ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসার আড়ালে চলতো জঙ্গি অর্থায়ন

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ব্যবসার আড়ালে চলতো জঙ্গি অর্থায়ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৯টি দেশে সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠান আইব্যাকস লিমিটেড ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু করে। এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন সাইফুল হক সুজন নামে এক ব্যক্তি। যিনি ২০১৫ সালে সিরিয়ায় বিমান হামলায় নিহত হয় বলে জানা যায়। এর পর ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে এই প্রতিষ্ঠানটির সকল কার্যক্রম বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়। কোম্পানীটি বন্ধ হলেও নিহত সুজনের ভাই আতাউল হক সবুজ বাংলাদেশে ওয়ামি ও স্পেনে সিংকটেল নামে একই আদলে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে জঙ্গি অর্থায়ন কার্যক্রম চালু রাখে। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত গোয়েন্দা নজদারীরর ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে ১১ জনকে আটক করে র‌্যাব। একই সময় শুধু দেশেই নয় র‌্যাবের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্পেনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেখানকার এপিমাডুরা প্রভিন্সের মাদিরা শহড়ে অভিযান চালিয়ে আতাউল হক সবুজকে আটক করে। আজ শনিবার দুপুরে ১১ জনকে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে আটকের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়ে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) শুরু থেকেই গোয়েন্দা নজরদারী চালিয়ে আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহী এলাকায় অভিযান চালিয়ে আল মামুন (২০), আল আমিন (২৩), ফয়সাল ওরফে তুহিন (৩৭), মঈন খান (৩৩), আমজাদ হোসেন (৩৪), মো. নাহিদ (৩০), মো. তাজুল ইসলাম ওরফে শাকিল (২৭), মো. জাহেদুল্লাহ (২৯), আল আমিন (২৩), টনি নাথ (৪০) এবং মো. হেলাল উদ্দিন (২৭) নামের ১১ জনকে আটক করা হয়। সে সময়ে তাদের কাছ থেকে ১১টি ল্যাপটপ, ১২টি মোবাইল ফোন, ৭টি কার্ড পাঞ্চিং মেশিন, পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথিপত্র উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে তাজুল ইসলাম ও ফ্রান্সের নাগরিক টলি নাথকে খুলনা এবং নাহিদকে রাজশাহী এবং বাকি ৮ জনকে রাজধানী মিরপুরের পল্লবী ওয়ামি টেকনোলজির কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গুলশান হামলার পর এখন পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জঙ্গি অর্থায়নের জন্য সংগ্রহ করা ৬৮ লাখ টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আইব্যাকস নামের সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে জেএমবির সারোয়ার তামীম গ্রুপের বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেটের মাধ্যমে তামীম চৌধুরীকে ৫০ হাজার ইউএস ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশী টাকা দিতে চেয়েছিল। তখন বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নজরে আসায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। এ ঘটনায় ওই বছরই দায়ের করা মামলায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন এই মামলার আসামী সুজন ও সবুজের বাবা হাসনাত কারাগারে মারা যান এবং গত শুক্রবার গ্রেপ্তারকৃত নাহিদ ও তাজুলসহ ৪ জন জামিন পান। মুফতি মাহমুদ খান এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ, গোয়েন্দা তথ্য ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সিংকটেল থেকে ওয়ামিতে পাঠানো টাকার মধ্যে ৪৭ শতাংশ মাত্র তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য খরচ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি ৫৩ শতাংশ অর্থই জঙ্গি কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত অনেকেই আইব্যাকস প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ছিল। সেটি বন্ধ হওয়ার পরেও তারা অন্য কোথাও কাজের চেষ্টা করেনি। এতেই প্রতিয়মান হয় জঙ্গি অর্থায়নের বিষয়টি আটককৃতরা জানতো। তাদের রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তখন কাদের ও প্রকৃত কত টাকা জঙ্গি অর্থায়ন করেছে তা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
×