ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অজ্ঞ ও বিজ্ঞান বিরোধীরাই ট্রাম্পের সরকার চালাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অজ্ঞ ও বিজ্ঞান বিরোধীরাই ট্রাম্পের সরকার চালাচ্ছে

হিউস্টনে হারিকেন হার্ভের সৃষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা যেভাবে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন সেভাবেই হয়েছিল। সেই ধ্বংসযজ্ঞের পর আশা করা গিয়েছিল যে একই বিশেষজ্ঞরা হারিকেন ইরমার সৃষ্ট বিপদ সম্পর্কে যখন হুঁশিয়ারি দিলেন প্রত্যেকেই তাতে কর্ণপাত করবে। কিন্তু সেটা ছিল ভুল। ক’দিন আগে রাশ লিমবাগ আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যে তারা রাজনৈতিক ও আর্থিক কারণে ইরমার হুমকি আবিষ্কার করেছেন। তিনি ঘোষণা করেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের এজেন্ডকে এগিয়ে আসার একটা আকাক্সক্ষা কাজ করেছে এবং হারিকেনগুলো হচ্ছে সেই কাজটা করার দ্রুততম ও উত্তম উপায়গুলোর অন্যতম। তিনি আরও বলেন, ভীতি ও আতঙ্ক ব্যাটারি, বোতলজাত পানি ও টিভির বিজ্ঞাপন বিক্রিতে সাহায্য করে। এর অল্প কিছুক্ষণ পরই তিনি তার পাম বিচের ম্যানসন ছেড়ে চলে যান। এক অর্থে লিমবাগের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত অন্তত এই কারণে যে, তিনি জলবায়ু পরিবর্তন ও হারিকেনের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয়টি তুলেছেন। এটা এমন এক বিষয় যা ট্রাম্প প্রশাসন মরিয়া হয়ে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে। যেমন ধরুন দূষণ এবং দূষণকারীদের বান্ধব এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশন এজেন্সির প্রধান স্কট প্রুইট বলেছেন যে প্রসঙ্গটি তোলার সময় এখন নয়। কারণ তা করা হলে ফ্লোরিডার জনগণের প্রতি তা অসংবেদনশীলতার পরিচয় হবে। বলাবাহুল্য, জলবায়ু নিয়ে কথা বলার জন্য ভাল সময় প্রুইটের মতো ব্যক্তিদের এখনই জুটবে না। সুতরাং লিমবাগের এই তারস্বরে চিৎকার থেকে আমাদের কি শেখার আছে? বলার অপেক্ষা রাখে না তিনি একজন ভয়ঙ্কর লোক- তবে সেটা আমরা আগে থেকেই জেনেছি। বড় কথা হচ্ছে তিনি মূল ধারার বাইরের কেউ নন। সত্য বটে যে ইরমা সম্পর্কে হুঁশিয়ারি সুনির্দিষ্টভাবে প্রত্যাখ্যানকারী প্রভাবশালী অন্যান্য ব্যক্তির সংখ্যা বেশি ছিল না। তবে বিজ্ঞানীদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও কদর্য বলে সমালোচনা করতে গিয়ে বিজ্ঞানকে অস্বীকার করা আমেরিকার দক্ষিণপন্থীদের কাজের একটা আদর্শ পদ্ধতি। ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন জলবায়ু পরিবর্তনকে একটা ‘ভাঁওতা’ বলে ঘোষণা করেছিলেন তখন তিনি ছিলেন একজন সাধারণ রিপাবলিকান মাত্র। আর ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজয়ের বদৌলতে কিছুই না জানা বিজ্ঞানবিরোধী রক্ষণশীলরা এখন আমেরিকার সরকার চালাচ্ছে। কয়েক মাসের জন্য সরকার চালাতে ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে ট্রাম্পের সমঝোতা হয়েছে এমন দাবি করে পরিবেশিত সংবাদ বিশ্লেষণ থেকে কোনভাবে মনে রাখতে হবে যে তিনি একজন মধ্যপন্থী স্বাধীন ব্যক্তিত্ব। তবে স্মরণ রাখতে হবে, প্রুইট শুধু একা নন। পরিবেশ বা জ্বালানি নিয়ে যাদের কারবার ট্রাম্প প্রশাসনের এমন প্রায় প্রত্যেক সিনিয়র কর্মকর্তা একই সঙ্গে একজন এসটাবলিশমেন্ট রিপাবলিকান এবং জলবায়ু পরিবর্তন সাধারণভাবে বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণ অস্বীকারকারী ব্যক্তি। এবং জলবায়ু পরিবর্তনকে অস্বীকার করা প্রায় সমস্ত বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে লিমবাগ ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব। বিজ্ঞান মহলের বিপুলসংখ্যক