নিজস্ব সংবাদদাতা, আমতলী (বরগুনা) ॥ যৌতুকের জন্য পুত্রবধু মনিরা আক্তারকে বেধরক মারধর শেষে মাথা ফাটালেন শ্বশুর মালেক আকন ও শ্বাশুড়ী মাহিনুর বেগম। ঘটনা ঘটেছে কুয়াকাটা পৌর শহরের খাজুরা গ্রামে। আহত পুত্রবধু মনিরাকে উদ্ধার করে শনিবার রাতে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
পারিবারিক সূত্রে জানাগেছে, আমতলী উপজেলার উত্তর টিয়াখালী গ্রামের সানু মৃধার মেয়ে মনিরা আক্তারকে ২০১২ সালে কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের খাজুরা গ্রামের মালেক আকনের ছেলে আল আমিন আকনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় গলার হার, কানের দুল, চেইন ও স্বর্নের আংটিসহ প্রয়োজনীয় আসবাব পত্র দিয়ে দেয়। ২০১৪ সালে বিদেশে যাওয়ার কথা বলে স্ত্রী মনিরার বাবার কাছে দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে নির্যাতন শুরু করে। মেয়ে জামাইয়ের সুখের জন্য শ্বশুর শানু মৃধা দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দেয়। ওই টাকা নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যায়। এক বছর পরে সিঙ্গাপুর থেকে চলে আসে। এ বছর আগষ্ট মাসের শুরুতে পুনরায় দের লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। এ টাকা দিতে স্ত্রী মনিরা বেগম অস্বীকার করে। এ নিয়ে প্রায়ই মনিরাকে মারধর করতো। গত ১৫ সেপ্টেম্বর স্বামী আল আমিন কাউকে না জানিয়ে বাড়ী থেকে চলে যায়। বৃহস্পতিবার সকালে পুত্রবধুর মনিরার শ্বাশুড়ী মাহিনুর বেগম তাকে (মনিরা) ডেকে বলে দেয় আমার ছেলে তোকে তালাক দিয়েছে তুই বাড়ী থেকে চলে যা। এ কথা শুকে মনিরা বলে আমার স্বামী এসে আমাকে বললে আমি চলে যাব, আপনাদের কথায় যাব না। এ কথা বলে বউকে গালাগাল করে। এ ভাবে দুদিন চলছে থাকে। শনিবার সন্ধ্যায় পরিকল্পিতভাবে শ্বশুর ও শাশুড়ী পুত্রবধুকে গলায় গামছা দিয়ে বেঁধে ফাঁস দিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় এবং বেধরক মারধর করে। এক পর্যায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এতে মাথা কেটে যায় এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এক পর্যায় মৃত্যু ভেবে ঘরের মধ্যে রেখে দেয়। প্রতিবেশী লোকজন টের পেয়ে ছুটে আসে। পরে স্থানীয় কাউন্সিলর হাবিব শরীফ ও তৈয়ব খান ঘটনাস্থলে এসে বউয়ের এ পরিস্থিতি দেখে বউয়ের আত্মীয় স্বজনকে খবর দেয়। পরে বউয়ের স্বজন জালাল খান, সফেজ আকন ও সোহরাফ মৃধা তাকে উদ্ধার করে কুয়াকাটার তুলাতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওইখানে চিকিৎসার পরে জ্ঞান ফিরে আসে। পরে রাত সারে ১০টার দিকে আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
রবিবার আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখাগেছে, আহত গৃহবধু মনিরা আকতারের মাথা ব্যান্ডেজ দিয়ে মোড়ানো। বিষম বেথায় কাতরাচ্ছেন। সারা শরীরে ব্যাথায় বিছানা থেকে উঠতে পারছে না। মা জাহানারা বেগম মেয়ের সহযোগীতা করছেন।
আমতলী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন মাথায় ১২ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১.৫ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ১.৫ সেন্টিমিটার গভীর কাটার চিহৃ রয়েছে।
আহত গৃহবধু মনিরা আক্তার বলেন বিদেশ যাওয়ার কথা বলে দের লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে আমার স্বামী আল আমিন আমাকে নির্যাতন শুরু করে। আমার শ্বশুর- শাশুড়ীর কুপরামর্শে দিয়ে আমার স্বামীকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বাড়ী থেকে সরিয়ে দেয়। তারপর আমাকে যৌতুক না দিলে তালাক দেয়ার কথা বলেন তারা আমাকে নির্যাতন করে। গত শনিবার সন্ধ্যায় পরিকল্পিতভাবে আমাকে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে গলায় গামছা বেঁধে ফাঁস দেয় এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ দেয়। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
কুয়াকাটা কাউন্সিলর মোঃ তৈয়বুর রহমান বলেন খবর পেয়ে হাবিব কাউন্সিলরকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পত্রবধুকে উদ্ধার করে পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন পুত্রবধুর শ্বশুর ও শাশুড়ী তাকে বেধরক মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।
আহত মনিরার মা জাহানার বেগম এ ঘটনার বিচার দাবী করে বলেন গত দু’বছর পূর্বে যৌতুকের দাবীতে আমার মেয়েকে মারধর করেছে। তখন মেয়ের সুখের দিকে তাকিয়ে দুই লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়েছি। এখন আবার বিদেশ যাবে বলেন দের লক্ষ টাকা যৌতুক দাবী করে। এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় আমার মেয়েকে শ্বশুর ও শাশুড়ী মিলে পরিকল্পিতভাবে মেরে ফেলার জন্য গামছা দিয়ে ফাঁস দেয় পরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় কোপ দিয়ে কেটে দিয়েছে।
শাশুড়ী মাহিনুর বেগম মারধরের কথা অস্বীকার করে মুঠোফোনে বলেন আমার ছেলে বউকে তালাক দিয়ে তিনদিন আগে মালায়েশিয়া চলে গেছে।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ নুরুল ইসলাম বাদল বলেন খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: