ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এখনও জ্বলছে রাখাইন

সেনা মোতায়েনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সেনা মোতায়েনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণে শৃঙ্খলা ফিরে আসছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাবিরোধী সামরিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাতে এবং রবিবার সকালেও সে দেশের রাচিদং এলাকায় নতুন করে হত্যাযজ্ঞ ও বাড়িঘর জ্বালাও পোড়াওয়ের ঘটনা ঘটেছে। অপরদিকে, সীমান্ত এলাকার জিরো পয়েন্টে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষে স্থলমাইন পোঁতা অব্যাহত রয়েছে। এর পাশাপাশি চলছে কাঁটাতারের বেড়া পুনর্নির্মাণ। যেসব পয়েন্টে রোহিঙ্গারা কাঁটাতার ভেঙ্গে বাংলাদেশে চলে এসেছে সে সব পয়েন্টে তা সংস্কার করা হচ্ছে যাতে রোহিঙ্গারা সেসব পয়েন্ট দিয়ে ফিরে যেতে না পারে। এর পাশাপাশি সে দেশের সীমান্ত এলাকায় বিজিপি ও সেনা টহল আরও বৃদ্ধি করা হয়েছে। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো বলেছে, মিয়ানমার সরকার মুখে বলছে এককথা, কিন্তু বাস্তবিক অর্থে রোহিঙ্গা নিধন চালিয়েই যাচ্ছে। ফলে এখনও অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। তবে ইতোপূর্বেকার তুলনায় তা হ্রাস পেয়েছে। রাচিদং শহরের যে সমস্ত রোহিঙ্গা বসতি বাদ ছিল এখন সে সব বসতিও জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে নিধনযজ্ঞ। রবিবারও নতুন করে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে। এ আগমন চলছে প্রধানত সাগর পথে টেকনাফ সীমান্ত উপকূল দিয়ে। স্যাটেলাইট তথ্য প্রদর্শন করে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে রবিবারও দেখানো হয়েছে সামরিক অভিযানের চিত্র। এতে দেখা গেছে, জ্বলছে রোহিঙ্গা এলাকার বসতিগুলো। সে দেশের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আউং সান সুচির পক্ষে চীনের একদল গণমাধ্যম কর্মীর কাছে প্রদত্ত সাক্ষাতকারে আবারও দাবি করা হয়েছে, গত ৫ সেপ্টেম্বরের পর রাখাইনে কোন সেনা অভিযান চলেনি। অথচ, বাস্তব চিত্র পুরোপুরি উল্টো। শুধু তাই নয়, রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গারা কেন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তাও নাকি মিয়ানমার সরকারের জানা নেই। এসব নিয়ে তদন্ত করে দেখার কথা বলা হচ্ছে। সীমান্তে মাইন পোঁতা অব্যাহত ॥ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গারা যেন ফিরে যেতে না পারে সে জন্য সীমান্তে স্থলমাইন পোঁতা অব্যাহত রেখেছে দেশটির সেনাবাহিনী। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর পক্ষে রবিবার এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর দলে দলে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নেয়ার পর শুরু হয়েছে স্থল সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে পাইন পোঁতা। স্থলমাইন বিস্ফোরণে বহু রোহিঙ্গার প্রাণহানিও ঘটেছে। গত ২৫ আগস্ট মধ্যরাত থেকে ‘ক্লিনজিং অপারেশন’ এর নামে শুরু হয় সেনা অভিযান। অসহায় রোহিঙ্গাদের ওপর গণহারে বর্বর নির্যাতন, হত্যা, ধর্ষণ ও জ্বালাও পোড়াওয়ের সূত্রপাত ঘটে। এরপর সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকাকে সামরিক অপারেশন জোন ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক সকল নিয়মকানুন উপেক্ষা করে সে দেশের সেনাবাহিনী জিরো পয়েন্ট এলাকায় এসে তাদের টহল ও শক্তির মহড়া প্রদর্শন করে। শরণার্থীদের শৃঙ্খলা ফিরে আসছে ॥ শনিবার থেকে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মাঝে ত্রাণ ও পুনর্বাসন সহায়তার কাজে সেনা মোতায়েনের পর শৃঙ্খলা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যেই টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কের দুই পাশে যত্রতত্র থাকা রোহিঙ্গাদের শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সেনাবাহিনীর পক্ষে বিভিন্ন সংস্থা ও সরকারী ত্রাণ গ্রহণ করে তা বিতরণের তৎপরতাও শুরু হয়েছে। তবে বালুখালীতে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের জন্য যে ২ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাতে পরিপূর্ণভাবে আশ্রয় শিবির গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সময় নেবে। গত ২৫ আগস্ট মধ্যরাতের পর থেকে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে দলে দলে রোহিঙ্গা আগমন শুরু হয়। টেকনাফ থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নামে। সীমান্ত এলাকার ২৫টিরও বেশি পাহাড় জুড়ে যত্রতত্র রোহিঙ্গারা নিজ নিজ উদ্যোগে বসতি গড়ে তোলা হয়। সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর এখন তাদের শৃঙ্খলায় আনার কাজ পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে। নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকা থেকে হাজার হাজার রোহিঙ্গাকে ইতোমধ্যে বালুখালীতে নিয়ে আসা হয়েছে। শনিবার থেকে সেনা তৎপরতা শুরু হওয়ার পর সকল ত্রাণসামগ্রী গ্রহণ করছে সেনা সদস্যরা। এসব ত্রাণ সামগ্রী সেনা ক্যাম্পে সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ত্রাণের মধ্যে রয়েছে, চাল, চিড়া, গুড়, মশুর ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, মসলা, বিরিয়ানির প্যাকেট, আপেল, গুঁড়ো দুধ, ওষুধ, বিস্কুট ও বিভিন্ন ধরনের তৈজসপত্র এমনকি নগদ অর্থ। এসব ত্রাণ গ্রহণের জন্য সেনাবাহিনীর পক্ষে উখিয়া-টেকনাফে কয়েকটি ক্যাম্প খোলা হয়েছে। সেনা সদস্যরা অস্থায়ী তাঁবুও তৈরি করে দিচ্ছে। ৭৯ রোহিঙ্গা উদ্ধার ॥ রোহিঙ্গাদের যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ার তৎপরতা রোধে টেকনাফ-কক্সবাজার সড়কে পুলিশ ও বিজিবির চেকপোস্ট স্থাপিত হওয়ার পর প্রতিদিন রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হচ্ছে। শনিবার রাতে বিভিন্ন যানবাহন থেকে ৭৯ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে কুতুপালং ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়েছে। ১ লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে দেবে তুরস্ক ॥ মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ১ লাখের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে দেবে তুরস্ক সরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার সঙ্গে রবিবার সচিবালয়ে সাক্ষাত করতে গিয়ে তুরস্কের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বিষয়ক সংস্থার সমন্বয়ক আহমেদ রফিক একথা জানিয়েছেন। তুরস্ক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানে তার সরকার বাংলাদেশের পাশে থাকবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, তুরস্কের পক্ষ থেকে ১০ হাজার প্যাকেট ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ করা হচ্ছে। এছাড়া তুরস্কের উপ-প্রধানমন্ত্রী রিসেপ আব্বাস শীঘ্রই বাংলাদেশ সফর করবেন বলেও জানিয়েছেন।
×