মানুষের এ ব্যাপারে ঐকমত্য আছে যে, মানুষের ক্রিয়াকলাপের কারণে পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়ছে। রক্ষণশীল রাজনীতিক ও বিজ্ঞজনেরা যখন সেই ঐকমত্যকে চ্যালেঞ্জ করেন তারা তথ্য প্রমাণকে সযতœ বিবেচনার ভিত্তিতে তা করেন না বরং সারা বিশ্বের হাজার হাজার বিজ্ঞানীর উদ্দেশ্যকে কালিমালিপ্ত করেন। তারা জোর দিয়ে বলেন যে, এসব বিজ্ঞানীর সবাই সহকর্মীদের চাপে পড়ে এবং আর্থিক পুরস্কারের লোভে চালিত হয়ে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করছে এবং ভিন্ন মত ধামাচাপা দিচ্ছে। এ হলো পাগলের প্রলাপ। তবে এটা হলো এমনকি ট্রাম্পবিরোধী প-িত ও রাজনীতিক নির্বিশেষে আধুনিক দক্ষিণপন্থী ও বিদগ্ধজনদের চিন্তার মূল ধারা। মার্কিন রক্ষণশীলরা বিজ্ঞানকে অস্বীকার করতে এবং বিজ্ঞানীদের নিয়ে উদ্ভট সব ষড়যন্ত্র তত্ত্ব গিলতে কেন এত আগ্রহী? এ প্রশ্নের আংশিক জবাব হলো তারা অভিক্ষেপের কাজে নিয়োজিত! তাদের জগতে এভাবেই সবকিছু কাজ করে। মোহমুক্ত কিছু কিছু রিপাবলিকান অতীতের কোন এক জায়গার রক্ষণশীল চিন্তার সোনালি যুগ নিয়ে কথা বলতে চান। সেই সোনালি যুগের অস্তিত্ব কখনই ছিল না। তারপরও একটা সময় ছিল যখন কিছু কিছু রক্ষণশীল বুদ্ধিজীবী কৌতূহলোদ্দীপক, স্বাধীন ধ্যান-ধারণা পোষণ করত। কিন্তু সেই দিনগুলো অনেক আগেই গত হয়েছে। আজকের দক্ষিণপন্থী বুদ্ধিজীবীদের জগত যেমনটি এখন দেখা যাচ্ছে সেখানে ভাড়াটে গু-াদের প্রাধান্য যারা গবেষক নয় বরং প্রজ্ঞাপক। আর দক্ষিণপন্থী রাজনীতিকরা সত্যিকারের গবেষকদের যাদের বক্তব্য তাদের পছন্দ নয়, তাদের হয়রানি ও নির্যাতন করে। ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বসায় এ কাজে তাদের এখন দারুণ ক্ষমতায়ন ঘটেছে। ট্রাম্প প্রশাসন নানা ফ্রন্টেই বিশৃঙ্খল অবস্থায় তথাপি তারা যেখানে পারছে সেখানেই জলবায়ু বিজ্ঞান ও জলবায়ু বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছে। কাজেই আমি যা বলেছি, লিমবাগের মতো লোকেরা যখন কল্পনা করে যে উদারপন্থীরা জলবায়ু সম্পর্কে মিথ্যা ধারণা প্রচার করা ও সত্যকে ধামাচাপা দিয়ে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত সেটা তাদের কাছে অর্থবহ হয় অংশত এ কারণে যে তাদের বন্ধুরাও এই একই কাজ করছে। তবে ব্যাপারটা তাদের কাছে এই কারণেও অর্থবহ হয় যে রক্ষণশীলরা সাধারণভাবে বিজ্ঞানের প্রতি উত্তরোত্তর বৈরী হয়ে উঠেছে। জরিপে দেখা যায়, যে বিজ্ঞানের ওপর রক্ষণশীলদের আস্থা ১৯৭০-এর দশক থেকে ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে। ব্যাপারটা স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনটা নিশ্চয়ই নয় যে, বিজ্ঞান কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। এটা সত্য যে, বিজ্ঞানীরা এই অনুগ্রহের প্রতিদান দিয়েছেন। তারা রক্ষণশীলের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। তাদের ৮০ শতাংশেরও বেশি এখন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দিকে ঝুঁকে পড়েছে। কিন্তু যে দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা বিবর্তনের তত্ত্ব¡ সঠিক এটা স্বীকার পর্যন্ত করতে চান না বিজ্ঞানীরা সেই দলকে সমর্থন করবেনÑ এটাই বা কিভাবে আশা করা যায়? মোদ্দাকথা হলো এই যে, আমরা এখন এমন কিছু লোকের দ্বারা শাসিত যারা বৈজ্ঞানিক সমাজ থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন যে শুধু তাই নয় উপরন্তু তথ্য প্রমাণের বস্তুনিষ্ঠ মূল্যায়নই হলো বিশ্ব জগতকে জানার ও বোঝার উপায় এই বৈজ্ঞানিক ধারণাটি থেকেও বিচ্ছিন্ন। আর এই ইচ্ছাকৃত অজ্ঞতাই হলো নিদারুণ রকম ভীতিকর। বস্তুতপক্ষে এর পরিণতিতে সভ্যতা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস
×