ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ছয় বছরে দুই সিটি এলাকায় বিচ্ছেদের নোটিস জমা পড়েছে ৩৬,৩৭১উচ্চ ও নিম্নবিত্ত পরিবারে বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে

রাজধানীতে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

 রাজধানীতে বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। তবে কোন্ ধরনের পরিবারে বেশি বিচ্ছেদ ঘটছে তা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে জমা পড়া তালাকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মূলত উচ্চ ও নিম্নবিত্ত পরিবারে বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় বছরে দুই সিটি এলাকায় বিচ্ছেদের নোটিস জমা পড়েছে ৩৬ হাজার ৩৭১টি। এর মধ্যে কার্যকর হয়েছে ৩০ হাজার ৮৫৫টি ও বিচ্ছেদের অপেক্ষায় আছে পাঁচ হাজার ৫১৬টি। আর স্বামীকে তালাকের নোটিস ২৪ হাজার ৮০৩টি বা ৬৮ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং স্ত্রীকে তালাকের নোটিস ১২ হাজার ১৮টি বা ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, যাদের অধিকাংশের বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে এবং তারা উচ্চ ও নিম্নবিত্ত পরিবারের সদস্য। আর বিয়ের এক বছর না যেতেই তারা বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, ‘সাধারণত উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মধ্যে বিচ্ছেদের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারে এমন প্রবণতা অনেকটাই কম।’ বিচ্ছেদের কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের কেউ কারও কথা শুনতে চান না। তারা যে যার কথামতো চলেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, নিজেদের অঢেল অর্থ-সম্পদ রয়েছে তাই বিচ্ছেদ হলে সমস্যা হবে না। আর নিম্নবিত্ত পরিবারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ফারাক থাকে বেশি। বেশিরভাগ পরিবারের নারীরা চাহিদা অনুযায়ী অনেককিছুই পান না, অভাব-অনটন লেগেই থাকে। ফলে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি হয়। আর মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা লোকলজ্জায় ঘর ভাঙতে রাজি হন না।’ বর্তমানে আমাদের দেশে বিচ্ছেদ বেশি হচ্ছে উল্লেখ করে ড. নেহাল করিম বলেন, ‘মূলত নারীর স্বাধীনতা, সচেতনতা এবং উপার্জন ক্ষমতা বাড়ায় তারা খুব সহজেই বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।’ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পারস্পরিক বোঝাপড়ার অভাব, ব্যক্তিত্বের সংঘাত, সামাজিক অস্থিরতা, যৌতুক দাবি, নির্যাতন, তথ্যপ্রযুক্তি ও আকাশ সংস্কৃতির প্রভাব, দৃষ্টিভঙ্গি, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, পারিবারিক কলহ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, মাদকাসক্তি, পরকীয়া, সন্দেহপ্রবণতা, ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলা, নারীর পুরুষ নির্ভরশীলতা কমা, নারীর আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে বিচ্ছেদ ঘটছে। এক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীরাই এগিয়ে। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোঃ বিলাল বলেন, ‘বিচ্ছেদ একটি সামাজিক বিষয়। সামাজিকভাবে নারীদের আত্মমর্যাদা ও কর্মপরিধি বেড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই স্বয়ংসম্পূর্ণ। স্বামীর ওপর ভরসা করতে চান না তারা। এজন্য পারিবারে সমস্যা সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা বিচ্ছেদের দিকে যাচ্ছেন। তবে নির্যাতন, আচরণগত সমস্যা এবং সামাজিক অস্থিরতাও বিচ্ছেদের একটি বড় কারণ।’ সম্প্রতি বিনোদন জগতে বেশ কয়েকটি জুটির তালাকের ঘটনা বেশ আলোচিত। এদের মধ্যে সঙ্গীত ও অভিনয়শিল্পী তাহসান-মিথিলা, কণ্ঠশিল্পী সালমা-শিবলী সাদিক (দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য), হাবিব ওয়াহিদ-রেহান, হৃদয় খান-সুজানা এবং মাহিয়া মাহি-শাহরিয়ার ইসলাম শাওনের ঘটনা খুবই আলোচিত। মূলত বিনোদন জগতের আলোচিত ও প্রভাবশালী হওয়ায় এ পরিবারগুলোর ঘর-সংসারের খবর সবাই জানতে পেরেছেন। তবে মিডিয়ার চোখে কখনও ধরা পড়ে না এমন পরিবারেও বিচ্ছেদের ঘটনা কম নয়।
×