ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক সাত বছরে ছাড় করেছে ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার

লাইন অব ক্রেডিটের শেষ প্রকল্প চূড়ান্তে আজ নেগোসিয়েশন মিটিং

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭

লাইন অব ক্রেডিটের শেষ প্রকল্প চূড়ান্তে আজ নেগোসিয়েশন মিটিং

আনোয়ার রোজেন ॥ ভারতের প্রথম লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) ১৫ প্রকল্পের মধ্যে বারোটির কাজ শেষ হয়েছে। গত সাত বছরে এসব প্রকল্পের বিপরীতে ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করেছে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক। প্রথম এলওসির আওতায় ৮৬ কোটি ২০ লাখ ডলার ঋণ দেয়ার কথা। ওই এলওসির তিনটি প্রকল্পের কাজ এখনও চলমান। প্রথম এলওসির পর এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে আরও দুটি এলওসি চুক্তি করেছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় এলওসির ১৪ প্রকল্পের বারোটিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ভারত। তবে প্রকল্পগুলোর মাঠপর্যায়ের কাজ এখনও শুরু হয়নি। অন্যদিকে শেষ এলওসির জন্য বাংলাদেশের তরফে ১৭ প্রকল্প বাছাই করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের ভাগ্য চূড়ান্ত করতে আজ সোমবার ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘নেগোসিয়েশন মিটিংয়ে’ বসছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। ইআরডি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আমন্ত্রণে ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তিন দিনের সফরে আগামী ৩ অক্টোবর ঢাকায় আসছেন। ভারতের অর্থমন্ত্রীর সফর সামনে রেখে তৃতীয় এলওসির প্রকল্প চূড়ান্ত করতেই এ মিটিং। অরুণ জেটলির সফরের সময় সর্বশেষ এলওসির প্রকল্পের ঋণচুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। নেগোসিয়েশন মিটিং সফল করতে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ইআরডি কর্মকর্তারা। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন মন্তব্য করতে তারা রাজি হননি। সূত্র জানায়, ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশকে এলওসির মাধ্যমে ঋণ দিতে শুরু করে ভারত। প্রথমে ১০০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি হয়। পরে ওই ঋণের ১৪ কোটি ডলার অনুদান হিসেবে দেয় ভারত। ২০১৫ সালের দ্বিতীয় এলওসিতে ঋণচুক্তি হয় ২০০ কোটি ডলারের। চলতি বছরের এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের সময় ৫০০ কোটি ডলারের তৃতীয় এলওসির ঘোষণা দেয় ভারত। প্রথম দুটি এলওসির ২৯ প্রকল্পের মধ্যে বাস, ট্রাক, ট্রেনের ইঞ্জিন, বগি, ড্রেজারসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি কেনার প্রকল্পই বেশি। এছাড়া রেলসেতু ও রেললাইন নির্মাণসংক্রান্ত কয়েকটি প্রকল্প রয়েছে। তৃতীয় এলওসিতে বড় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প বেশি। তৃতীয় এলওসির আওতায় বাস্তবায়নের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৭ প্রকল্প বাছাই করেছে বাংলাদেশ। তৃতীয় এলওসির উল্লেখযোগ্য প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে বিদ্যুত অন্য স্থানে নেয়ার অবকাঠামো উন্নয়ন, পায়রা বন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ, বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নত করা, ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা, চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে খাগড়াছড়ির রামগড় পর্যন্ত সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, মীরসরাই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে এক লাখ এলইডি বাল্ব সরবরাহ প্রকল্প এবং কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর হয়ে সরাইল পর্যন্ত চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্প। প্রথম এলওসির ১৫ প্রকল্পের বারোটির কাজ শেষ ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়েছে। গত সাত বছরে আটটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। চারটি প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকল্প সমাপ্তির ঘোষণা দেয়া হয়নি। এ হিসাবে কাজ শেষ হয়েছে ১২ প্রকল্পের। রেলওয়ের কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প, খুলনা থেকে মংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ (৩০ কোটি ৮১ লাখ ডলার) এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) আধুনিকীকরণ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। দ্বিতীয় এলওসির ১৪ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে দ্বিতীয় এলওসির ২০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। এ ঋণের আওতায় ১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ। ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, ঋণচুক্তি হওয়ার পর গত দেড় বছরে ১২টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে এক্সিম ব্যাংক। তবে দ্বিতীয় এলওসির অর্থছাড় এখনও শুরু হয়নি। বাস্তবায়ন পর্যায়ে যেতে কমপক্ষে আরও এক বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চূড়ান্ত হওয়া প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হলো বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশনের (বিআরটিসি) জন্য বাস-ট্রাক কেনা, আশুগঞ্জ-আখাউড়া সড়ক চার লেনে উন্নীত করা, সৈয়দপুরে রেলওয়ের ওয়ার্কশপ নির্মাণ, খুলনা-দর্শনা ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ, পার্বতীপুর-কাউনিয়া রেলপথকে ডুয়েলগেজ নির্মাণ, খুলনার মংলা ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ভারতীয় অর্থনৈতিক জোন স্থাপন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা, ১২টি জেলায় হাইটেক পার্ক নির্মাণ এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে আইসিটি বিষয়ক অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন।
×