ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গত ২৬ দিনে ১৭৩ রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭০ হাজার নারী সন্তানসম্ভবা, দিনে জন্মাচ্ছে ৮ শিশু

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭০ হাজার নারী সন্তানসম্ভবা, দিনে জন্মাচ্ছে ৮ শিশু

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি॥ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা নারী খাদিজার (২০) কোল আলো করে সম্প্রতি জন্ম নিয়েছে এক কন্যাসন্তান। তিনি সদ্যপ্রসূত এই শিশুটির নাম রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে। ইন্ডিয়া টুডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যা করছে তা অবিস্মরণীয়। তাদের আগলে রাখায় প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্ব গণমাধ্যম অ্যাখ্যায়িত করেছে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ বলে, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতেই রোহিঙ্গা শিশুর এই নাম রেখেছেন খাদিজা। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে খাদিজার স্বামীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে দেশটির সেনারা। এরপর নিজ ভিটা-মাটি ছেড়ে মা ও বোনকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন এই নারী। ছয় জনের পরিবারের মধ্যে বাকিরা হত্যার শিকার হয়। তিনি বলেন, গোটা রাখাইন রাজ্য আগুনে পুড়ছে। আমার ঘরও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার থেকে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে এসেছি। গর্ভে আট মাসের সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার সংগ্রাম করেছি। এখানে এসে এক মেয়ে সন্তানের জন্ম দিই। মিয়ানমারে আমার স্বামীকে হারিয়েছি। এখানে এসে একটা কন্যাসন্তানের জন্ম দিই। সন্তানের নাম রেখেছি শেখ হাসিনা। শুধু খাদিজা নন নির্যাতনে পিষ্ট হয়ে নিজ দেশ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া অনেক গর্ভবতী নারী এদেশের মাটিতে সন্তান প্রসব করছেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে রোহিঙ্গা নারীকে প্রসবকালীন সহায়তা ও চিকিৎসায় এগিয়ে আসছে সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা। দেশের অন্যতম মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও বিভিন্ন পত্রিকার তথ্যের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের এক ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। জানা যায়, গত ২৫ আগস্ট নতুন করে নিধনযজ্ঞ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সরকারী হিসাবে ৪ লাখ ৭৪ হাজার। বেসরকারী মতে ৭ লাখের ওপরে। এদের মধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে মাত্র ৯ হাজার। বেশিরভাগই শিশু। এর মধ্যে ১৪শ’ শিশু রয়েছে যাদের মা-বাবা নেই। কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে গত ২৬ দিনে জন্ম হয়েছে ১৭৩ রোহিঙ্গা শিশুর। আশ্রয় নিতে এসেছেন সন্তানসম্ভবা আরও ৭০ হাজার নারী। প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত থেকে আটটি করে শিশুর জন্ম হচ্ছে, বর্তমানে ১৪ ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা অবস্থান করছে। রোগে-শোকে ভুগে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ শিশু মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সিগমা হুদা জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক মহলকে অতিসত্বর মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। বাংলাদেশে শরণার্থী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। এসব মানুষ অমানবিক পরিস্থিতিতে চরম খাদ্যাভাবে দিন কাটাচ্ছে । দেশের সকলকে এ পরিস্থিতিতে সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত সর্বত্র রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে পড়েছে। উখিয়ার বালুখালীতে ২ হাজার একর সরকারী জমির ওপর রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় ক্যাম্প গড়ে তোলার কার্যক্রম চলছে। অনেক সচ্ছল রোহিঙ্গা পরিবার শহরে বাসাভাড়া নিয়েও থাকছে। শফিউল্লা কাটা, থ্যাংখারী, বালুখালী, ঘুমঘুম, কুতুপালংয়ে রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা সোহেল জনকণ্ঠকে বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যু সত্যিই অমানবিক। জাতিসংঘ ও অন্যান্য বড় দেশের কাছ থেকে আরও জোরালো পদক্ষেপ আশা করছি। জনবহুল বাংলাদেশে বাড়তি জনসংখ্যার চাপ দেশের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয়। ইতোমধ্যে রোহিঙ্গারা কক্সবাজার, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। শরণার্থী রোহিঙ্গাদের সঠিক তালিকা করা আবশ্যক যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়। শরণার্থীদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসাসহ সকল প্রকার মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য দেশের সরকার ও জনগণের প্রতি সদয় আহ্বান জানান তিনি।
×