ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মন্ত্রণালয়ের তুঘলকি সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মী নিয়োগে জটিলতা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মন্ত্রণালয়ের তুঘলকি সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মী নিয়োগে জটিলতা

ফিরোজ মান্না ॥ মন্ত্রণালয়ের তুঘলকি সিদ্ধান্তে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মী নিয়োগে জটিলতা তৈরি হয়েছে। একক ভিসার ক্ষেত্রে কর্মীদের সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের সত্যায়ন বাধ্যতামূলক করায় সৃষ্টি হয়েছে এই পরিস্থিতির। বিশেষ করে সৌদি আরবে গমনেচ্ছুদের ক্ষেত্রে সৌদি কর্তৃপক্ষ ছাড় দিলেও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় তা মানতে নারাজ। তারা সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়া চূড়ান্ত ছাড়পত্র বন্ধ করে রেখেছে। এই জটিলতায় ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় বহু গরিব ও অসহায় কর্মী লাখ লাখ টাকায় ভিসা কিনে আজ পথে বসতে যাচ্ছে। জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান বায়রা বলছে, অহেতুক জটিলতায় কর্মী নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হচ্ছে। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সচিব অবশ্য বলছেন, বিদেশে শ্রমিকদের চাকরির নিরাপত্তার জন্যই এমন যাচাই-বছাই করা হয়। যাতে টাকা খরচ করে বিদেশ দিয়ে কর্মীদের ফেরত আসতে না হয়। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে একক ভিসায় কর্মী যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র গ্রহণে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের সত্যায়ন বাধ্যতামূলক। কাতার, বাহরাইন ও ওমানসহ বিভিন্ন দেশের একক ভিসা অনলাইনে যাচাই করা যায়। সৌদি আরবে একক ভিসায় দূতাবাসের সত্যায়ন ছাড়া ছাড়পত্র প্রদানের জন্য সৌদিতে বাংলাদেশ দূতাবাস অনেক আগেই প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে। এর ভিত্তিতেই বিএমইটি দীর্ঘদিন থেকে ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স প্রদান করে আসছে। হঠাৎ করে মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা অতি উৎসাহে একক ভিসায় সত্যায়ন ব্যতিত ছাড়পত্র প্রদান না করার সিদ্ধান্ত বলবত করেন। ফলে বহু কর্মীর ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এসব অসহায় কর্মীরা লাখ লাখ টাকায় ভিসা কিনে আজ পথে বসতে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছেÑ মন্ত্রণালয় ও বিএমইটির দু’জন কর্মকর্তা সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের ভুল বুঝিয়ে কর্মী প্রেরণের গতি ধীর করার জন্য গত ১৪ আগস্ট থেকে দূতাবাসের সত্যায়ন বাধ্যতামূলক করেছেন। এদের একজন নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে বিএমইটির দায়িত্বশীল পদে যাওয়ার জন্যই এই জটিলতা সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ কর্মীসহ বায়রা ও গণমাধ্যমের চাপে একক ভিসা প্রদানে দূতাবাসের সত্যায়ন বাধ্যবাধকতা নেই বলে মৌখিকভাবে জানালেও এখন পর্যন্ত কোন লিখিত আদেশ জারি হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, ইতোমধ্যে যাদের ক্ষতি হয়েছে তাদের দায় কে নেবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে কর্মী নিয়োগে তৈরি জটিলতা নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালযের সচিব ড. নমিতা হালদার জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতারণা ঠেকাতে আমরা কর্মীদের কর্মানুমতি ঠিক আছে কিনা তা যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যখন কোন কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে যাচ্ছেনÑ তিনি কি কাজ নিয়ে যাচ্ছেন অথবা কোন কাজ ছাড়াই যাচ্ছেন কিনা তা দেখা হচ্ছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করতে কর্মীদের আবেদনপত্রের ছবি তুলে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠানো হয়। দূতাবাস ওই কর্মীর বিস্তারিত বিষয় জেনে আমাদের জানালে তাদের বিদেশ গমন অনুমতি দেয়া হয়। আমরা একজন কর্মীর চাকরি নিশ্চিত করেই বিদেশ পাঠাতে চাই। কেউ যেন চাকরি ছাড়া বিদেশ গিয়ে বেকার না থাকে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে তারা বিদেশ গিয়ে যদি চাকরি না পান তাহলে যে কি দুঃখ এটা চোখে না দেখলে বোঝা মুশকিল। ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবস্থাটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে খুব বেশি সময় লাগছে না। জনশক্তি রফতানিকারকদের যে অভিযোগ তা সঠিক না। বায়রার সভাপতি বেনজীর আহম্মদ জনকণ্ঠকে বলেন, ডিজিটাল যুগে একজন কর্মী চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন না, চাকরি ছাড়া যাচ্ছেন তা জানতে দীর্ঘ সময় লাগার কোন বিষয় নেই। মন্ত্রণালয়ের বর্তমান পদ্ধতিতে কেন এত সময় লাগছে তা আমার জানা নেই। জনশক্তি রফতানির একটা মেয়াদ থাকে। মেয়াদের মধ্যে কর্মী যেতে না পারলে শুধু কর্মী নয় সংশ্লিষ্ট জনশক্তি রফতানিকারকদের বিরাট ক্ষতির শিকার হতে হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে একজন কর্মীর বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এতে কর্মীদের বিদেশে যেতেও দেরি হচ্ছে। ১৪শ’ জনশক্তি রফতানিকারকদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের কারণে মন্ত্রণালয়ের জটিল সিদ্ধান্ত বেশির ভাগ জনশক্তি রফতানিকারকদের ক্ষতি ডেকে এনেছে। অবশ্য কিছু দিন দিন ধরে মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত সিথিল করা হয়েছে। এর আগে মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্তের কারণে বহু কর্মীর ভিসার মেয়াদ বাতিল হয়ে গেছে। এতে অনেক এজেন্সি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
×