ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মোহাম্মদপুর নিউ ওয়েলফেয়ার হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান

অপকৌশলে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা, বিপুল অর্থ আদায়

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অপকৌশলে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা, বিপুল অর্থ আদায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারী হাসপাতালে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণার অভিযোগে ১২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ ও জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। দ-প্রাপ্তরা হচ্ছে, বাবুল হোসেন (৩২), হালদার (৩০), মোঃ জাহিদ আহমেদ (৩৯), মোঃ সাদেক (৩৪), মোঃ রিয়াজ আহমেদ (৩৪), মোঃ সোহাগ (৩১), বি আর আহমেদ শরীফ (৪০), দেলোয়ার হোসেন (৬২), মোঃ জাহিদ হোসেন (২৩), মোঃ মিজানুর রহমান (৩৬), মোঃ সাইফুল ইসলাম (৩২), মোঃ ইসলাম (২৫)। এদের মধ্যে দুইজনকে তিন বছরের কারাদ , পাঁচজনকে দুই বছরের কারাদ , একজনকে দুই লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদ , তিনজনকে তিন মাসের কারাদ এবং একজনকে দুই মাসের কারাদ দেয়া হয়। র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলম জানান, রবিবার রাত ১০টা থেকে তিনটা পর্যন্ত র‌্যাব-২ এর উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত মোহাম্মদপুর নিউ ওয়েলকেয়ার হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি জানান, শেরেবাংলা নগরের জাতীয় পঙ্গু হাসপাতাল থেকে দালাল চক্রের মাধ্যমে রোগীদের প্রতারণামূলকভাবে সুচিকিৎসার প্রলোভনে ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার কর্তৃক মৌখিক রেফার্ড করার মিথ্যা কথা বলে। বিভিন্ন অপকৌশলে মোহাম্মদপুরের নিউ ওয়েলকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসার নামে প্রথমেই বিভিন্ন ধরনের ডায়াগনস্টিক টেস্ট, ওষুধ ও সার্জিক্যাল সামগ্রী কেনা ও সার্ভিস চার্জসহ একটি ভুতুড়ে বিল ধরিয়ে দিয়ে রোগী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে বিপুল অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। র‌্যাব জানায়, এমন অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। আদালত চলাকালে দেখা যায়, নিউ ওয়েলকেয়ার হাসপাতালে গ্রামের অসহায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত রোগীদের ভয় দেখিয়ে যেমন পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হলে রোগীর হাত-পা কেটে ফেলতে হয়। আমাদের ক্লিনিকে আসুন ওষুধ দিয়ে আরোগ্য লাভ করবেন। কিন্তু ভর্তি করানোর পর অপারেশনসহ ওষুধের বিল বাবদ লাখ লাখ টাকা দাবি করে। এমনকি টাকা পরিশোধ করার জন্য অনেকেই নিজের ভিটে-মাটি বিক্রয় করেও নিষ্কৃতি পাচ্ছে না। অনেক অসহায় রোগীকে রক্ত দেয়ার নাম করে রক্তের ব্যাগ ঝুলিয়ে রেখে রক্ত চলছে জানিয়ে গ্রামের রোগীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিচ্ছে। র‌্যাব জানায়, দালালরা নিজেরাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দেয়। দ-প্রাপ্ত বি আর আহমেদ শরীফ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, প্রায় দুই বছর ধরে তিনি এ ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ অর্থোপেডিক ডাক্তার পরিচয় দিয়ে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। তিনিই পঙ্গু হাসপাতাল থেকে ভাগিয়ে আনা রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। শরীফ নাম পরিবর্তন করে ডাঃ বি আর আহমেদ শরীফ, এমবিবিএস, এফসিপিএস (অর্থোঃ) পার্ট-২, সহ ডাক্তারি ব্যবস্থাপত্র বা রোগের কোন বিবরণ বলতে না পারলেও বিভিন্ন ধরনের ডিগ্রী ব্যবহার করে আসছেন। তিনি স্বীকার করেন যে, রোগীর চিকিৎসার জন্য ওষুধ লেখার জন্য বিএমডিসির অনুমতি নাই এবং তাদের দেয়া প্রেসক্রিপশনে একদিনে দশবার ইনজেকশন দিতে হবে লেখা থাকলেও বাস্তবে তা রোগীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অপকৌশল মাত্র। এছাড়াও বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক টেস্ট, সার্জিক্যাল সামগ্রী ও ওষুধ তাদের দেয়া প্রেসক্রিপশনে লিখে থাকে এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সে সকল ওষুধ, ডায়াগনস্টিক টেস্ট, সার্জিক্যাল সামগ্রী তাদের কাছ থেকে কিনতে বাধ্য করা হয়, যা বিক্রি করে তারা বাজারমূল্যের চেয়ে অধিকহারে অর্থ অবৈধভাবে গ্রহণ করছে। র‌্যাব জানায়, ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে হাসপাতালের একটি রুম থেকে বিদেশী মদ ও গাঁজা নিয়ে মেতে থাকা অবস্থায় হাসপাতালের মালিকপক্ষ ও তাদের এজেন্ট দালালচক্রের আটজনকে আটক করে র‌্যাবের আভিযানিক দল। আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, পঙ্গু হাসপাতালের রোগীদের যারা রাতের বেলায় ভর্তি হতে আসে তাদের সুকৌশলে ভাগিয়ে নেয়ার জন্য দালালচক্র পঙ্গু হাসপাতালের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। একে অপরকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসেবে ভুয়া পরিচয় দিয়ে রোগীদের অখ্যাত হাসপাতালসমূহে কমিশনের লোভে রোগীদের পাঠিয়ে দিয়ে আসছে। গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে পঙ্গু হাসপাতাল এলাকা থেকে দালাল চক্রের আরও চার সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে বাবুল হোসেনের নামে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, রিয়াজ আহমেদের নামে ঢাকা জেলার সাভার এবং প্রশান্ত হালদারের নামে মাদারীপুর জেলার ডাসার থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মাতৃভক্তি চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক হু মিং প্রতিদিন ক্লাস নিতে মাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। ৫৪ বছর বয়সী হু মিং। এই বয়সেও কেন মাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন; তা নিয়েই এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড়। সব আলোচনার সমাপ্তি টেনে হু মিং স্থানীয় একটি গণমাধ্যম বলেন, তিনি পরিবারের বড় ছেলে। ২০১১ সালে সেরিব্রাল হেমারেজে তার বাবা মারা যান। এর পর আলঝেইমারে আক্রান্ত হন তার মা। কিছুই মনে রাখতে পারেন না তিনি। নিজের অস্তিত্ব ছাড়া এখন কারও অস্তিত্বই টের পান না ৮৪ বছরের এই বৃদ্ধা। কোন কিছু হাতে রাখলে মনে করতে পারেন না, জিনিসটা কী। এ রোগের এমনই ধারা। এ অবস্থায় বাড়িতে ছোট বোনদের কাছে মাকে রেখে আসতে ভরসা পান না হু মিং। প্রতিদিনই ক্লাস নিতে তাই বৃদ্ধ মাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খুব মানবিক বিবেচনাতেই নিয়েছেন। বেজিং ইয়ুথ ডেইলিতে দেয়া সাক্ষাকারে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রথম দিন আমি বুঝতে পারিনি ক্লাসে সবার পেছনে বসে থাকা এই বৃদ্ধা কে। আমরা তাকে জ্যেষ্ঠ শিক্ষিকা বলে মনে করেছিলাম। পরে বুঝতে পারি তিনি কে। অধ্যাপকের মাতৃভক্তি অসাধারণ। আমাকে এ ঘটনা নাড়া দিয়েছে।’-বিবিসি অনলাইন
×