ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে

প্রকাশিত: ০৩:০৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যে বিশ্বজুড়ে রোহিঙ্গাদের রক্ষা ও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে ঐক্যমত সৃষ্টি হয়েছে। সবাই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে। গণহত্যা চালাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। আর মানবতা ও জীবনরক্ষাকারীর দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতন ও হত্যাকা-ের শিকার অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করেছেন তিনি। রোহিঙ্গাদের করুণ অবস্থা তুলে ধরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণকারী আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে বিশ্ব জনমত। রবিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের দৈনিক সমকাল কার্যালয়ে ‘ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ নীতি ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি চূড়ান্তকরণ : অগ্রগতি ও করণীয় ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সমকাল ও তামাক বিরোধী সংস্থা প্রজ্ঞা এ গোলটেবিলের আয়োজন করে। সমকাল নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য করেন বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি এমপি, সমকালের উপ-সম্পাদক আবু সাঈদ খান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব সাইফুল হাসান বাদল, ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলম, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস এর কান্ট্রি এডভাইজার শফিকুল ইসলাম, দ্য ইউনিয়নের টেকনিক্যাল এডভাইজার সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, দেশ টিভি সম্পাদক সুকান্ত গুপ্ত অলক, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স’র আহ্বায়ক লিটন হায়দার এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ। রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার সরকারের হত্যাকা- থেকে রক্ষা পেয়ে ছুটে আসা হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিগতভাবে অনেকে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে, যা তৈরি করেছে জাতীয় ঐক্য। এই সম্মলিত সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবার চিত্র তুলে ধরে মোহাম্মদ নাসিম বলেন , স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসাসেবা প্রদান অব্যাহত রেখেছে । গুরুতর আঘাত পাওয়া প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এসব রোগীর প্রায় সবাই গুলি বা ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫২ হাজার রোহিঙ্গা শিশুকে বিভিন্ন রোগের টিকা দেয়া হয়েছে। টেকনাফ ও বান্দরবানের যেসব এলাকায় শরণার্থীরা আশ্রয় নিয়েছে, সেসব এলাকায় বাড়তি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। অনেকগুলো নতুন স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। গর্ভবতী নারী ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫২ হাজার শিশুকে হাম, রুবেলাসহ নানা রোগের টিকা দেয়া হয়েছে। ৪০টির বেশি বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে স্বাস্থ্য কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরগুলোয় রোগ প্রতিরোধ, পুষ্টি ও সেবার পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনাসেবা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা চিরকালই স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনাসেবা থেকে বঞ্চিত। রোহিঙ্গা নারীদের পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা নারীদের গর্ভ-পূর্ববর্তী, গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সব ধরনের সেবার ব্যবস্থা করেছে। আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়া অঙ্গীকার ব্যক্ত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ক্যান্সার, ফুসফুস, হাটসহ বিভিন্ন জটিল রোগের উৎস হলো তামাক। দেশকে তামাকমুক্ত করা আজ প্রত্যেকের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। দেশের রেকর্ড সংখ্যক যুবক যুবতী বিভিন্ন প্রকারের তামাক ও তামাকজাত পণ্য সেবন করে থাকে। সমন্বিত উদ্যোগে এর বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক আন্দোলন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আর তামাকের ক্ষতিকর দিকসমূহ মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তুলে ধরার ব্যবস্থা থাকতে হবে। পরবর্তী কেবিনেট মিটিংয়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা আলোচনার জন্য উঠানো হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
×