ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজ দেবীর বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আজ দেবীর বোধন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আজ দেবীর বোধন। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙ্গার জন্য বন্দনা পূজা করা হবে। মন্ডপে-মন্দিরে আজ সোমবার পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এ বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হবে। শারদোৎসবের আগমনী বার্তায় মাতোয়ারা চারদিক। আনন্দময়ীর আগমনী সুরে অনুরণিত বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে। আগামীকাল মঙ্গলবার খগড়-কৃপাণ, চক্র-গদা, তীর-ধনুক আর ত্রিশূল হস্তে শক্তিরূপেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধে মন্ডপে মন্ডপে ঠাঁই নেবেন। জেগে উঠবেন দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দশভুজা দেবী দুর্গা। আজ বোধনে খুলে যাবে দশপ্রহরণধারিণী ত্রিণয়নী দেবী দুর্গার অতল স্নিগ্ধ চোখের পলক। শুরু হবে পাঁচদিনব্যাপী বাঙালী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোপূজা। বোধন দুর্গাপূজার অন্যতম একটি আচার। বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। সাধারণত শুল্কাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন হলেও এবার তিথি অনুযায়ী পঞ্চমীতেই বোধন পড়েছে। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান রয়েছে। বিভিন্ন পূরাণ অনুসারে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার উদ্দেশে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকালবোধন নামে খ্যাত। তবে বসন্তকালের চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা তথা বাসন্তীপূজা অনুষ্ঠিত হয় তাতে বোধন করার প্রয়োজন হয় না। আগামীকাল মঙ্গলবার ষষ্ঠীতে দশভুজা দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। ২৭ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষ্ঠমী ও কুমারী পূজা, ২৯ সেপ্টেম্বর মহানবমী শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গোৎসব। শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে এখন ঘুম নেই হিন্দু সম্প্রদায়ের কোটি কোটি বাঙালী নর-নারীর। সর্বত্রই শুরু হয়েছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি। দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন ও বিশ্বব্যাপী অবারিত মঙ্গলধ্বনি বয়ে যাক, দেবী দুর্গা এমন বার্তা নিয়েই আসছেন লোকালয়ে। তাই বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে এখন আনন্দের ঢল। বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায়ের চিরায়ত ঐতিহ্য অনুযায়ী এখন তাদের প্রতিটি ঘরে ঘরে মুড়ি, নাড়ু, মোয়া, মিষ্টি ও মুরকি বানানোর ধুম পড়েছে। সারাদেশের মন্ডপে মন্ডপে শিল্পীদের এখন দম ফেলানোর সময় নেই। প্রতিমার অবয়ব গড়ার কাজ শেষ করে ফেলেছেন অনেক আগেই। শেষ সময়ে এখন তারা ব্যস্ত নিপুণ তুলির আঁচড়ে বর্ণাঢ্য বিভায় মা দুর্গাকে উদ্ভাসিত করে তোলার কর্মে। শিল্পীরা জানিয়েছেন, শেষ তুলির আঁচড় দেয়া হবে আজ সোমবার বোধনের আগেই। দেবী দুর্গাকে প্রয়োজনীয় অলঙ্কার পড়ানোও হবে সেই সময়ে। নিপুণ শিল্পী তাঁর তুলির ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলবেন মা দুর্গাকে। জেগে উঠবেন সরস্বতী। গনেশের গায় উঠবে নক্সাদার কুচির দুধসাদা ধুতি। মা লক্ষ্মীর হাসি ঝড়ে পড়ে। আজ বোধনের মা দুর্গাকে জেগে উঠার আহ্বান জানানো হবে। জেগে উঠবেন দশভুজা। আশীর্বাদ দেবেন মনোবাঞ্ছা নিয়ে দূর-দূরান্ত থেকে আসা পুজারীকে। তবে মন্ডপে আলোকচ্ছটায় উদ্ভাসিত করতে ডেকোরেটরদেরও দম ফেরার সময় নেই। রাজধানীসহ সারাদেশেই সার্বজনীন পূজামন্ডপ গুলোতে চলছে চাহিদা অনুযায়ী দৃষ্টিনন্দন বিশাল বিশাল প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের বিশ্বাস, অসুরশক্তি বিনাশকারী দেবী দুর্গার আরাধনার মধ্য দিয়ে সমাজ থেকে দূর হবে সকল পাপ। সমাজে ফিরে আসবে শান্তি।
×