁদের দল থেকে ভাঙ্গিয়ে আনার চেষ্টা করছে বলেও বিজেপি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। এক বড় মাপের কংগ্রেস নেতা শঙ্কর সিং বাঘেলা তাঁর সমর্থকদের নিয়ে কংগ্রেস ছেড়েও বেরিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্যসভার নির্বাচনে সোনিয়া গান্ধীর সচিবকে পরাজিত করে কংগ্রেসের মনোবল ভাঙ্গার চেষ্টায় ব্যর্থ হয় বি জে পি। অন্যদিকে ওই জয়ের পরে গুজরাতে কংগ্রেস নেতা কর্মীদের মনোবলও নিশ্চিতভাবেই বেড়েছে। একদিকে যখন দলিত সম্প্রদায়ের ওপরে একের পর এক হামলার ঘটনা সামনে আসছে, তার অনেক আগে থেকেই পাটিদার সম্প্রদায় সংরক্ষণের দাবীতে বড়সড় আন্দোলন চালাতে শুরু করেছে রাজ্যে। পাটিদারদের যুব নেতা হার্দিক প্যাটেল নিজের সম্প্রদায়ের স্বার্থ নিয়ে আন্দোলন করার বাইরে রাজনৈতিক ভাবেও যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তাঁদের দাবী যে দল মেনে নেবে, তাদের সমর্থন দিতে তৈরি হার্দিক প্যাটেল। পাটিদার সম্প্রদায় এমনিতেই বি জে পি-র ওপরে ক্ষুব্ধ। সেটা বিজেপি সভাপতি নিজেও টের পেয়েছেন। পয়লা অক্টোবর 'গুজরাট গৌরব যাত্রা' শুরু করার আগেই পাটিদার যুবকদের বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছিল অমিত শাহকে। সভায় তার বক্তৃতা শুরু করতেই একসঙ্গে অনেক পাটিদার যুবক উঠে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। অভিযোগ উঠেছিল যেসব যুবকরা সেদিন স্লোগান দিচ্ছিলেন, পুলিশ নাকি তাদের পিটিয়েছে। এই পাটিদার সম্প্রদায় গুজরাটের রাজনীতিকে যথেষ্ট প্রভাবশালী। এরা এক সময়ে কংগ্রেসকে সমর্থন দিত, কিন্তু তারপরে বিজেপিকে সমর্থন করা শুরু করে। এখন অবশ্য পাটিদার সম্প্রদায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের নেতৃত্বাধীন আম আদমি পার্টি। অন্যদিকে সংরক্ষণের ইস্যুতে পাটিদাররা ক্ষমতাসীন বি জে পি-র দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এই ক্ষতিটা হয়তো বিজেপি-কে সামলাতেই হবে। রাজনৈতিক বিরোধিতার সঙ্গেই বিজেপি কে সামাল দিতে হচ্ছে ব্যবসায়ী মহলকেও। ভারতে যে নতুন জিএসটি কর ব্যবস্থা চালু হয়েছে, তার ফলে গুজরাটের অতি প্রভাবশালী বস্ত্র শিল্প মহল বেশ ক্ষুব্ধ। বস্ত্র শিল্প মালিকরা জিএসটি চালু করার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও দেখিয়েছে যাতে ওই শিল্পে ধার্য করা জি এস টি তুলে নেওয়া হয়। ওই করের ফলে কাপড়ের দাম বাড়বে, আর তাতে শিল্পের ক্ষতি হবে - এটাই বস্ত্র শিল্প মহলের যুক্তি। নির্বাচনের আগে ব্যবসায়ী আর শিল্পপতিদের মন রাখতে কেন্দ্রীয় সরকার জিএসটি-র নিয়ম বেশ কিছুটা শিথিল করেছে। সব মিলিয়ে গুজরাট নির্বাচনের আগে নানা দিক থেকেই বিজেপি কিছুটা চাপে পড়েছে বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এখন এটাই দেখার মাস্টার স্ট্র্যাটেজিস্ট বলে খ্যাত অমিত শাহ আর নরেন্দ্র মোদী সেই চাপ কীভাবে সামাল দেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা
×