ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২০ লাখ টন চাল ও গম আমদানি করা হচ্ছে

চালের বাজারে স্বস্তি প্রতিদিন দাম কমছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চালের বাজারে স্বস্তি প্রতিদিন দাম কমছে

এম শাহজাহান ॥ অভিযানের মুখে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভেঙ্গে যাওয়ায় স্বস্তি নেমে এসেছে চালের বাজারে। মোকাম, পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম কমছে প্রতিদিন। সঙ্কট মেটাতে আপাতত সরকারী পর্যায়ে ২০ লাখ টন চাল ও গম আমদানি করা হবে। এছাড়া খাদ্য ঘাটতি দূর করতে বেসরকারী পর্যায়ে আমদানি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। দাম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ২ শতাংশ শুল্কে চাল আমদানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে আবারও আমদানি শুল্ক বাড়ানো হতে পারে। শুল্কমুক্ত সুবিধা গ্রহণে বেসরকারী পর্যায়ে দেশের বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপ চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খুলেছে। এসব চাল আসবে ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া এবং মিয়ানমার থেকে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সারা বছরে দেশে চালের চাহিদা রয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। গত কয়েক বছর এই পরিমাণের চেয়েও বেশি চাল উৎপাদন করার সক্ষমতা অর্জন করে বাংলাদেশ। ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে চাল রফতানিও করা হয়। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশকে বিশ্ব চীনে নতুনভাবে। কিন্তু হঠাৎ করে হাওড়ে আগাম বন্যা এবং পরবর্তীতে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলায় বন্যায় কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় ধানের। এ কারণে চালের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়। চাল থেকে অতি মুনাফা লুটে নিতে গড়ে ওঠে শক্তিশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্র। তবে অভিযানের মুখে এই চক্রটির অসাধু কর্মকা- প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে। আর এতেই এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠছে চালের বাজার। জাত ও মানভেদে মোটা চাল নেমে এসেছে ৫০ টাকার নিচে। গত এক সপ্তাহ আগেও মোটা চাল কিনতে ভোক্তাদের ৫৫-৬০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। এদিকে, বড় বন্যার পূর্বাভাস সামনে রেখে গত আগস্ট মাসে খাদ্য মজুদ বাড়াতে সরকার দুই মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা চালের আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আমদানি শুল্কের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। ওই সময় খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে ভারত ও বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে চাল আমদানির সম্ভাবনা আরও বাড়বে বলে সরকার মনে করছে। সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে ১৫ লাখ টন চাল এবং ৫ লাখ টন গম বিদেশ থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, ইতোপূর্বে বিদেশ থেকে চাল আনতে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্কের সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি দিতে হতো। জুনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১০ শতাংশ করার পাশপাশি রেগুলেটরি ডিউটি পুরোপুরি তুলে নেয়া হয়। এর পাশাপাশি সরকারী পর্যায়েও এখন চাল আমদানি শুরু হয়েছে। জানা গেছে, এবার এক কোটি ৯১ লাখ মেট্রিক টন বোরো চাল উৎপানের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হলেও বন্যা ও ব্লাস্ট রোগের কারণে উৎপাদন হয়েছে তার চেয়ে ২০ লাখ টন কম। বোরো মৌসুমে সরকার মোট ১০ লাখ টন চাল এবং দেড় লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছিল। কিন্তু সব মিলিয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার টন বোরো এবার সংগ্রহ করা যাবে বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় আভাস দিয়েছে। সরকারীভাবে চাল আমদানি ছাড়াও টেন্ডারের মাধ্যমে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন চাল আসছে। এর মধ্যে তিন লাখ টনের চুক্তিপত্র হয়েছে, বাকি ৫০ হাজার টনের চুক্তি প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া যে ১৫ লাখ টন চাল এ অর্থবছর আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তার মধ্যে সাড়ে ৭ লাখ টন আমদানির প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এদিকে, দেশের খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলায় চাহিদার অতিরিক্ত চাল আমদানি না করতে খাদ্যমন্ত্রীকে ইতোপূর্বে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এছাড়া কৃষকদের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ইতোপূর্বে অনির্ধারিত আলোচনায় এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও খাদ্যমন্ত্রীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। চলতি বছর দেশে দেশে খাদ্য ঘাটতি ২০ লাখ টন আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর তাই ২০ লাখ টনের বেশি খাদ্যশস্য যেন আমদানি করা না হয় সেই বিষয়টিও সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। যদিও শুল্ক কমানোর ফলে বেসরকারী পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চালের বেশকিছু বড় চালান দেশে এসে গেছে। খাদ্য সচিব মোঃ কায়কোবাদ হোসাইন জানান, এ পর্যন্ত সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পদ্ধতিতে মোট ৯ লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে দুই লাখ টন চাল এসেছে। দেড় লাখ টন চাল আসছে। বাকি সাড়ে ৫ লাখ টন চাল ১২ নবেম্বরের মধ্যে আসবে। এছাড়া বেসরকারীভাবে ২৫ লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে ১০ লাখ টন স্থল, নদী ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে ঢুকেছে। বাকি চাল দেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে। আর দেশে ১৭ হাজার হাস্কিং মিল ও ৩ শতাধিক অটো রাইস মিল মজুদ থেকে চাল সরবরাহ করতে পারবে আরও চার মাস। তা ফুরানোর আগেই নবেম্বর-ডিসেম্বরে প্রায় সোয়া কোটি টন আমনের ফলন যোগ হবে। এসব কারণে দেশে চালের সঙ্কট হওয়ার কোন কারণ নেই। প্রতিটি জেলায় অভিযান অব্যাহত থাকবে চট্টগ্রামে ৮০ হাজার, গাইবান্ধায় ২ হাজার বস্তা চাল আটকের পর সারাদেশের চালের গুদামগুলোতে অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ চাল মজুদের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। অভিযান জোরদার করতে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে দেশের সকল জেলা প্রশাসকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। দাম না কমা পর্যন্ত ওএমএস চাল ও আটা বিক্রি দাম নিয়ন্ত্রণে খোলাবাজারে (ওএমএস) ১৫ টাকা কেজি দরে চাল এবং ১৭ টাকা করে আটা বিক্রি শুরু করেছে সরকার। এছাড়া ৫০ লাখ মানুষের কাছে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কার্যক্রম শীঘ্রই চালু করা হবে, চলবে তিন মাস পর্যন্ত।
×