ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন স্থানে

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন স্থানে

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ রাখাইন থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা বিভিন্নভাবে ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে সিলেট অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। তাদের আবার ফেরত পাঠানো হয়েছে শরণার্থী ক্যাম্পে। ছড়িয়ে পড়া এসব রোহিঙ্গাদের খুঁজে পাওয়ার বিষয় নিয়ে সমস্যা রয়েছে। বিশেষ করে সিলেট শহর ও শহরতলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো রয়েছে কলোনি। এসব কলোনিতে নিম্নআয়ের লোকেরা বসবাস করে থাকে। বিভিন্ন জেলা থেকে কাজের সন্ধানে আগত দিনমজুর ঠেলা, রিক্সাওয়ালা, ভ্যানচালক, ফেরিওয়ালা শ্রেণীর লোকেরা কলোনির একটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে দিনযাপন করে থাকে। অনেকটা ভাসমান জীবনযাপনকারী এসব লোকের সঠিক পরিচয়ও থাকে না কলোনির মালিকদের কাছে। যে কারণে সহজেই বিভিন্ন শ্রেণীর লোকেরা কলোনিতে আশ্রয় নিয়ে নিরাপদ হয়ে যেতে পারে। দিনমজুরি যে কোন ধরনের কাজও খুঁজে নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গারা এই পথ অবলম্বন করে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে নিলে তাদের বের করা কঠিন হয়ে পড়বে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তারা সতর্ক রয়েছেন। সিলেটের কোথাও কোন রোহিঙ্গা পাওয়া গেলে, তাকে শরণার্থী ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হবে। এমনকি রোহিঙ্গারা যাতে বাসাবাড়ি ভাড়া নিতে না পারে, সে ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত ৩ আগস্ট ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে সিলেট পাসপোর্ট অফিসে ধরা পড়েন দুই রোহিঙ্গা নারী। তারা নিজেদের সিলেট নগরীর রায়নগর এলাকার মিতালী ৫ নম্বর বাসার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন ও নার্গিস হোসেনের মেয়ে মনোয়ারা বেগম এবং আরেকজন একই এলাকার মিতালী ৫৬ নম্বর বাসার চতুর্থতলার শেখ মাহমুদ হাছান ও হামিদা বেগমের মেয়ে মর্জিনা বেগম পরিচয় দিয়ে ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন সনদ তৈরি করেছিলেন। কিন্তু নগরীর মোগলাবাজার থানা পুলিশ তাদের আটক করে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রাম থেকে ১২ রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। এরা সেখানে নাগরিকত্ব সনদপত্রও সংগ্রহ করে ফেলেছিল তারা। মায়ানমারের আকিদা জেলার মংদু থানার ককুয়ান শিবং গ্রামের আবদুস সবুর, তার স্ত্রী আমিনা বেগম, ছেলে আবদুল হালিম, আসলাম শাহ, মেয়ে হালিমাতুস সাহিয়া, তালিহা আক্তার, হারিসা আক্তার, উম্মে বেগম, আবদুল হালিমের স্ত্রী উম্মুল খাইরিন, মেয়ে মোশাররফা ও শ্যালক কাওসার মিয়া। এরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। পরদিন ১৫ সেপ্টেম্বর পুলিশ প্রহরায় তাদের চট্টগ্রামের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়। গত রবিবার সিলেট ও শ্রীমঙ্গলে দুই রোহিঙ্গা শিশু-কিশোরকে আটক করা হয়। শ্রীমঙ্গলের উপজেলার মুসলিমবাগ এলাকা থেকে জেহাদুল ইসলামকে নামের ১১ বছরের এক রোহিঙ্গা শিশুকে আটক করে পুলিশ। জেহাদুল পুলিশকে জানিয়েছে, সে মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের মংডু গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম জসিম উদ্দিন ও মায়ের নাম শাহিনা আক্তার। তার বাবা ও মাকে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সহযোগী মগরা হত্যা করেছে বলেও জানায় জেহাদুল। রবিবার রাত ৯টার দিকে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার লালাবাজার থেকে আবদুল আমিন (১৫) নামের কিশোরকে আটক করা হয়। তার বাড়ি মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রেলওয়ারী উপজেলার বুজিডং গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুর রশিদ এবং মায়ের নাম হামিদা বেগম। লালাবাজারে ঘোরাঘুরি করার সময় স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা তাকে আটক করে পুলিশে খবর দেন। দক্ষিণ সুরমা থানায় থাকা ওই কিশোর জানায়, তিন দিন আগে কক্সবাজারের উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে তারা ৩ কিশোর পালিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। তবে দুইজন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে সে (আবদুল আমিন) সিলেটে চলে আসে।
×